কলকাতাঃ জনকেন্দ্রিক রাজনীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং উন্নয়ন ইস্যুকে সামনে রেখেই তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করল। যা ‘দিদি শপথ’ নামে সকলের জন্য সঙ্গবদ্ধ উন্নতির কথা বলেছে। বাংলার অধিকার সর্বতোভাবে সুরক্ষিত করে এবং জাতীয়স্তরে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করে ১০০ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে অর্থনীতি, শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিকাঠামো-সহ সমস্ত প্রধান ক্ষেত্রগুলি নিয়েই নতুন দিশা দেখানো হয়েছে।
LIVE | লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ প্রথম দফার ভোট
তৃণমূলের অভিযোগ, বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সায়ত্বশাসন কেড়ে নিচ্ছে এবং সেগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে ব্যবহার করছে, এমন একটা সময় তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহার ফের একবার ‘অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান’-এর মতো মূল ইস্যুগুলিকে প্রচারের মধ্যে ফিরিয়ে আনল। এই ইস্তেহার ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আমজনতার উদ্দেশে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলার মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করাই হল আমাদের লক্ষ্য। যা ক্রমে সারা দেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আমরা সারা দেশের মানুষের সঙ্গে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছি। আমাদের প্রস্তাবগুলি একেবারেই মানুষের চাহিদা অনুসারে পেশ করা হয়েছে। আমরা আবারও নিজেদের মা-মাটি-মানুষের কাজে উৎসর্গ করছি।’’ বাংলার ভাষা বৈচিত্রকে স্বীকৃতি দিয়ে মোট ছ’টি ভাষায় এই ইস্তাহার প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলি হল – বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, নেপালি এবং অলচিকি।
আরও পড়ুনঃ ৬মে নয়, আগামী সপ্তাহেই শুরু স্কুলের গরমের ছুটি! রাজ্যে কবে থেকে ছুটি? জানুন
এই ইস্তেহার গত ১০ বছরের মোদী জমানার প্রশাসনিক ত্রুটিগুলি যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই এর সমাধানের পথ খুঁজে বের করার উপরেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একেবারে আপতকালীন তৎপরতায় প্রয়োজনীয় প্রচুর কাজ করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার যেভাবে অর্থপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবর্তন এনে মানুষের জীবন সুন্দর করে তুলেছে, সেগুলি থেকে শিক্ষা নিয়েই জাতীয়স্তরে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা আরও উন্নত করতে তৃণমূল কংগ্রেস যে কাজগুলি করছে, ইস্তেহার তৈরির ক্ষেত্রে সেগুলির উপরেও নির্ভর করা হয়েছে।
অমিত মিত্র বলেন, ‘‘আইএলও-র তথ্য বলছে, ভারতে বেকার বা কর্মহীন মানুষের মধ্যে ৮৩ শতাংশই যুবক-যুবতী। সিএমআইই-র তথ্যভাণ্ডারেও একই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ, বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহার এই বিষয়ে কোনও কথা বলা হয়নি! কারণ, সেটা করলে ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ত। খাদ্যপণ্যে মুদ্রাস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে ৮০০ থেকে ১,০০০ রকমের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।’’
তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘INDIA জোটের শরিক হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেস যখন সরকার গঠন করবে, তখন আমরা কী কী কাজ করব, আজকের এই ইস্তেহার সেকথাই বলা হয়েছে।’’
মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং রান্নার গ্যাস ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য়ের দামবৃদ্ধি-সহ জাতীয়স্তরের সমস্যাগুলির মোকাবিলা করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কী কী ভাবনা ও পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলিকেই এখানে ‘দিদির শপথ’ বলে তুলে ধরা হয়েছে। ১৫টি অধ্যায়ের এই নির্বাচনী ইস্তেহার প্রত্যেকটি সম্প্রদায় ও উপগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট চাহিদার কথা মাথায় রাখা হয়েছে। কৃষক, যুব, প্রবীণ, মহিলা কিংবা প্রান্তিক গোষ্ঠীসমূহ – সারা দেশের সকলের চাহিদার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই ইস্তেহার।
LIVE : West Bengal Lok Sabha Election 2024 Phase one Voting in Cooch Behar, Alipurduar and Jalpaiguri
এই ইস্তেহার তৃণমূল কংগ্রেসের সফল বিভিন্ন প্রকল্প – যেমন – লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী এবং স্বাস্থ্য সাথী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কথা বলা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতায় এলে সারা দেশে এই প্রকল্পগুলির সুবিধা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। “বাংলার মহিলারা ইতিমধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা পাচ্ছেন। ইস্তেহার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, আমরা ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা দেশের সব নারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে, বাংলার মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের দ্বিগুণ সুবিধা পাবেন – একটি রাজ্য সরকারের থেকে এবং একটি কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে। এর মানে হল যে বাংলার প্রত্যেক মহিলা প্রতি মাসে ২,০০০ টাকা পাবেন। যেখানে বাংলার তপশিলি জাতি/উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলারা প্রতি মাসে প্রায় ২,৪০০ টাকা পাবেন,” চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য, ১১ লক্ষেরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী সফলভাবে ঋণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, ইতিমধ্যেই ৯০,০০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিদ্যমান স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কার্যপ্রণালীগুলিকে সাহায্য করতে এবং উন্নত করতে, সারা বাংলা জুড়ে জেলাস্তরের স্বনির্ভর গোষ্ঠী বাজার স্থাপন করা হবে। প্রতিটি জেলায় ডেডিকেটেড মার্কেটপ্লেস হবে, যেখানে মহিলারা তাদের পণ্য বিক্রির জন্য প্রদর্শন করতে পারবে। এতে আমাদের মহিলাদের ব্যবসায়িক উদ্যোগকে আরও উৎসাহ জোগাবে।দলও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসলে, সমস্ত বিপিএল পরিবারকে প্রতি বছর বিনামূল্যে ১০টি এলপিজি সিলিন্ডার দেওয়া হবে, যাতে তারা পরিশ্রুত রান্নার জ্বালানি পেতে পারে। এর মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব রন্ধন প্রক্রিয়া ব্যবহারের অভ্যাস বাড়ানো হবে। পশ্চিমবঙ্গে মা-মাটি-মানুষের সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত যুগান্তকারী দুয়ারে রেশন প্রকল্পের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, সারা ভারতে ঘরে ঘরে পরিষেবা সরবরাহ করা হবে।
ইস্তেহারের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে একটি আবেদন জারি করে, মমতা বন্দোপাধ্যায় শান্তি ও সম্প্রীতির বিনাশকারী, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন। “আমরা সমস্ত ধর্মীয় গোষ্ঠী (হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ, ইত্যাদি), তপশিলি জাতি (রাজবংশী, নমশূদ্র, বাগদি, ইত্যাদি), তপশিলি উপজাতি (সাঁওতাল, ওরাওঁ, ভুটিয়া, ইত্যাদি)-দের স্বীকৃতি নিশ্চিত করে ভারতের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য বজায় রাখব। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, সাধারণ শ্রেণি, প্রান্তিক এবং ভাষাগত সম্প্রদায়গুলি দেশজুড়ে সুসামঞ্জস্য বজায় রেখে সহাবস্থান করবে”, তিনি তাঁর আবেদনে জানিয়েছেন।