এরপরই ডিপফেকের প্রসঙ্গ তোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ভারতের মতো একটি বিশাল গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি তারা আমার ভয়েসের অপব্যবহার করে, প্রাথমিকভাবে লোকেরা এটি বিশ্বাস করবে, যার ফলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হবে।

PM Modi Bill Gates: ‘ড্রোন দিদি’ থেকে AI চ্যালেঞ্জ! বিল গেটস মোদির আলোচনায় আর কী কী…? চমকে দেওয়া তালিকা

নয়াদিল্লি : আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারী ক্ষমতায়ন। বিশ্বে এই মহূর্তে সবচেয়ে জ্বলন্ত তিন ইস্যু। আর সে সব নিয়েই মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে আলোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রযুক্তিকে কীভাবে সামাজিক ক্ষমতায়নে কাজে লাগানো যায়, কথা হয় তা নিয়েও।

এআই উদ্ভাবনে ভারতের ভূমিকার কথা তুলে ধরে দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রশংসা করেন বিল গেটস। অন্য দিকে, মোদি জোর দেন দৈনন্দিন জীবনে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ভূমিকার উপর। শিশুর প্রথম কান্না এবং ভারতীয় সমাজে এআই-এর তাৎপর্যকে এক সুতোয় গাঁথেন তিনি।

এদিনের আলোচনায় এআই নিয়ে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক ফোকাসের আভাস পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য বাজেট বরাদ্দ-সহ ইন্ডিয়াএআই মিশনের অনুমোদন যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই মিশনের লক্ষ্য হল কৌশলগত, অংশীদারিত্ব এবং বিভিন্ন সেক্টর জুড়ে উদ্যোগ, উদ্ভাবন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে শক্তিশালী এআই ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নারী ক্ষমতায়নে সরকারের একাধিক পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন। উল্লেখ করেন ‘ড্রোন দিদি’ প্রকল্পের কথাও। মহিলাদের ড্রোন পাইলট বানিয়ে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়নকে উৎসাহিত করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

COP 26 শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষিত ‘পঞ্চামৃত’ অঙ্গীকারে জলবায়ু নিয়ে ভারতের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা হয় এদিন। বিল গেটসকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ থেকে তৈরি জ্যাকেট দেখান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যা পরিবেশের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতির প্রতীক।

ভারতে ডিজিটাল বিপ্লব: ভারতে ডিজিটাল বিপ্লবের কথা বলতে গিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উদাহরণ দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়ায় G20 সম্মেলনের সময়, সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেছিলেন। আমি তাঁদের বুঝিয়েছিলাম, একচেটিয়া আগ্রাসন রোধ করতে আমরা প্রযুক্তির গণতান্ত্রিকরণ করেছি। এটা জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য…”।

অন্য দিকে, বিল গেটস প্রযুক্তি গ্রহণ এবং অগ্রগতিতে বিশেষ করে শাসন ব্যবস্থায় ভারতের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এখানে এটা ডিজিটাল সরকারের মতো। ভারত শুধু প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে তাই নয়, নেতৃত্ব দিচ্ছে”।

প্রযুক্তি এবং এআই-এর ভূমিকা এবং সুবিধা: প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২৩ সালের G20 শীর্ষ সম্মেলন এবং নমো অ্যাপের মতো উদ্যোগের উদাহরণ দেন। শাসন ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই-এর একীকরণের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বিল গেটসকে G20 শীর্ষ সম্মেলনের কীভাবে এআই ব্যবহার করা হয়েছিল এবং কাশী তামিল সঙ্গামম ইভেন্টের কীভাবে তাঁর হিন্দি বক্তৃতা তামিল ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল, সে কথা জানান। পাশাপাশি নমো অ্যাপে এআই-এর ব্যবহারও দেখান।

পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি এবং শিক্ষার প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে মোদি বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে, প্রথম এবং দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় আমরা পিছিয়ে ছিলাম। কারণ তখন ভারত ঔপনিবেশিক শাসকদের অধীনে ছিল। এখন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ডিজিটাল উপাদানটিই আসল। আমি আত্মবিশ্বাসী, ভারত এ থেকে অনেক কিছু পাবে”। বিল গেটসকে মজা করে মোদি বলেন, “এআই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে আমরা মাকে ‘Aai’ বলি। এখন আমি বলি যে যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে, তখন সে ‘Aai’ বলে, পাশাপাশি AI বলে। শিশুরাও এত উন্নত হয়েছে”।

ডিপফেক এবং সংশ্লিষ্ট উদ্বেগ: প্রধানমন্ত্রী মোদি এআই-এর অপব্যবহার সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বিশেষত ডিপফেক কনটেন্ট তৈরি এবং এর নেতিবাচক প্রভাব রুখতে পদক্ষেপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোদি বলেন, “যদি সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাউকে ভাল জিনিস (এআই) দেওয়া হয়, তবে তার অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে… আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম যে আমাদের এআই-উৎপাদিত সামগ্রীতে পরিষ্কার ‘ওয়াটারমার্ক দিয়ে দেওয়া উচিত। যাতে কারও কাছে ভুল বার্তা না যায়। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে, যে কেউ ডিপফেক ব্যবহার করতে পারে…ডিপফেক কনটেন্ট AO-উৎপাদিত তা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ…আমাদের এই নিয়ে ভাবতে হবে…”। প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, “আমরা যদি এআইকে ম্যাজিকের মতো ব্যবহার করি, তাহলে সম্ভবত গুরুতর অবিচার হবে। ChatGPT-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত এবং এআই-এর থেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত…”।

বিল গেটসও এআই-এর চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে এর ইতিবাচক দিকগুলো নিয়েও আশাবাদী তিনি। বিল গেটস বলেন, “এআই সবে পথ চলা শুরু করেছে। এমন কিছু করবে যা কঠিন মনে হবে, আবার সহজ কিছু করতে ব্যর্থ হবে। তবে মনে হচ্ছে এআই বিশাল সুযোগ নিয়ে আসছে। যদিও এর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে”।

নমো ড্রোন দিদি স্কিম: “ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার গুরুত্বপূর্ণ… ভারতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে মহিলারা সবচেয়ে বেশি তৎপর। আমরা ‘নমো ড্রোন দিদি’ প্রকল্প শুরু করেছি। মহিলারা খুশি। কেউ কেউ বলে, তারা সাইকেল চালাতে জানত না কিন্তু এখন পাইলট। ড্রোন উড়াতে পারে। মানসিকতা বদলে গিয়েছে”, মতামত মোদির।