কেরল: কেরলের কলেজে ফিরল যাদবপুরের বিভীষিকাময় স্মৃতি৷ সিনিয়রদের অত্যাচারের শেষে মর্মান্তিক পরিণতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রের৷ কলেজ হস্টেলের শৌচালয় থেকে উদ্ধার হল তাঁর ঝুলন্ত দেহ৷ পুলিশি রিপোর্টে সামনে এল, ঘটনার আগে এক টানা ২৯ ঘণ্টা নির্মল মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালানো হয়েছিল ওই ছাত্রের উপরে৷
২০২৩ সালের ৯ অগাস্ট রাত৷ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মেইন হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল বাংলার প্রথম বর্ষের নাবালক ছাত্রের৷ যা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য থেকে শুরু করে গোটা দেশ৷
তদন্তে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, হস্টেলের সিনিয়রদের একাংশের চাপের মুখে মানসিক ভাবে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল ওই ছাত্র৷ তারপরেই মর্মান্তিক পরিণতি৷ সামনে এসেছিল মানসিক অত্যাচারের একাধিক কাহিনি৷
এবার কেরলের ওয়ানাদ ডেলার ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্স কলেজেও সামনে এল এমনই এক ভয়াবহ অভিযোগ৷? গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই কলেজের হস্টেলের বাথরুম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় বছর কুড়ির সিদ্ধার্থন জে এসের দেহ৷ কিছুদিন সেখান পুলিশের অধীনে তদন্তভার থাকলেও সম্প্রতি তা তুলে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে৷
পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ঘটনার আগে ওই ছাত্রের উপরে একটানা ২৯ ঘণ্টা অত্যাচার চালিয়েছিলে তার কিছু সিনিয়র৷ ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে শুরু করে ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টো পর্যন্ত টানা ওই ছাত্রের উপরে চলে ‘নির্মম ব়্যাগিং’৷ শারীরিক ও মানসিক৷ কখনও হাত দিয়ে, কখনও বেল্ট দিয়ে চলে বেধড়ক মারধর৷
শুধু তাই নয়, ওই ছাত্রের বাবার অভিযোগ, শুধু ওই দিনই নয়, তাঁর ছেলের উপরে গত ৮ মাস ধরেই অত্যাচার চালাচ্ছিল কলেজের সিনিয়ররা৷ এমনকি, কলেজের এসএফআই করা ‘দাদা’দের সামনে, নগ্ন হয়ে হাঁটু মুড়ে বসতেও বসানো হত তাঁকে৷
রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘‘ক্রমাগত সেই অত্যাচারের ফলে ও পড়াশোনায় মন বসাতে পারছিল না, আবার কলেজের কোর্স ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়াও ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু, অত্যাচার সহ্যও করতে পারছিল না৷ তাই হয়ত আত্মঘাতী হওয়াকেই সে পথ হিসাবে বেছে নেয়৷ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হস্টেলের বাথরুমে সাড়ে ১২ টা থেকে পৌনে ২টোর মধ্যে আত্মহত্যা করে সে৷’’
ঘটনা সর্বসমক্ষে আসে যখন এই ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কেরলের বাম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধী বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা৷ সিবিআই তদন্তের দাবি জানান৷ চাপের মুখে পড়ে অবশ্য অবশেষে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়৷