মাছ। বাঙালি মাত্রেই প্রিয় এই একটি খাবার। শুধু যে স্বাদের জন্য, তা নয়। মাছের স্বাস্থ্য উপকারিতাও আকাশ ছোঁয়া। সপ্তাহে এক বা দুবার মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।আমিষভোজীরা সপ্তাহে বাড়িতে নিয়মিত মাছ রাখেন খাদ্য তালিকায়। কেউ কেউ মাংসের চেয়ে মাছই বেশি পছন্দ করেন। এমনকি চিকিৎসকরাও মাটন ও চিকেনের পরিবর্তে বেশি করে মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন।কিন্তু এই মাছই হয়ে উঠতে পারে চরম ক্ষতিকর। কারণ অনেকেরই অজান্তে কিছু মাছ তাঁদের শরীরে গিয়ে চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ কিছু কিছু মাছে বেশি পরিমানে থাকে পারদ। আর এই পারদযুক্ত মাছ খেলে হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা।আপনি দিনের পর দিন নিশ্চিন্তে খেয়ে যাচ্ছেন যে সমস্ত মাছ, সেই তালিকায় হয়ত আছে এমন অনেক মাছ যা মোটেও খাওয়া উচিত নয়। বিশেষত গর্ভবতী, প্রসূতি নারী এবং যে সমস্ত মহিলারা মা হওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁদের মেথিলমার্কারি আছে এমন মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।অনলাইন স্বাস্থ্য-কোচিং প্ল্যাটফর্ম নিউট্রিসেন্সের তালিকাভুক্ত পুষ্টিবিদ এবং বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান, ওয়ালেরিয়াসবলেন, “যদিও মাছের নিয়মিত সেবন অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে, তবে এটি রাখাও জরুরি যে কিছু কিছু মাছের পারদ বেশি হতে পারে এবং কিছু উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উদ্বেগ রয়েছে যা সম্ভাব্যভাবে এর সঙ্গে জড়িত”।ভ্রুণ, ছোট্ট শিশু ও বাচ্চাদের স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সমস্যা করে এই ধরনের বিষাক্ত উপাদান। কিন্তু কোন কোন মাছ আছে এই তালিকায়? দেখে নিন এমনই ঝুঁকিপূর্ণ মাছের লিস্ট যে গুলি ভয়াবহ ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।১. ইমপোর্ট করা মাগুর মাছ: সাবধান। দেখে হাত নিশপিশ করলেও বাজারে গিয়ে বড় আকারের মাগুর মাছ কেনা থেকে বিরত থাকুন। ছোট সাইজের মাগুর মাছ কিনুন। কারণ মাগুর মাছ কিন্তু নানা সাইজের হতে পারে। মাছের আকার দ্রুত বাড়ানোর জন্য অনেক সময় মাছ চাষিরা মাছের শরীরে বিভিন্ন হরমোন ইনজেকশন দেন। যা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর হতে পারে।২) ম্যাকেরেল: অনেকেই ম্যাকেরেল মাছ খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু জানেন কি এই ম্যাকরেল মাছটিতে পারদ থাকে? আপনি যদি ম্যাকেরেল খান তবে সেই পারদ আপনার পেটে জমতে থাকবে। এটি বিভিন্ন বিপজ্জনক রোগের কারণ হতে পারে। তাই এখন থেকে ম্যাকরেল খাওয়া এড়িয়ে চলুন।৩) টুনা: টুনা মূলত একটি বিদেশী মাছ। এই টুনাতে পারদ বেশি থাকে। এছাড়াও, এই মাছগুলিকে হরমোন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চ মাত্রায় ইনজেকশন দেওয়া হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ।৪) সার্ডিনস: ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি মাছ হল সার্ডিনস। চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল ওমেগা 3। যাইহোক, এটি সর্বোচ্চ পারদ উপাদান বিশিষ্ট মাছ। এর উচ্চ পারদ সহজেই স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই মাছ অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় বলে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।৫) ক্যাটফিশ: স্বাদ বাড়াতে এবং সাধারণত চাষ করা মাছের সংখ্যা বাড়াতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার করে ক্যানসার হওয়ার মতো ভয় রয়েছে। তাই এমন চাষ হওয়া মাছ কেনা ছেড়ে, কোনও রাসায়নিক ছাড়াই জৈবভাবে বেড়ে ওঠা মাছের সন্ধান করুন। অন্যথায় খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।৬) বাসা মাছ: বাসা মাছকে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা সবচেয়ে বিপজ্জনক মাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি এমন একটি মাছ যাতে ক্ষতিকারক ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। যাদের কোলেস্টেরলের ঝুঁকি রয়েছে তাদের এই মাছ খাওয়া উচিত নয়।এটি হৃদরোগ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত রোগের কারণও হয়। এছাড়াও, আপনার যদি হাঁপানি বা আর্থ্রাইটিস থাকে, তাহলে এই মাছ স্পর্শ করবেন না। এটি ব্রয়লার মাছ নামেও পরিচিত।মাছ কেনার টিপস: কী ভাবে টাটকা মাছ চিনবেন? মাছের চামড়া হালকা এবং চোখ পরিষ্কার হবে। যদি দেখেন মাছের লেজ নিচের দিকে ঝুলছে তার মানে মাছটি তাজা নয়।টাটকা মাছের খুব শক্তিশালী পাখনা এবং উজ্জ্বল লাল আঁশ থাকে। রক্ত লাল এবং তাজা হয়। যদি এটি কোল্ড স্টোরেজের মাছ হয়, তাহলে সেই মাছের রক্ত গাঢ় লাল রঙে জমাট বাঁধবে।
