কলকাতা: ভোট পরবর্তী অশান্তির জেরে ‘আক্রান্ত’ ও ‘ঘরছাড়া’ বিজেপি কর্মীদের পাশে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ১০৬ জন কর্মীকে নিয়ে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন শুভেন্দু অধিকারী।
গত বৃহস্পতিবার রাজভবনের অনুমতি থাকলেও কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে শুভেন্দু অধিকারী ও অন্যান্য বিজেপি কর্মীদের রাজভবনে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু। এমনকি রাজভবনে ঢোকার পথ গার্ড রেল দিয়ে আটকে রাখা হয় পুলিশের তরফে বলেও সেদিন পুলিশকে এক হাত নিয়েছিলেন শুভেন্দু। শেষমেষ শুক্রবার এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে শুভেন্দু অধিকারীকে রাজভবনে ঢুকতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে আদালতে জোর ধাক্কা খায় রাজ্য সরকার। শুভেন্দু অধিকারীকে রাজভবনে যাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত দেয় আদালত।
আদালতে শুনানি পর্বে সরকার ও পুলিশকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ১৪৪ ধারা জারি প্রসঙ্গে আদালত প্রশ্ন তোলে, রাজ্যপাল কি গৃহবন্দী হয়ে রয়েছেন? দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলাকারী বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষেই রায় দেয় আদালত। এরপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অফিসের তরফে রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে ‘ঘরছাড়া’ এবং ভোট পরবর্তী অশান্তির জেরে ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাক্ষাৎ করার বিষয়ে নতুন করে আবেদন জানানো হয়।
রাজভবন থেকে অনুমতি এবং হাইকোর্টের নির্দেশ ও শর্ত মোতাবেক রবিবার সন্ধেয় রাজভবনে পৌঁছে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি কর্মীরা। আক্রান্ত বিজেপি কর্মী ও ঘরছাড়াদের বিষয়ে রাজ্যপাল যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন সেই আবেদন জানানোর পাশাপাশি রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে অবগত করেন শুভেন্দু অধিকারী। শাসক দল এবং সরকারকে নিশানা করে কড়া বার্তা দেন রাজ্যপাল।
বাংলায় হিংসা বন্ধে তাঁর লড়াই চলবে বলে স্পষ্ট জানানোর পাশাপাশি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, গত বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারী ও আক্রান্তদের রাজভবনে ঢুকতে পুলিশের বাধা প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীদের রাজভবন থেকে সরানোর কথাও বলেছি। এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন বলেও জানান বোস।
এদিকে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুলিশের এরপর লজ্জা হওয়া উচিত। যেভাবে আমাকে এবং কর্মীদের সেদিন আটকানো হয়েছিল তাতে রাজ্যপাল এবং আদালত যা পদক্ষেপ নিয়েছেন আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’ শুভেন্দু অধিকারী এও বলেন, ‘শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে ভোট পরবর্তী হিংসার যা যা ঘটনা ঘটেছে তার ভিডিও, স্টিল ফটো এবং ১০-১২ মিনিটের বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের কর্মীদের কি অবস্থা রাজ্যপালকে তা জানিয়েছি।’
শুভেন্দু অধিকারীর দাবি,’ রাজ্যপাল রাজভবনের অন্দরে আক্রান্তদের বলেছেন যে, ‘ভিকটিমদের জন্য আমার দরজা খোলা। তবে পুলিশ মন্ত্রীর জন্য আমার দরজা বন্ধ।’ কলকাতা পুলিশের যে টিম গত বৃহস্পতিবার রাজভবনে ঢোকার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে অসভ্যতামি করেছে তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের অবিলম্বে রাজভবন থেকে বদলির নির্দেশও রাজ্যপাল দিয়েছেন বলে জানান শুভেন্দু। এ ব্যাপারে রাজভবনে শুভেন্দু ও অন্যান্যদের সামনে যখন রাজ্যপাল বক্তব্য রাখছিলেন তখন তিনিও এই কথা বলার পাশাপাশি তাঁর গলাতেও শোনা যায় চড়া সুর।
ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী