নয়াদিল্লি: সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি। তাঁর সেই বক্তব্য নিয়ে উঠেছিল তীব্র সমালোচনার ঝড়। তবে নারায়ণ মূর্তির সেই বক্তব্যকে সমর্থন করলেন ওলা সিইও ভাবিশ আগরওয়াল। তাঁর কথায় যে, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্সের কনসেপ্টকে একেবারেই সমর্থন করেন না তিনি। আর ওলা সিইও-র এহেন মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন একজন শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক। যিনি বলেন, এটি একাধিক সিরিয়াস রোগ এমনকী, অকালে মৃত্যুর ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে।
নিজের সাম্প্রতিক পডকাস্টে ওলা সিইও বলেন, “যখন মিস্টার মূর্তি বলেছিলেন যে, সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত, তখন জনসমক্ষেই আমি তাঁকে সমর্থন করেছিলাম। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় এর জন্য আমায় ট্রোলিংয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু আমি সেসব বিষয়কে পাত্তা দিই না। কারণ আমার বিশ্বাস যে, একটা প্রজন্মকে তপস্যা করতে হবে… তবেই আমরা আমাদের দেশকে বিশ্বে এক নম্বরে পৌঁছে দিতে পারব। যা বিশ্বের সবথেকে বড় অর্থনীতি হয়ে উঠবে।”
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তি বলেছিলেন যে, অন্যান্য বড় অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিতে অর্থাৎ যারা বিগত ২-৩ দশকে ব্যাপক উন্নতি করেছে, তাদের জায়গায় পৌঁছতে তরুণ সম্প্রদায়কে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। তাঁর এই বক্তব্যের পরেই কর্পোরেট এবং স্টার্টআপ দুনিয়া থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। ভাবিশ আগরওয়াল আরও বলেন, “আমি ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স কনসেপ্টে বিশ্বাস করি না। কারণ যদি আপনি নিজের কাজকে উপভোগ করেন, তাহলে আপনি জীবন এবং কাজে আনন্দ খুঁজে পাবেন। আর উভয়ের মধ্যেই ভারসাম্য বজায় থাকবে।”
আরও পড়ুন– দশ দিনে ৯ কোটি টাকা রোজগার যুবকের! পুলিশ হানা দিতেই বেরিয়ে এল আসল সত্য, ধৃত ২
এর জবাবে হায়দরাবাদ অ্যাপোলো হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. সুধীর কুমার বলেন যে, “৫৫ ঘণ্টা অথবা তার বেশি কাজ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ থেকে মৃত্যুর আশঙ্কাও ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে সপ্তাহে ৩৫-৪০ ঘণ্টা করে কাজ করলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কম হয়। তিনি আরও বলেন যে, প্রতি সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টারও বেশি কাজ করার কারণে প্রতি বছর ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।”
ডা. সুধীর কুমার আরও বলেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করে গেলে অতিরিক্ত হারে ওজন বৃদ্ধি পায়। যার জেরে প্রিডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে। যাঁরা সপ্তাহে ৬৯ ঘণ্টা অথবা তাঁর বেশি সময় ধরে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে মাঝারি থেকে শুরু করে গভীর ডিপ্রেশনের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে একাধিক গুরুতর রোগের ঝুঁকি এমনকী অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে।
ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন যে, “সিইও-রা তো নিজেদের সংস্থার মুনাফা এবং নিজেদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সংস্থার কর্মীদের বেশিক্ষণ কাজ করার পরামর্শ দেবেনই। আর কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের জায়গায় সহজে অন্য বিকল্পকে পেয়েও যাবেন।