কলকাতা: হাওড়া স্টেশনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি ইতিহাস। ‘বড় ঘড়ি’ অনেক ইতিহাসের সাক্ষী প্রায় শতবর্ষ ধরে। স্টিম ইঞ্জিনের সময় থেকে এখন হাওড়া স্টেশনের নীচে পাতালপথে গঙ্গা পেরিয়ে কলকাতায় যাওয়া মেট্রো রেল। বহু ইতিহাসের সাক্ষী সে।
লন্ডনের এডওয়ার্ড জন ডেন্টের সংস্থার তৈরি ঘড়িটি হাওড়া স্টেশনে জায়গা পায় ১৯২৬ সালে। ৩ ফুট ৯ ইঞ্চির ডায়ালে বড় কাঁটা দু’ফুটের। আর ছোট কাঁটাও ছোট নয় মোটেও। লম্বায় দেড় ফুট। প্রথমে মেকানিক্যাল ঘড়ি ছিল। ১৯৭৫ সালে ‘বড় ঘড়ি’ ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল হয়।
এখন অবশ্য রিচার্জেবল ব্যাটারিচালিত স্বয়ংক্রিয় ঘড়ি হয়ে গিয়েছে। লন্ডনে জন্ম হলেও হাওড়া স্টেশনে লাগানোর দায়িত্ব পেয়েছিল কলকাতার বিখ্যাত ঘড়ি ব্যবসায়ী দেবপ্রসাদ রায়ের সংস্থা রায় ব্রাদার্স কোম্পানি। এই বড় ঘড়ি হল হাওড়া স্টেশনের ল্যান্ডমার্ক।
আরও পড়ুন: ‘কেউ কেউকেটা নয়’! অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা…কর্মীদের বারবার কড়া বার্তা মমতা-অভিষেকের
সালটা ১৮৫৪। হাওড়া থেকে হুগলির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল ট্রেন। ৯১ মিনিটের এই যাত্রাপথই ইতিহাস লিখেছিল ভারতীয় রেলের। এখন দেশের মধ্যে সর্বাধিক ২৩টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে এই স্টেশনে। দিনে দশ লক্ষেরও বেশি যাত্রীর যাতায়াত। গোটা দেশের অন্যতম ব্যস্ত রেল স্টেশন হাওড়া। স্টেশনটির পরতে পরতে ইতিহাস। বর্তমানে রোজ ৪৫০ সাবার্বান এবং ১০৭টি দূরপাল্লার ট্রেন এখান থেকে চলাচল করে।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট থেকে এই লাইনে ট্রেন চলা শুরু হয়। ওইদিন ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে হুগলির উদ্দেশে। মাঝে পড়ে ৩টি স্টেশন। বালি, শ্রীরামপুর এবং চন্দননগর। স্টেশনটির ১ থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ওল্ড কমপ্লেক্সে আর ১৭ থেকে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম আছে নিউ কমপ্লেক্সে।
১৯০৫ সালে হাওড়ায় নতুন ছ’টা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়। ফলে সংখ্যা বেড়ে হয় সাতটা। ১৯৮৪ সালে ১৫। ১৯৯২ সালে নতুন টার্মিনাল তৈরি হয় এই স্টেশনের। ২০০৯ সালে প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৩। তবে এই স্টেশনে নেই ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের জায়গাটিকে ‘জিরো মাইল’ বলা হয়। অর্থাৎ, এই জায়গায় শুধু পণ্য পরিবহণ করা হয়। এখানে কোনও লোকাল বা দূরপাল্লার ট্রেন ঢোকে না। শুধুমাত্র জিনিসপত্র ওঠানামা করানো হয়।
বলা হয়, ১৮৫৪ সালের ১৫ অগাস্ট জিরো মাইল থেকেই প্রথম ট্রেন পাড়ি দিয়েছিল হুগলিতে। ঠিক ছিল, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ট্রেনটি হাওড়া থেকে হুগলি পৌঁছবে। তার পর দুপুর একটার মধ্যে ফিরে আসবে। তবে তা নাকি হয়নি। প্রথম দিনেই ২ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছয় ট্রেন।