কেন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়? আসল কারণ কী? রেলের সমস্যা শুনলে অবাক হবেন

কলকাতা: ট্রেন দুর্ঘটনার একের পর এক ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। ১৮ জুলাই ইউপির গোন্ডায় ঘটে যাওয়া ট্রেন দুর্ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার আরেকটি ট্রেন দুর্ঘটনা! মঙ্গলবার ভোর রাতে ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের কাছে চক্রধরপুরে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। হাওড়া থেকে মুম্বাইগামী সিএসএমটি মেলের ১৮টি বগি লাইনচ্যুত হয়।

এই দুর্ঘটনায় অন্তত দুজন যাত্রী নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে আপাতত খবর। দুদিন আগে এই রুটে একটি পণ্যবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছিল বলে জানা যায়। হাওড়া-সিএসএমটি মেল-এর এই মালবাহী ট্রেনের বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

আরও পড়ুন- বিপর্যয়ের মধ্যেই কেরলে আগামী দু’দিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস

গত ১৪ মাসে দেশে চারটি বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৩২০ জনেরও বেশি যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। ভারতের রেল ব্যবস্থা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম। এক লাখ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত ভারতীয় রেলের ট্র্যাক।

রেল প্রতিদিন আনুমানিক আড়াই কোটি যাত্রী বহন করে। বিবিসি ইংরেজির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মতে, ২০২২ সালে প্রায় ৫,২০০ কিলোমিটার নতুন ট্র্যাক স্থাপন করা হয়েছিল। আর প্রতি বছর ৮ হাজার কিলোমিটার ট্র্যাক আপগ্রেড করা হচ্ছে।

বৈষ্ণব বলেছিলেন, বেশিরভাগ ট্র্যাকে ১০০ কিমি/ঘন্টা গতিতে চলা ট্রেনগুলিকে আপগ্রেড করা হচ্ছে। একটি বৃহৎ অংশে ১৩০ কিমি/ঘন্টা গতিতে ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি চলছে। এমনকী কোনও ট্র্যাক ১৬০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতির ট্রেন চালানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সারা দেশে দ্রুত ট্রেন চালানো সরকারের একাধিক পরিকল্পনার একটি অংশ। দেশের আর্থিক রাজ ধানী মুম্বই এবং আহমেদাবাদ শহরের মধ্যে আলাদাভাবে একটি উচ্চ-গতির লাইন তৈরি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- সিট ভেঙে আটকে যায় পা, উদ্ধারকারীর সাহায্য বেরিয়ে আসেন, এখনও আতঙ্ক তাড়া করছে মালদহের জখমদের

রেলওয়ে বোর্ডের একজন প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘রেলের জন্য লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা একটি বড় সমস্যা হয়ে চলেছে। একটি ট্রেন অনেক কারণে লাইনচ্যুত হতে পারে।” ট্র্যাক ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে এই সমস্যা বাড়ে, এমনকী কোচ ভেঙে যাওয়া এবং ড্রাইবভারের ভুলও বড় কারণ।

২০১৯-২০-র একটি রেলওয়ে নিরাপত্তা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রেল দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হওয়া দায়ী। আগের বছরের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি ছিল এই ঘটনা। এর পর ট্রেনে আগুন এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা মোট দুর্ঘটনার যথাক্রমে ১৪ এবং আট শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে ২০১৯-২০ সালের ৩৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং সাতটি মালবাহী গাড়ির লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ট্র্যাকে ত্রুটির কারণে ১৭টি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেন, ইঞ্জিন, কোচ এবং ওয়াগনের ত্রুটির কারণে মাত্র নয়টি গাড়ি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ধাতু দিয়ে তৈরি রেলওয়ে ট্র্যাক গ্রীষ্মের সময় প্রসারিত হয়। শীতকালে তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে সেগুলি সংকুচিত হয়। তাই সেগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

ট্র্যাক পরিদর্শন সাধারণত রেল কর্মীরা পায়ে হেঁটে, ট্রলিতে, লোকোমোটিভে করেন। গত বছরের ২ জুন বালাসোরে ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। বালাসোরে তিনটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল।

সেই দুর্ঘটনায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস একটি দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রেন এবং তারপর অপর দিক থেকে আসা একটি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দেয়। এই দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়।

প্রাথমিক রিপোর্টে ইঙ্গিত করা হয়েছিল, সিগন্যাল সমস্যার ফলেই এই দুর্ঘটনা। কিন্তু বারবার এই ধরণের দুর্ঘটনা ভারতে রেলওয়ে নিরাপত্তা নিয়ে আবারও নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।