কারামন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাবে বন দফতর৷

Akhil Giri: মমতাকে নালিশ করবে বন দফতর, পাশে নেই দলও! মহিলা অফিসারকে শাসিয়ে বিপাকে অখিল

কলকাতা: বন দফতরের মহিলা অফিসারকে শাসিয়ে এবং কুকথা বলে বিপাকে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি৷ বন দফতর সূত্রে খবর, মহিলা অফিসারকে মন্ত্রীর শাসানির যে ভিডিও ফুটেজ সামনে এসেছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই নালিশ করা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যেই ওই মহিলা অফিসারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা৷ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও বন দফতরের ওই মহিলা আধিকারিককে ফোন করেছিলেন৷ দল হিসেবে তৃণমূল যে মন্ত্রীর এই আচরণকে সমর্থন করছে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কুণাল৷

ঘটনার সূত্রপাত এ দিন তাজপুর সমুদ্র সৈকতে বন দফতরের জায়গায় বেআইনি নির্মাণ সরানোকে কেন্দ্র করে৷ অভিযোগ, বন দফতরের জমিতে স্থানীয়রা দোকান এবং ঘর তৈরি করছিলেন৷ সেই খবর পেয়ে নির্মাণ আটকাতে ঘটনাস্থলে যান বন দফতরের রেঞ্জার পদমর্যাদার ওই মহিলা অফিসার৷ তখন সেখানে হাজির হন রাজ্যের কারামন্ত্রী এবং রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি৷ এর পরেই বেআইনি নির্মাণে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে ওই মহিলা অফিসারকে রীতিমতো শাসাতে থাকেন মন্ত্রী৷

আরও পড়ুন: সেতু পেরোতে গিয়ে ভেসে গেল চালক সমেত গাড়ি! আসানসোলে মৃত কোল ইন্ডিয়ার আধিকারিক

সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ওই মহিলা অফিসারকে রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে শাসাচ্ছেন অখিল গিরি৷ রাজ্যের কারামন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি কত বড় অফিসার আমি দেখে নেব৷ আপনার আয়ু আর বেশি দিন নেই৷ খুব বড় জোর আট থেকে দশ দিন৷’

ওই মহিলা অফিসার তখন বলেন, ‘স্যর আমি ডিউটি করছি বলে আপনি আমাকে সরিয়ে দেবেন? আপনি বলেছিলেন যে দোকান বসবে না৷’ এর পরেও ওই মহিলা অফিসারের সঙ্গে মন্ত্রী এবং তাঁর অনুগামীদের তর্কাতর্কি চলতে থাকে৷ তখন মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘শুনুন ম্যাডাম, সবাইকে নিয়ে চলুন৷ বেশি দিন থাকতে পারবেন না৷ কে বিট অফিসার আমি জানি, বন দফতরে কী দুর্নীতি হয় আমি জানি৷ সব বিধানসভায় ফাঁস করে দেব৷ আপনি এখানে থাকবেন না৷ এরা সারা বছর থাকবে৷ আপনার কি রাষ্ট্রপতির মতো ক্ষমতা? কারও কথা শুনতে চান না৷ পঁচিশ ফুট আমরা নিলাম৷ এর ভিতরে আপনি আসলে ফিরে যেতে পারবেন না বলে দিলাম৷ আপনি আমাদের কর্মচারী, মাথা নিচু করে থাকবেন৷ বেশি কথা বলবেন না৷ এত বড় বেয়াদপ, জানোয়ার রেঞ্জার এর আগে আসেনি৷’

যদিও নিজের আচরণের জন্য কোনও ভাবেই অনুতপ্ত নন রাজ্যের কারামন্ত্রী৷ বরং ওই মহিলা অফিসার বেআইনি নির্মাণে বাধা দিয়েছেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা দু মাসের জন্য ওই জায়গা চেয়েছিলাম, কিন্তু ওই মহিলা অফিসার কোনও কথা শুনতে চাননি৷ বাধ্য হয়ে আমি ওই কথাগুলি বলতে বাধ্য হয়েছি৷’

তবে এই বিতর্কে রাজ্যের মন্ত্রীর পাশে নেই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই ওই মহিলা অফিসারকে ফোন করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ৷ পরে মন্ত্রীর আচরণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অখিল গিরি যে ভাবে কথা বলেছেন তা দল অনুমোদন করে না। মুখের ভাষা, শব্দ চয়ন, শরীরী ভাষার তীব্র নিন্দা করছি। এই আচরণ করে ঠিক করেননি। এগুলো আপত্তিকর। বন দফতরের জমিতে দোকান বা কাঠামো ছিল। বন দফতর বলার পরেও সরাননি। আবার নতুন করে শুরু করায় বন দফতর আপত্তি জানায়। তারপর অখিল গিরি কারামন্ত্রী যা আচরণ করেন তা নিন্দনীয়। তার প্রয়োজন হলে বীরবাহা হাঁসদা বনমন্ত্রীকে জানাতে পারতেন। কারামন্ত্রীর উচিত ছিল বনমন্ত্রীর সাথে কথা বলা। অখিল গিরির উচিত ক্ষমা চাওয়া, কারামন্ত্রী সমর্থন যোগ্য কাজ করেননি। বন দফতর অফিসার নিজের কাজ করতে গিয়েছিলেন। এই আচরণের জন্য বিরুপ প্রভাব পড়ে। দল বিড়ম্বনায় পড়েন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নজর রাখছেন। দল যোগাযোগ করছে।’

রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও বলেন, একজন মহিলা অফিসারের সঙ্গে এই আচরণ না করলেই পারতেন। আমাকে বলতে পারতেন৷ ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএফও এবং সিসিএফ-এর থেকে ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে বন দফতর৷ সেই রিপোর্ট এলেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সহ কারামন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গোটা ঘটনা পাঠাবে বন দফতর৷

এই ঘটনায় তৃণমূলকেই আক্রমণ করে বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘চরম নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করছেন বেসরকারি দখলদারি মুক্ত করতে হবে। যেভাবে এরাজ্যের মন্ত্রী সরকারি মহিলা আধিকারিককে আক্রমণ করলেন সেটা লজ্জার। শাসক দলের আস্থা নেই পুলিশের উপর। পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমান নেতাদের হয়ে পুলিশ যে কাজ করে সেটা লজ্জার, ভয়ের, তবে পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে সেটা ঠিক নয়।’