আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় রায় (ইনসেটে)৷

R G Kar murder update: হেলমেট, ছেঁড়া হেডফোনের তার! আর জি কর কাণ্ডে কীভাবে অপরাধীর খোঁজ পেল পুলিশ?

কলকাতা: সিসিটিভি ফুটেজ আর হেডফোনের ছেঁড়া এক টুকরো তার৷ প্রাথমিক এই দুই সূত্র ধরেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আর জি কর কাণ্ডে সাফল্য পেল কলকাতা পুলিশ৷ শুক্রবার সকালে আর জি কর হাসপাতালের চার তলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল মহিলা ডাক্তারি পড়ুয়ার ক্ষতবিক্ষত দেহ৷ শুক্রবার রাতেই এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সঞ্জয় রায় নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ অভিযুক্ত নিজের অপরাধও স্বীকার করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷

কী কীভাবে অপরাধীকে চিহ্নিত করল পুলিশ?

আর জি করের মতো কলকাতার বুকে নামকরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ুয়াকে নির্যাতন করে খুনের ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়৷ বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং লাগতে শুরু করে৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজে মৃতার বাবা মাকে ফোন করে দ্রুত অপরাধীদের ধরার আশ্বাস দেন৷ ফলে রহস্যের দ্রুত কিনারা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশও৷

সূত্রে খবর, অপরাধীর শনাক্তিকরণে সবথেকে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সিসিটিভি ফুটেজের অভাব৷ কারণ চারতলার চেস্ট ডিপার্টমেন্টের যে সেমিনার রুমে এই ঘটনা ঘটে, তার ভিতরে অথবা দরজার মুখেও কোনও সিসিটিভি ছিল না৷ ফলে কাছাকাছি থাকা অন্য সিসিটিভির ফুটেজগুলি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা৷

আরও পড়ুন: আর জি করে ডাক্তারি পড়ুয়াকে নির্যাতন, খুনের ঘটনায় ধৃত ১! হেডফোনের সূত্র ধরে জালে তুলল পুলিশ

বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভোরের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে নিশ্চিত ছিল পুলিশ৷ এই তথ্য পাওয়ার পরেই নির্দিষ্ট ওই সময় ধরে হাসপাতালের কর্মী, গ্রুপ-ডি স্টাফ, নার্স, জুনিয়র ডাক্তার ছাড়া আর কারও সেমিনার হলের আশেপাশে যাতায়াত ছিল কিনা সেই তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেন তদন্তকারীরা৷

সেই মতো ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজের উপরই জোর দেওয়া হয়৷ শেষ পর্যন্ত আসে সাফল্য৷ সূত্রের খবর, চারতলার চেস্ট মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট দিয়েই ওই সেমিনার রুমে যাওয়া যেত৷ ঘটনার দিন বিশ্রাম নিতে সেখানেই গিয়েছিলেন তরুণী চিকিৎসক৷ সেমিনার রুম অথবা তার আশেপাশে সিসিটিভি না থাকলেও চেস্ট ডিপার্টমেন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল৷ বৃহস্পতিবার রাত তিনটের পর সেই সিসিটিভি-তে হেলমেট হাতে এক রহস্যজনক যুবকের ছবি ধরা পড়ে৷ সেমিনার রুমের দিকেই যেতে দেখা যায় তাকে৷ আবার কিছুক্ষণ বাদে ওই পথেই ফিরে আসে ওই যুবক৷ গোটাটাই ধরা পড়ে সিসিটিভি-তে৷

এমন কি, কিছুক্ষণ বাদে হাসপাতালের এক তলার জরুরি বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজেও ওই যুবকের ছবি ধরা পড়ে৷ এর পরেই অভিযুক্তের সন্ধান শুরু করে পুলিশ৷ শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বর থেকেই শুক্রবার গভীর রাতে অভিযুক্তকে আটক করে লালবাজার নিয়ে যাওয়া হয়৷

হেডফোনের ছেঁড়া তার

সিসিটিভি ফুটেজের পাশাপাশি অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে পুলিশের অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় ব্লু টুথ হেডফোনের অংশ৷ ওই হেডফোনের অংশ ঘটনাস্থল থেকে আগেই সংগ্রহ করেছিল পুলিশ৷ পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, হেডফোনের ওই ছেঁড়া তার অভিযুক্ত সঞ্জয়ের হেডফোনেরই৷ সঞ্জয়ের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই তার ফোন নম্বর জোগাড় করে শুক্রবার রাতে পুলিশ তাকে আর জি কর হাসপাতালে ডেকে পাঠায়৷ সঞ্জয় হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও রোগী ভর্তির বিষয়ে প্রভাব খাটাত সে৷ খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে হাসপাতালে চলে আসে সঞ্জয়৷ লালবাজারে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্তকে টানা জেরা শুরু করেন তদন্তকারীরা৷ বিশেষত হেডফোনের প্রসঙ্গ উঠতেই সঞ্জয়ের কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে৷ জেরার মুখে অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করে নিয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে দাবি করা হচ্ছে৷

এর পাশাপাশি ধৃতের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশনও খতিয়ে দেখে পুলিশ৷ তাতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ওই অভিযুক্ত আর জি কর হাসপাতালে চত্বরেই ছিল৷ যদিও এই ঘটনায় সঞ্জয় রায় নামে ওই যুবক একাই জড়িত নাকি তার সঙ্গে অন্য কেউ এই অপরাধে যুক্ত, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা৷