কান্দাহার হাইজ্যাক নিয়ে তৈরি সিরিজে তথ্যবিভ্রান্তি!...ভুল ধরিয়ে দিলেন খোদ পাইলট!

IC 814 The Kandahar Hijack: গল্পের গরু গাছে! IC 814: কান্দাহার হাইজ্যাক-এর ভুল ধরিয়ে দিলেন খোদ পাইলট!

মুম্বই:  ১৯৯৯ সাল। আকাশপথে অপহরণ করা হয়েছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানকে। সেই নিয়েই রোমহর্ষক কাহিনি এখন ওটিটির পর্দায়। অগাস্টের শেষেই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে অনুভব সিনহার পরিচালিত থ্রিলার সিরিজ IC 814: কান্দাহার হাইজ্যাক (IC 814: The Kandahar Hijack)। তবে, মুক্তির পরেই শোরগোল। অভিযোগ উঠছে তথ্যবিকৃতির। খোদ প্লেনের পাইলট ধরিয়ে দিলেন ভুল!

আরও পড়ুন- চশমা পরার দিন শেষ! পুজোর সময়েই আসছে নতুন আই ড্রপ, কারা কিনতে পারবেন?

তথ্যচিত্রে কয়েক জন অপহরণকারীর যে নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। ঘটনার জেরে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে ব্যখ্যা চাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ভারতের শীর্ষকর্তা মঙ্গলবার মন্ত্রকে গিয়ে দেখা করেন। অনুভব তাঁর সিরিজে সন্ত্রাসীদের নাম অমুসলিম নামে পরিবর্তন করায় এবং হতাশাজনক ঘটনাটিকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করার অভিযোগে প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হন। এ সবের মধ্যেই মুখ খোলেন, ক্যাপ্টেন দেবী শরণ, যিনি হাইজ্যাকড ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন, সিরিজে দেখানো হলেও বাস্তবে ঘটেনি এমন দুটি ঘটনার কথা খুলেছিলেন।

আরও পড়ুন- বিল পাসেই কি ধরা পড়বে ধর্ষক? কতটা সুরক্ষিত হল মেয়েরা? জানুন ‘অপরাজিতা’ ইতিবৃত্ত

সিরিজটি দেখায় যে বিজয় ভার্মা অভিনীত পাইলট প্লাম্বিং লাইনগুলি খুলে ফেলেছিলেন এবং অপহরণের ঘটনা শেষ হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি স্যালুট পেয়েছিলেন। একটি নতুন সাক্ষাত্কারে, দেবী শরণ জানালেন, যে এমন কিছুই ঘটেনি বাস্তবে। যা ঘটেছিল তার ব্যখ্যাও দিলেন ক্যাপ্টেন। শরণের কথায়, “আমি নিজে প্লাম্বিং লাইন ঠিক করিনি। তারা (তালেবান কর্তৃপক্ষ) একজন কর্মী পাঠিয়েছে। আমি তাকে এয়ারক্রাফ্ট হোল্ডে নিয়ে গিয়েছিলাম কারণ সে জানত না যে লাইনগুলি কোথায় ছিল।” পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে জড়িত দৃশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে, শরণ বলেছিলেন, “(পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং) একটি ভঙ্গি করেছিলেন যা আমাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে।”

সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে কেউ কেউ বলেছেন কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লিগামী যে বিমানটিকে অপহরণ করা হয়, তার অপহরণকারীদের পরিচয় বদলে দেওয়া হয়েছে। অপহরণকারীদের এক জনের ছদ্মনাম ‘ভোলা’ এবং অন্য জনের ছদ্মনাম ‘শঙ্কর’ রাখা হয়েছে। তা থেকেই শুরু হয় চর্চা এবং সমালোচনা।

বিজয় বর্মা, নাসিরুদ্দিন শাহ, পঙ্কজ কপূর অভিনীত সিরিজ়টির পরিচালক অনুভব সিংহ। ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত একটি বিবিৃতি অনুসারে বিমানটির পাঁচ জন অপহরণকারীই ছিলেন মুসলমান। তাই নেটাগরিকদের একাংশের আশঙ্কা, সিরিজ়ে দু’জনের হিন্দু ছদ্মনামের ব্যবহার ঘটনাটির ঐতিহাসিক বিকৃতি ঘটাতে পারে। কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট ওটিটি মাধ্যমটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করারও আহ্বান জানিয়েছেন।

IC 814: আসলে এক ভয়াবহ বাস্তবেরই পুনর্নির্মাণ। কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যখন দিল্লিতে পৌঁছেছিল ওই ভারতীয় বিমান, তখনই সেটিকে অপহরণ করেছিল জঙ্গীরা। বিমানে যাত্রী ও পাইলটকে বন্দি রাখা হয় সাত দিন। হাইজ্যাকাররা তিনজন হাই-প্রোফাইল জঙ্গির মুক্তি দাবি করেছিল: মাওলানা মাসুদ আজহার, আহমেদ ওমর সাইদ শেখ এবংমুশতাক আহমেদ জারগার। সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর যাত্রী এবং পাইলটের প্রাণের বিনিময়ে সেই তিন জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়া হয়। জঙ্গিদের হাতে একজনের মৃত্যুও হয়।

তথ্য বিকৃতির অভিযোগে সিরিজটি ‘বয়কট’ করার ডাক উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে অভিযোগ যে সম্পূর্ণ সত্য নয়, তা নিয়ে মতামত জানিয়েছেন সিরিজ়ের কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবরা। তিনি জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন। সিরিজ়ের ক্ষেত্রে তাঁদের গবেষণায় যে কোনও রকম খামতি নেই, সে কথাও স্পষ্ট করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, সেই সময়ে একাধিক সাংবাদিক, যাঁরা অপহরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন লিখেছিলেন, তাঁরাও সমাজমাধ্যমে দাবি করেছেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচ জন অপহরণকারী একে অপরকে ‘চিফ’, ‘ডক্টর’, ‘বার্গার’,‘ ভোলা’ এবং ‘শঙ্কর’ বলে সম্বোধন করছিল।