Arindam Sil: ‘…সিসিটিভি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে!’ FIR হতেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন অরিন্দম

কলকাতা: মিটু তিরে বিদ্ধ টলিউডের বিখ্যাত পরিচালক অরিন্দম শীল। ইন্ডাস্ট্রিরই এক অভিনেত্রী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন মহিলা কমিশনে। তার ফলস্বরূপ ডিরেক্টর অ্যাসোসিয়েশন নিলম্বিত করে ‘শবর’ ফ্র্যাঞ্চাইজের পরিচালককে। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি। ডায়মন্ড হারবার রোডের বিষ্ণুপুর থানায় অরিন্দমের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে অভিনেত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে। স্বাভাবিক ভাবেই আরও বিপাকে টলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী পরিচালক। তবে তিনি এখনই মনের জোর হারাচ্ছেন না। আইনি ব্যবস্থার উপর তাঁর সম্পূর্ণ ভরসা আছে, এমনই জানাচ্ছেন অরিন্দম।

নিউজ18 বাংলাকে অরিন্দম বলেন, যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা আদৌ ভিত্তিহীন। অভিনেতা-পরিচালকের দাবি, কোনও ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। অরিন্দমের কথায়, “আমি কি পাগল যে একটা শট বোঝাতে গিয়ে কাউকে এতখানি অপমান করব যে, আমার পুরো কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে? এখন কাজ করার জন্য একটা প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এমন অবস্থায় পরিচালক, মেকআপ আর্টিস্ট, কস্টিউম ডিজাইনাররা কী ভাবে কাজ করবেন? তা হলে তো সর্বত্র সিসিটিভি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে।”

কয়ের বছর আগে ফিরে গেলে দেখা যাবে, এই প্রথম নয়, অতীতেও অরিন্দমের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মৈত্র। নতুন করে সেই চর্চার পালে হাওয়া লাগতেই খানিক অস্বস্তিতে অরিন্দম। পরিচালকের সাফাই, “আইনের প্রতি আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। আমার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য প্রমাণও রয়েছে। যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। কিন্তু তাতেও একজনের অস্বস্তি হতে পারে। কিন্তু সেই বিষয়টি আমাকে জানালেই তো হত।”

এখানেই থামেননি অরিন্দম। আইনি বিপাকের মাঝেই তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, সংশ্লিষ্ট ঘটনাটির সময়ই কেন অভিযোগকারিণী কোনও কথা বললেন না? কেন চুপ রইলেন তিনি? তাঁর বক্তব্য, “এমন তো নয় যে, আমার সঙ্গে অভিযোগকারিণীর সুসম্পর্ক ছিল না। এতগুলো দিন আমরা একসঙ্গে কাজ করলাম। আমাকে পরিষ্কার করে সবটা বললেই পারত।”

অরিন্দম জানান, জনপ্রিয় এক ফ্র্যাঞ্চাইজের নতুন কিস্তির একটি রোম্যান্টিক দৃশ্যের শ্যুট চলছিল। বিছানায় লিপলকের সেই দৃশ্যটি ‘বোঝানোর’ জন্যই নাকি অভিযোগকারিণীর সঙ্গে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন পরিচালক। তিনি বলেন, “পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সব দৃশ্যই আমি সেটে অভিনয় করে দেখাই। তাতে আমার সুবিধা হয়। সেই জায়গা থেকেই আমি শটটা দেখাতে গিয়েছি। এবং অভিনেতারাও বলেছিলেন শটটা দেখিয়ে দিতে। তখনই দৃশ্যটি বোঝাতে গিয়ে আমার মুখ এবং ওঁর (অভিযোগকারিণীর) বাঁ গাল ব্রাশ করে। শুধু এটুকুই। সেই সময় আমার সহকারী ডিওপি, স্টিল ফোটোগ্রাফার সকলেই ছিলেন।”

সেই ঘটনার পরেও খুব স্বাভাবিক আচরণ করেছিলেন অভিযোগকারিণী, দাবি অরিন্দমের। পরিচালকের সঙ্গেও নাকি হাস্যমুখেই কথা বলেছিলেন তিনি। অরিন্দম জানান, এপ্রিলে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা নিয়ে জুন মাসে মহিলা কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন অভিনেত্রী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অগাস্ট মাসে ডেকে পাঠানো হয় অরিন্দমকে। পরিচালকের দাবি, “আমি মহিলা কমিশনে গিয়ে ছবি, ভিডিও-সহ যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ দেখাই। চেয়ারপার্সন আমাকে বলেন কোনও ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষয়টি এত দূর গড়ায়। আরেকদিন দু’পক্ষকে ডাকা হবে। সেখানে আমাকে বলতে হবে, আমি অনিচ্ছাকৃত ভাবে কাজটা করেছি। এবং অভিযোগকারিণীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।”

আরও পড়ুন: আরও বিপাকে অরিন্দম শীল! পরিচালকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগে FIR দায়ের অভিনেত্রীর

আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থার অভিযোগ! পরিচালক অরিন্দম শীলকে সাসপেন্ড করল ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন

মহিলা কমিশনের সঙ্গে সেই বৈঠকে অরিন্দমের সঙ্গে ছিলেন তাঁর কার্যনির্বাহী প্রযোজক, স্টিল ফোটোগ্রাফার এবং কস্টিউম অ্যাসিস্ট্যান্ট। তাঁদেরও বয়ান নেওয়া হয় বলে জানান পরিচালক। অরিন্দম আরও বলেন, “শুধু সিকুয়েন্স শ্যুট হয়ে যাওয়ার পর অভিনেত্রী কার্যনির্বাহী প্রযোজককে বলেছিলেন, তাঁর অস্বস্তি হয়েছে। তারপরেও তিনি সিন শ্যুট করেছেন। ও আমাকে ওঁর অস্বস্তির কথা তখনই বললে, আমি ক্ষমা চেয়ে নিতাম। কিন্তু এই জিনিসটাকে যে এত বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার পিছনে আরও অন্য বড় কারণ আছে।”

পুরো ঘটনায় মহিলা কমিশনের ভূমিকা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছেন অরিন্দম। পরিচালকের অভিযোগ, কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে তাঁকে ‘অনিচ্ছাকৃত’ শব্দটি ব্যবহার করতে বারণ করা হয়। এবং সেই ‘গোপন’ চিঠি তাঁর সম্মতি ছাড়াই নাকি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়। পরিচালকের অভিযোগ, তাঁর কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়নি। সেই বিষয়টি কমিশনকে জানিয়ে এবং আরও একবার নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ চেয়ে তিনি দু’টি মেলও করেন। কিন্তু এখনও তার কোনও উত্তর পাননি।