Ind vs Eng: ‘খেলা হবে’ মন্ত্রে চাঙ্গা, প্রথম টেস্টের ক্ষত সারিয়ে সিংহ বধে উদ্যত কোহলি এন্ড কোং

ভারত-  ৩২৯, ২৮৬

ইংল্যান্ড – ১৩৪ 

#চেন্নাই: ১০৬ রানে রবিচন্দ্রন অশ্বিন যখন আউট হলেন ততক্ষণে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের রান ২৮৬৷ জিততে গেলে ইংল্যান্ডকে করতে হবে বিশাল ৪৮২ রান৷  ভারতের লিড ৪৮১ রানের৷ অশ্বিনের অসামাণ্য ইনিংস ,বিরাটের দায়িত্বশীল ৬২৷ প্রথম ইনিংসে ১৯৫ রানের লিড৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে  রান সব মিলিয়ে একেবারে চিপকে চাপে ইংল্যান্ড৷ জয়ের জন্য রুটবাহিনীর প্রয়োজন  রান৷ বিরাটের সঙ্গে অশ্বিন যে খেলা শুরু করেছিলেন সেখান থেকে শিল্পের স্তরে খেলে দলকে একেবারে রানের চুড়োয় পৌঁছে দিলেন৷ কে বলবে যে সোমবারের শুরুটা হয়েছিল যখন তখন প্রথম এক ঘণ্টায় ৫ উইকেটে দলের স্কোর ছিল ৮৬৷  প্রথিতযশারা ফিরেছেন ৷ বিরাট লড়াই করতে শুরু করেন অশ্বিনের সঙ্গে৷ অশ্বিনের শতরান এদিন এসেছে মাত্র ১৩৯ বলে৷ তাঁর ইনিংস সাজানো ১৪ টি চার ও একটি ছয় দিয়ে৷

অধিনায়ক বিরাট কোহলি অর্ধ শতরান করার কয়েক ওভারের মধ্যেই ফের এল অর্ধশতরান৷ বল হাতে একাই ব্রিটিশ সিংহের অর্ধেক দুর্গ ধ্বসিয়ে দেওয়ার পর ব্যাট হাতে  অর্ধশতরান৷ কোহলির সঙ্গে জুটিতে লুটি করে একেবারে ভারতকে চালকের আসনে বসিয়ে দিলেন অশ্বিন৷

এদিন মাত্র ৬৪ বলে অর্ধশতরান করেন অশ্বিন৷ তাঁর ইনিংস সাজানো সাতটি চার দিয়ে৷

তৃতীয় দিনের শুরুতে ভারতের পরপর কয়েকটা উইকেট তুলে নিয়ে প্রাথমিক একটা চাপ তৈরি করেছিল ইংলিশ বোলাররা৷ কিন্তু সেটাকে চাপের প্রেশার কুকারে পরিণত করতে ব্যর্থ তারা৷ উল্টে অধিনায়ক বিরাট কোহলি যেভাবে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে চাপের পাহাড়ের নিচে দাবিয়ে দিলেন তা নিঃসন্দেহে কুর্নিশযোগ্য৷

এদিন বিরাট ১০৭ বলে অর্ধশতরান করেন, তাঁর ইনিংসে রয়েছে ৭ টি চার৷ বিরাট ৬২ রান করে আউট হয়ে যান৷ মইন আলি ও জ্যাক লিচ ৪ টি করেই উইকেট নিয়েছেন তিনি৷

দ্বিতীয় দিনের শেষে ক্রিজে ছিলেন রোহিত শর্মা ও চেতেশ্বর পূজারা৷ কিন্তু রোহিত ২৭ ও পূজারা ব্যক্তিগত ৭ রানে আউট হন৷ কোহলি এরপর নিজের সঙ্গে খেলার জন্য দুরন্ত ফর্মে থাকা ঋষভ পন্থকে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে আনলেও সেই বাজি স্থায়ী হয়নি৷ উল্টে তিনিও ৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন৷

অজিঙ্ক রাহানের সঙ্গে বিরাটের জুটিটা যখন জমবে জমবে মনে হচ্ছিল তখন মইন আলির শিকার জিঙ্কসও৷ তবে রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিজের পরিচিত চেন্নাই পিচে একেবারে চিপকে গেলেন৷ অধিনায়ক বিরাটের সঙ্গে সহযোগিতায় তিনি এগিয়ে নিয়ে গেলেন দলের স্কোর হুইল৷

দ্বিতীয় ইনিংস ভারতীয়দের উইকেটগুলি নেন লিচ ও মইন আলি৷

এদিকে এর আগে দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের স্কোর ১ উইকেটে ৫৪ রান৷ প্রথম ইনিংসে ১৯৫ রানে এগিয়ে থাকার সুবাদে এই মুহূর্তে লিড  ২৪৯৷ ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে আটকে রাখার পর ভারতীয় ওপেনারদের একজন অবশ্য প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন৷ তিনি শুভমান গিল৷ তিনি প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ফ্লপ৷ দিনের শেষে ব্যাটিং ক্রিজে রয়েছেন রোহিত শর্মা ও চেতেশ্বর পূজারা৷ রোহিতের রান ২৫ ও পূজারা -র রান ৭৷

ফলো অন করানোর সম্ভবনা হতে পারে এই বিপত্তিটা কোনওরকমে ঠেলে সরিয়ে দিলেও ইংল্যান্ড বেশিক্ষণ লড়াই করতে পারল না৷  চা বিরতিতে ৮ উইকেটে ১০৬-র ১৩৪ তে শেষ ব্রিটিশ সিংহদের জারিজুরি৷ চেন্নাইতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট গেল অশ্বিনের ঝোলায়৷ এদিকে ইশান্ত , অকসর প্যাটেল ২ টি করে এবং মহম্মদ সিরাজ একটি উইকেট নেন৷ অশ্বিন মাত্র ৪৫ রান দিয়ে ৫ টি উইকেট নেন৷

নবম উইকেটে ঋষভ পন্থের দুরন্ত ক্যাচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই৷

চেন্নাইয়ের প্রথম টেস্টে হারের পর ভারতীয় দল কী ‘খেলা হবে’ মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছে৷ বিতর্ক অবশ্য বাইশ গজে না আনাই ভালো ৷ কারণ ভারতীয় দল প্রথম টেস্টের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে জবরদস্ত পারফরম্যান্স৷  ভারতের প্রথম ইনিংসের ৩২৯ -র পর ব্যাট করতে নামাটা মধুর হল না ইংল্যান্ডের ৷ লাঞ্চের আগের সেশন পরপর উইকেট খোয়ালো তারা৷ এর মধ্যে রয়েছেন গত টেস্টে ধামাকা ইনিংস খেলা ইংল্যান্ড অধিনায়কও ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নে৷

রবিবারের চিপকে ইশান্ত শর্মার প্রথম শিকার ররি বার্নস৷ এরপর ডম সিবলে, ডন লরেন্স, জো রুট পরপর আউট হয়ে যান৷ ররি খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে গেলেও বাকিদের মধ্যে একমাত্র দু অঙ্কের রানে পোঁছন সিবলে তিনি ১৬ রান করেন৷ লরেন্স, রুট ৯ ও ৮ রান করেন৷ অশ্বিন ২ টি ও অক্ষর প্যাটেল আরও একটি উইকেট নিয়েছেন৷

লাঞ্চের পর ফিরে ক্রিজে নিজেদের ফেভিকল দিয়ে আটকে রাখার একটা চেষ্টা করেছিলেন ওল্লি পোপ, বেন ফোকস রা কিন্তু তাঁদের লড়াই ভারতীয় বোলারদের আটকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না৷ ওল্লি  ২২ করে আউট হন৷ এরপরেও উইকেট পড়ে মইন আলি, অলি স্টোনের৷

৩৩ রানে ব্যাট করছিলেন আর রবিবাসরীয় চেন্নাইতে সকাল সকাল নিজের অর্ধশতরান পূরণ করা ছাড়া ভারতের বিশেষ কিছু বলার মতো হল না ৷ ৬ উইকেটে ৩০০ রানে প্রথম দিন শেষ করার পর ৩২৯ রানে অলআউট হয়ে গেল দল৷ ঋষভ পন্থ করেন ৫৮ রান৷ তাঁর ৭৭ বলের ইনিংসে রয়েছে ৭ টি চার ৩ টি ছয়৷

ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ইনিংসের সফলতম বোলার মইন আলি৷ তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট৷