কলকাতা: এসএসসি মামলার সোমবারের রায়ে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার৷ সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর প্রশ্ন, তাঁদের কাছে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেআইনি পথে চাকরি পাওয়া পাঁচ হাজার জনের তথ্য ছিল৷ কিন্তু, তার জন্য বাকি ১৯ হাজার জনের চাকরি কেন বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হল? যদিও রায়ের সম্পূর্ণ নথি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করলেন তিনি৷ তবে জানালেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন তাঁরা৷
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এসএসসি মামলার রায়ে সব মিলিয়ে ২০১৬ সালে নিযুক্ত মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করেছে। শুধু তা-ই নয়, প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, সেইরকম ১,১১৩ জনকে এক মাসের মধ্যে ২০১৬ সালের নিয়োগের পর থেকে পাওয়া সম্পূর্ণ বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ তা-ও আবার ১২ শতাংশ সুদ সমেত৷
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এসএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘রায় দিয়েছে সম্পূর্ণ নিয়োগ বাতিল।যারা সুপারিশ পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই চাকরি করছেন।আমরা অবশ্যই এই রায়ে খুশি নয়।সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করব৷’’
তিনি জানান, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তদন্ত হয়েছে। ৫০০০ জনের নিয়োগকে তদন্তকারীরা আইনসম্মত নয় বলে জানিয়েছিল। এর আগে ৫ হাজার নিয়োগের মধ্যে অনেকের চাকরি বাতিল নির্দেশ এসেছিল। বাকি যে প্রায় ১৯ হাজার রয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে কী অভিযোগ রয়েছে, তা রায়ের কপি না দেখে তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি৷
এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে নির্বাচনের পর নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷ এ বিষয়ে এসএসসি চেয়ারম্যানের মন্তব্য, ‘‘আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা কঠোর রায়। নতুন তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে নেই ৫ হাজার বাদে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা এসএসসি-এর কাজ। কোর্ট্র যদি নির্দেশ থাকে আমরা অবশ্যই নতুন নিয়োগ করবো। যদি নতুন রুল আসে অবশ্যই আমরা শুরু করব।’’
এক জন দু’জন নয়৷ ২৪ হাজার ৬৪০ জমের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট৷ ২০১৬ সালের পুরো প্যানেলই বাতিলের নির্দেশ দিল আদালত৷ এখানেই শেষ নয়৷ সোমবার আদালতের তরফে নির্দেশ, টাকা ফেরাতে হবে ১,১১৩ জন চাকরি প্রাপকদের। সুদ সমেত টাকা ফেরাতে হবে তাঁদের। আর তা ফেরত দিতে হবে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যেই।
অর্থাৎ, ২০১৬ সালের পর থেকে তাঁরা এত বছর যে বেতন পেয়েছেন, সমস্ত টাকা ফেরাতে হবে তাঁদের। ঠিক যেমন ববিতা সরকার, অঙ্কিতা অধিকারীদের ক্ষেত্রে হয়েছিল। মামলাকারীদের তরফে আইনজীবীরা জানান, ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল। সোমা দাস ছাড়া সকলের প্যানেল বাতিল। যতজন মাইনে পেয়েছেন চার সপ্তাহের মধ্যে তা ফেরাতে হবে। ডিএমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিআই তা ডিএম-কে জানাবেন। এই প্যানেলের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ সকলকে মাইনে ফেরাতে হবে।
আদালত এদিন জানায়,লোকসভার নির্বাচন পর্ব মেটার পরে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷ ততদিন বাতিল থাকবে সমস্ত বেতন বন্ধ৷ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির জন্য সিবিআই মনে করলে সাসপেক্টেডদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম দশম ও একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ সংক্রান্ত শুনানি চলছিল এতদিন। সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত চাকরি প্রাপকরা মামলা করলে মামলা পাঠানো হয় হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে। বিতর্কিত চাকরি প্রাপকদের বিভিন্ন আইনজীবীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।