মানবদেহের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে গভীর যোগ রয়েছে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার)-এর। অর্থাৎ হাইপারটেনশন কিন্তু কার্ডিও-ভাসক্যুলার স্বাস্থ্য ভাল রাখার অন্যতম প্রধান সূচক। আবার হাইপারটেনশনকে নীরব ঘাতক বলেও অভিহিত করা হয়। আসলে তা বছরের পর বছর ধরে যদি না ধরা পড়ে, তাহলে তা নীরবে রক্তবাহী ধমনীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিতে পারে। যা হৃদরোগ, স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এই প্রসঙ্গে কথা বলছেন বিএম বিড়লা হার্ট হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ডিরেক্টর ড. অঞ্জন সায়োটিয়া
কলকাতা: হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে অন্যতম কোমর্বিডিটি হল হাইপারটেনশন। কারণ সারা বিশ্ব জুড়ে এটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হৃদরোগের কারণ। গোটা বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ হাইপারটেনশনে আক্রান্ত। আসলে হাইপারটেনশনের মূল সমস্যা হল, এটা সহজে নির্ণয় করা যায় না। ফলে চিকিৎসাও হয় না।
হাইপারটেনশনের প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা হলে চিকিৎসকরা হামেশাই ‘রুল অফ হাফস’-এর কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার যদি ৫০ শতাংশ মানুষ হাইপারটেনসিভ হন, তাহলে এই মানুষগুলির অর্ধেক অংশই জানেন না যে, তাঁদের হাইপারটেনশন রয়েছে। কারণ তাঁরা কখনওই নিজেদের রক্তচাপ পরীক্ষা করাননি। আর অবশিষ্ট অংশ যাঁরা নিজেদের রক্তচাপ পরীক্ষা করান, তাঁরা নিজেদের হাইপারটেনশনের জানেন। আর এই অবশিষ্টদের মধ্যে অর্ধেক অংশ ওষুধ খান এর জন্য। আর যাঁরা ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাঁদের মধ্যে অর্ধেক অংশই নিজেদের রক্তচাপ পর্যাপ্ত ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
এর অর্থ হল, হাইপারটেনশনের খুব অল্প সংখ্যক রোগীই ওষুধের মাধ্যমে ভাল ভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। বাকিরা তো ওষুধই খান না অথবা পর্যাপ্ত ডোজ নেন না। এটাই হাইপারটেনশনের উল্লেখযোগ্য সমস্যা। আর যেহেতু পর্যাপ্ত চিকিৎসা হচ্ছে না, তাই স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো হাইপারটেনশন সংক্রান্ত জটিলতা খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। এই কারণে অবিলম্বে রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং হামেশাই রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে হবে। আর চিকিৎসের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। ওষুধ খাওয়ার পরেও কিন্তু রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ রক্তচাপ পর্যাপ্ত ভাবে নিয়ন্ত্রিত না থাকলে ওষুধের ডোজ এ-দিক ও-দিক করতে হবে।
নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করার পাশাপাশি সুস্থ জীবনযাপন করাও আবশ্যিক। আসলে জীবনযাপন উন্নত করাই এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, লিন প্রোটিন এবং হোল গ্রেন যোগ করতে হবে। এর পাশাপাশি সোডিয়াম সেবনে রাশ টানতে হবে। আর খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি সঠিক ওজন বজায় রাখাটাও জরুরি। এর জন্য এক্সারসাইজ করতে হবে। আর হাইপারটেনশনের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগা, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। আর সময়ে সময়ে মেডিক্যাল চেক-আপ করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।