বছরের পর বছর নষ্ট হবে না ঘরে মজুত করে রাখা গম, প্রয়োজন হবে না কোনও রাসায়নিকেরও; শুধু শস্যের বস্তায় মেশাতে হবে এই ছোট্ট জিনিসটি

বছরের পর বছর নষ্ট হবে না ঘরে মজুত করে রাখা গম, প্রয়োজন হবে না কোনও রাসায়নিকেরও; শুধু শস্যের বস্তায় মেশাতে হবে এই ছোট্ট জিনিসটি

অনুজ গোতম, সাগর: গ্রীষ্মকালে অনেকেই গম কিনে সারা বছরের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখে দেন। তবে পুরনো হয়ে গেলে গমের মধ্যে পোকা ধরতে পারে কিংবা তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় কী করণীয়। আজ একটি পুরনো উপায়ের কথা বলব, যা আমাদের ঠাকুমা-দিদিমাদের আমল থেকে প্রচলিত। আর এটা অবলম্বন করলে ১ বছরের জন্য নয়, প্রায় ৩-৪ বছরের জন্য আরামসে গম সংরক্ষণ করা যেতে পারে। সাধারণত অনেকেই গম সংরক্ষণ করার জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করেন। এর ফলে গমে গন্ধ হয়ে যায়। তাই জেনে নেওয়া যাক, রাসায়নিক ছাড়াই গম সংরক্ষণের উপায়। বুন্দেলখণ্ডে যা শতাব্দীপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে।

আরও পড়ুন– পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ কোনটা? ২০২৪ সালের হিসেব আপনি যা ভাবছেন তার উল্টো কথা বলছে

বিনামূল্যেই গম থাকবে নিরাপদ:

একবিংশ শতাব্দীতে গম সংরক্ষণের জন্য তার উপর রাসায়নিকের কোটিং বা প্রলেপ দেওয়া হয়। যাতে তা নষ্ট না হয়ে যায়। অথচ এগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু বুন্দেলখণ্ডে বহু সময় ধরে সংরক্ষণ করার জন্য গমের সঙ্গে ছাই মেশানোর প্রক্রিয়া চলে আসছে। আর এতে কিন্তু স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হয় না।

রাসায়নিকের ব্যবহার:

আসলে গ্রীষ্মের মরশুমেই গম তোলা হয়। ফলে এই সময় মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে গম কিনে গোলা ভরে রাখেন। তবে গম নিরাপদ রাখাটাও অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ গম খুব দ্রুত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, যার কারণে এর উপরের খোসাটা উঠে যায়। আর তা ছোট ছোট পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। সমস্যা এড়াতে অনেকেই সেলপাস ট্যাবলেট শস্যের বস্তার মধ্যে রাখেন কিংবা এই শস্যের বস্তায় রাসায়নিক স্প্রে করেন। যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আরও পড়ুন– কুলার চালালেই ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে আর্দ্রতা; ত্বকের আঠালো ভাবের সমস্যা এড়াতে অবলম্বন করতে পারেন এই ৫টি উপায়

ইট-ভাটার ছাই করবে কামাল:

গ্রীষ্মের মরশুমে ইট-ভাটায় ইট তৈরির জন্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এই জ্বালানি অনেক দিন জ্বলতে থাকে। আর মাটি দিয়ে ইট তৈরি হওয়ার কারণে পড়ে থাকে শুধু ছাই। ইট তৈরি হলে এই ছাই সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। ফলে বুন্দেলখণ্ডের মানুষ ভাটা থেকে এই ছাই তুলে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং গমের সঙ্গে মিশিয়ে রেখে দেন। যার কারণে বছরের পর বছর গমে কোনও পোকা থাকে না।

ছাই ছেঁকে রাখতে হবে:

ভাটা থেকে ছাই এনে প্রথমে তা শোধন করতে হয়। কারণ এতে নুড়ি এবং পাথরও থাকে। এর চালুনি দিয়ে ছাইটা ছেঁকে নিতে হবে। এরপর সেই ছাই শস্যদানার বস্তায় ঢেলে দিতে হবে। এবার তাতে রাখতে হবে শস্য। ছাই যাতে বস্তার নিচে পৌঁছতে পারে, তার জন্য বস্তায় একটি কাঠের বা লোহার রড প্রবেশ করানো হয়। এর পাশাপাশি আবার যোগ করা হয় ছাই। আর এই শস্যের বস্তা এমন জায়গায় রাখা হয়, যাতে বৃষ্টির দিনে তা আর্দ্রতার সংস্পর্শে না আসতে পারে।

আরও পড়ুন- ইরানি প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার কেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ল? বাকি দুটি চপার ফিরেছে নিরাপদেই

গ্রামবাসীদের বক্তব্য:

সেখানকার সানোধা গ্রামের দ্রপতি বাই বলেন, এই ধারা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই গম নিরাপদ রাখার জন্য গমের বস্তায় ছাই মেশানো হয়। আমাদের পূর্বপুরুষরাও এই ধারার মাধ্যমেই গম সংরক্ষণ করতেন। আমরাও সেই ধারাই অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি।