সাবধান! ফ্যাটি লিভারের নির্দিষ্ট কারণগুলি জানেন তো? শরীরের বারোটা বাজিয়ে দেয়

কলকাতা: হেপাটোমেগালি (এনলার্জড লিভার) এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (স্টিটোসিস) এমন অবস্থা, যার একাধিক কারণ এবং ঝুঁকি থাকে। আজকের প্রতিবেদনে বিশদে আলোচনা করে নেওয়া যাক এর কারণগুলি।

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (স্টিটোসিস):

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ আবার হেপাটিক স্টিটোসিস নামেও পরিচিত। এক্ষেত্রে লিভার কোষে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট জমা হয়। মূলত তা দুই ধরনের।

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এএফএলডি):

অতিরিক্ত মদ্যপানই এর প্রাথমিক কারণ। লিভারে অ্যালকোহল মেটাবলিজম টক্সিক উপজাত উৎপন্ন করে, যা লিভারের কোষ নষ্ট করে দেয়। ফলে ফ্যাট জমে।

আরও পড়ুন- মদের সঙ্গে কোল্ড ড্রিঙ্ক না মেশালে চলে না? কী বিপদ হবে শুনলে কেঁদে ফেলবেন

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি):

এর কারণ সেভাবে বোঝা যায়নি। কিন্তু মেটাবলিক সিন্ড্রোমের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ওবেসিটি, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ডিসলিপিডেমিয়ার মতো অবস্থা।

মেটাবলিক-অ্যাসোসিয়েটেড ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এমএএফএলডি):
আগে এর নাম ছিল এনএএফএলডি। তবে এটা মূলত হয় মেটাবলিক ডিসফাংশনের কারণে। ওবেসিটি বিশেষ করে ভিসেরাল ফ্যাটের সঙ্গেই রয়েছে এর যোগ।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলিটাস:

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে লিভারে ফ্যাট জমে।
ডিসলিপিডেমিয়া:

ট্রাইগ্লিসারাইড এবং লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কোলস্টেরলের কারণে লিভারে ফ্যাট জমে।

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:

শারীরিক কসরত কম হওয়ার কারণে ওবেসিটি আসে। যার জেরে এই সমস্যা দেখা দেয়।

আরও পড়ুন- গরমে ৫ মিনিটে স্বস্তি!সুস্বাদু আমপোড়া শরবতের সহজ রেসিপি,উপকারিতা জানলে রোজ খাবেন

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

রিফাইন্ড সুগার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাটের কারণে লিভারে ফ্যাট জমে।

হেপাটোমেগালি:

এক্ষেত্রে লিভার বড় হয়ে যায়। নিম্নলিখিত বিভিন্ন ধরনের অবস্থার কারণে এটা হয়:

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এএফএলডি ও এমএএফএলডি):
অতিরিক্ত ফ্যাট জমলে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে।

লিভার সংক্রমণ:

ভাইরাল হেপাটাইটিস (হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই)-এর কারণে লিভারে প্রদাহ হতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যাক্টেরিয়াল, প্যারাসাইটিক ও ফাঙ্গাল সংক্রমণের কারণেও হেপাটোমেগালি হতে পারে।

এছাড়া লিভারে বিনাইন টিউমারও হতে পারে। যথা- হেপাটিক অ্যাডিনোমা ও হেমানজিওমাস। আবার প্রাইমারি লিভার ক্যানসার এবং মেটাস্ট্যাটিক ক্যানসারও এর কারণ হতে পারে।

মেটাবলিক ডিজঅর্ডার:

হেমোক্রোমাটোসিস:
এক্ষেত্রে লিভারে অতিরিক্ত আয়রন জমে।

উইলসনস ডিজিজ:

এক্ষেত্রে অতিরিক্ত কপার জমে।

হার্ট ফেলিওর:

কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওর থেকে লিভার কনজেশন হতে পারে। এমনকী লিভারও বেড়ে যায়।

ইনফিলট্রেটিভ ডিজিজ:

লিভারে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমলে অ্যামিলয়েডোসিস হতে পারে। এছাড়া উৎসেচকের ঘাটতির কারণে লিভারে অতিরিক্ত গ্লাইকোজেন জমে।

প্রতিরোধের উপায়:

ওজন হ্রাস:

ব্যালেন্সড ডায়েট ও শারীরিক কসরতের মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখা উচিত।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট:

ডায়েটে যোগ করতে হবে বেশি পরিমাণে ফল, শাক-সবজি, হোল গ্রেনস, লিন প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর প্রোটিন। মিষ্টি ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।

এক্সারসাইজ:

নিয়মিত শারীরিক কসরত করলে সর্বোপরি মেটাবলিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

চিকিৎসা:

ডায়াবেটিস, ডিসলিপিডেমিয়া ও হাইপারটেনশনের দিকে নিয়মিত নজর রাখতে হবে।

টক্সিন এড়িয়ে চলা:

অ্যালকোহল সীমিত পরিমাণে সেবন করাই ভাল। অপ্রয়োজনীয় ওষুধও এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে লিভারের ক্ষতি হয়। সময়ে সমস্যা ধরা পড়লে ফ্যাটি লিভার হবে না। এড়ানো যায় সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের মতো সমস্যাও। লিভার ফাংশন টেস্ট, ফাইব্রোস্ক্যান প্রভৃতি করানো উচিত। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।