প্লাটফর্মের ইন্ডিকেশন বোর্ড দেখে ট্রেনে চড়ে আসা পরিজনদেরও সহজেই খুঁজে পাওয়া  যায়। বর্তমান আর্থিক বছর ২০২৪-২৫-এ, পূর্ব  রেলওয়ের সিগনাল ও টেলিকম বিভাগ যাত্রীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন ইন্ডিকেশন বোর্ড (TIB) এবং কোচ ইন্ডিকেশন বোর্ড (CIB) স্থাপন করেছে।

Indian Railways: একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা, ট্রেনের সুরক্ষা বাড়াতে যা যা করেছে রেল

নয়াদিল্লি: অভিশপ্ত সোমবারের সকালে মালগাড়ির ধাক্কায় লাইনচ্যুত হয়েছে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই ঘটনায় যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আসলে বারবার এহেন ট্রেন দুর্ঘটনায় এই ধরনের প্রশ্ন উঠতে বাধ্য! আজকের প্রতিবেদনে তাই রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গেই কথা বলা যাক।

বলে রাখা ভাল যে, বিশ্বে বৃহত্তম রেলব্যবস্থার নিরিখে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন। বিগত কয়েক বছরে রেলওয়ে পরিকাঠামোর উন্নতি, রেলব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, অপারেশনাল দক্ষতার উন্নতি এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় রেল।

আরও পড়ুন: অপেক্ষার অবসান, কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকল যোজনার টাকা, চেক করে নিন আপনার ব্যালেন্স

রেল সুরক্ষা এক নজরে:
রেলওয়ে-র প্রকাশ করা এক গ্রাফে দেখা যাচ্ছে যে, ট্রেন দুর্ঘটনা দ্রুত হারে হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০-২০০১ সাল নাগাদ যা ছিল ৪৭৩। তা ২০২২-২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৪০-এ। আবার ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে গড় ট্রেন দুর্ঘটনা বার্ষিক ১৭১টি। যা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সময়কালের মধ্যে হ্রাস পেয়ে নেমে এসেছে ৬৮-তে।

ট্রেনের সুরক্ষা বাড়াতে যা যা করা হয়েছে:
১. ২০১৭-১৮ নাগাদ রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষ কোষ (আরআরএসকে) চালু করা হয়েছে ৫ বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ নাগাদ আরআরএসকে-র কাজে মোট খরচ হয়েছে ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ নাগাদ সরকার আরআরএসকে আরও ৫ বছরের জন্য সম্প্রসারণ করেছে। যেখানে ৪৫০০০ কোটি টাকার গ্রস বাজেটারি সাপোর্ট রয়েছে।

২. ন্যাশনাল অটোম্যাটিক ট্রেন প্রোটেকশন হিসেবে কবচ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৪৬৫ রুট কিলোমিটার এবং ১২১ লোকোমোটিভে এই ব্যবস্থা লাগু করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রতিদিন ১০০ টাকা বাঁচিয়ে মিলবে ১০ লক্ষ টাকা, জেনে নিন কীভাবে এবং কত সময় লাগতে পারে

৩. সুরক্ষা আরও বাড়াতে ৩১ মে, ২০২৪ তারিখের মধ্যে ৬৫৮৬টি স্টেশনে ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং (ইআই) ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অটোম্যাটিক ব্লক সিগন্যালিং (এবিএস)-ও দেওয়া হয়েছে হাই-ডেনসিটি রুটের ৪১১১ রুট কিলোমিটার পথে গত ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখের মধ্যে। ওই সময়েই লেভেল ক্রসিং গেটগুলিতে সিগন্যাল-সহ ইন্টারলকিং ১১১৩৭টি গেটের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যেই ব্রড গেজ রুটে সমস্ত আনম্যানড লেভেল ক্রসিং বন্ধ করা হয়েছে।

৪. সমস্ত লোকোমোটিভে এখন রয়েছে ভিজিল্যান্স কন্ট্রোল ডিভাইস (ভিসিডি)। আর কুয়াশাচ্ছন্ন এলাকাগুলিতে পাইলটদের দেওয়া হয়েছে জিপিএস-ভিত্তিক ফগ সেফটি ডিভাইসেস (এফএসডি)।

৫. ট্র্যাকের সুরক্ষার জন্য রক্ষণাবেক্ষণে এসেছে আমূল পরিবর্তন। যার জন্য চালু হয়েছে অ্যাডভান্সড ট্র্যাক রেকর্ডিং কারস। যা দ্রুত এবং ভরসাযোগ্য। ৩১ মে, ২০২৩ তারিখের মধ্যে প্রায় ৬৬০৯টি স্টেশনে সম্পূর্ণ ট্র্যাক সার্কিটিং প্রদান করা হয়েছে। ত্রুটিগুলি শনাক্ত করতে রেলের আল্ট্রাসনিক টেস্টিং করা হয়।

৬. সেতুর সুরক্ষার জন্য একটি ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (বিএমএস), একটি ওয়েব-ভিত্তিক আইটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। যাতে সব সময় সেতু সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। ব্রিজের নজরদারির জন্য নতুন প্রযুক্তিও আনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল, অনবরত জলের মাত্রা পরীক্ষা, ড্রোন তদারকি এবং নদীতটের ত্রিমাত্রিক স্ক্যানিং।

৭. রোলিং স্টকের নিরাপত্তার উন্নতির জন্য উন্নত প্রযুক্তি অবলম্বন করা হয়েছে। যথা- রোলিং স্টক সিস্টেমের অনলাইন মনিটরিং এবং হুইল ইমপ্যাক্ট লোড ডিটেক্টর। স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিংয়ের জন্য রোলিং স্টকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ যুক্ত করা হচ্ছে।

৮. প্রচলিত আইসিএফ ডিজাইন কোচ অপসারণের কাজ চলছে। বর্তমানে আনা হচ্ছে এলএইচবি ডিজাইন কোচ।

নিরাপত্তার তুলনা: ২০০৪-১৪ বনাম ২০১৪-২৪
১. নিরাপত্তার কাজে খরচ আড়াই গুণ বেড়েছে। ২০০৪-১৪ নাগাদ ছিল ৭০২৭৩ কোটি টাকা। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ১.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা।

২. ট্র্যাক নবীকরণের খরচ ২.৩৩ গুণ বেড়েছে। ২০০৪-১৪ নাগাদ ছিল ৪৭০১৮ কোটি টাকা। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ১০৯৬৫৯ কোটি টাকা।

৩. ওয়েল্ড ফেলিওর কমেছে ৮৭ শতাংশ। ২০১৩-১৪ নাগাদ ছিল ৩৬৯৯। আর ২০২৩-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ৪৮১। রেল ফ্র্যাকচার কমেছে ৮৫ শতাংশ। ২০১৩-১৪ নাগাদ ছিল ২৫৪৮। আর ২০২৩-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ৩৮৩।

৪. লেভেল ক্রসিং এলিমিনেশনের খরচ বেড়েছে ৬.৪ গুণ। ২০০৪-১৪ নাগাদ ছিল ৫৭২৬ কোটি টাকা। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ৩৬৬৯৯ কোটি টাকা।

৫. আনম্যানড লেভেল ক্রসিং গেট কমানো হয়েছে ১০০ শতাংশ। ৩১ মার্চ, ২০১৪ নাগাদ ছিল ৮৯৪৮। তবে ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯ তারিখের মধ্যে তা শূন্যে নেমে এসেছে।

৬. সেতুর উপর রাস্তা নির্মাণ বেড়েছে ২.৯ গুণ। ২০০৪-১৪ নাগাদ যা ছিল ৪১৪৮টি। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ১১৯৪৫টি।

৭. ব্রিজ পুনর্বাসনের খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০০৪-১৪ নাগাদ যা ছিল ৩৯১৯ কোটি টাকা। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ৮০০৮ কোটি টাকা।

৮. ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং (স্টেশনগুলিতে) বেড়েছে ৩.৫ গুণ। ২০০৪-১৪ নাগাদ যা ছিল ৮৩৭টি। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ২৯৬৪টি।

৯. অটোম্যাটিক ব্লক সিগন্যালিং বেড়েছে ১.৬৭ গুণ। ২০০৪-১৪ নাগাদ যা ছিল ১৪৮৬ কিলোমিটার। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ২৪৯৭ কিলোমিটার।

১০. ফগ পাস সেফটি ডিভাইস বেড়েছে ২১৯ গুণ। ৩১ মার্চ, ২০১৪ তারিখ নাগাদ যা ছিল ৯০টি। ৩১ মার্চ, ২০২৪ তারিখ নাগাদ তা হয়েছে ১৯৭৪২টি।

১১. এলএইচবি কোচ নির্মাণ ১৫.৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৪-১৪ নাগাদ যা ছিল ২৩৩৭টি। আর ২০১৪-২৪ নাগাদ তা হয়েছে ৩৬৯৩৩টি।

১২. এসি কামরায় আগুন এবং ধোঁয়া শনাক্ত করার ব্যবস্থা ২০১৪ সালে ছিলই না। অথচ ২০২৪ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৯২৭১।

১৩. আবার নন-এসি কামরাগুলিতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা ২০১৪ সালে ০ থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে ৬৬৮৪০-এ দাঁড়িয়েছে।