CPIM: লোকসভা ভোটেও কেন কাটল না শূন্যের গেরো? জেলার রিপোর্টে চিন্তা বাড়ল সিপিএমের

কলকাতা: রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির ‘আঁতাঁত’ কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা। নির্বাচনী প্রচারে এই নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন সিপিএমের নেতারা। নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে কার্যত সেই কথাই স্বীকার করে নিল দল

বুধবার শুরু হওয়া দলের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টিই উঠে এসেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে যেমন যেমন তৃণমূলের উপরে মানুষ আস্থা রেখেছন, একই রকম ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধেও বিজেপিকে ভরসা করেছে রাজ্যের সিংহভাগ ভোটার। আলিমুদ্দিনের কাছে এমনটাই রিপোর্ট দিয়েছেন দলের বিভিন্ন জেলার নেতৃত্ব৷

আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে আটকে গেল জেল মুক্তি! কেজরিওয়ালের জামিনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের

বছর কয়েক ধরেই একদিকে রাজ্যের শাসকদলের জায়গা যেমন ধরে রেখেছে তৃণমূল, তেমনই বিরোধী হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে চলেছে বিজেপি। এই দ্বিমুখী লড়াইটাকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা বলে কটাক্ষ করে এসেছে সিপিএম নেতৃত্ব। এবার নির্বাচনী প্রচারে দলীয় নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, এবার রাজ্য ত্রিমুখী লড়াই হবে৷ প্রচারে সেই রকম রণকৌশল সাজানো হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা গেল, রাজ্যে সবুজ ঝড় অব্যাহত রয়েছে। দাপট কমলেও বাকি জায়গায় উড়েছে গেরুয়া আবির। একটি আসন জিতে কোনওমতে মান বাঁচিয়েছে কংগ্রেস। আর বামেদের ফিরতে হয়েছে আবার শূন্য হাতেই। শুধু তাই নয়। দুটি আসন ছাড়া বাকি আসনগুলিতে জামানত জব্দ হতে হয়েছে বামেদের৷

লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের কাটাছেঁড়ায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাই উঠে এল সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে। বৈঠকের প্রথম দিনের আলোচনার নির্যাস, বিজেপিকে কারা শেষ পর্যন্ত হারাতে পারবে, এই প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেসের উপরেই ভরসা করেছেন বেশিসংখ্যক মানুষ। বিজেপি-বিরোধিতার মূল কেন্দ্র তৃণমূল আর তৃণমূল-বিরোধিতায় ভরসা বিজেপি— এই দ্বিমেরু ভাষ্য খানিকটা ফিকে হলেও বিকল্প মতকে এখনও ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করে তোলা যায়নি। গরিব মানুষের বড় অংশের সমর্থন না পাওয়ার কথা কবুল করার পাশাপাশিই আন্দোলন ও সংগঠনের দুর্বলতার প্রসঙ্গ তুলেছেন জেলার নেতারা।

রাজ্যে লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে পর্যালোচনার লক্ষ্যে বুধবার থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে হয়েছিল সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সূত্রের খবর, বৈঠকের প্রারম্ভিক ভাষণে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলে নিয়েছিলেন, যথাসাধ্য লড়াই করলেও রাজ্যে বামেদের ফল প্রত্যাশার কাছে পৌঁছতে পারেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হতে দেরি হয়েছে, আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতাও ভেস্তে গিয়েছে শেষ মুহূর্তে। আবার বামফ্রন্টের মধ্যেও আসন নিয়ে টানাপড়েন ছিল, সমন্বয়ের অভাব ছিল। এই প্রতিকূলতা সঙ্গে নিয়েও যা ফল হওয়ার আশা ছিল, তা হয়নি বলে সেলিমের মত। দলের কাছে খোলাখুলি আলোচনা চেয়েছেন তিনি।

সিপিএম সূত্রের খবর, পর্যালোচনা করতে গিয়ে একাধিক জেলার নেতারা বলেছেন, বাংলায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল ছিল না। তারা একা লড়েছে এবং প্রচার করেছে, বিজেপির বিরুদ্ধে তারাই প্রকৃত লড়াই করছে। এর পাল্টা প্রচার করেও বামেরা ভোটে সুবিধা করতে পারেনি। বিজেপিকে হারাতে পারবে তৃণমূল, এই ভাবনা থেকে অধিকাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে উপভোক্তা হিসেবেও অনেকে শাসক দলকে ভোট দিয়েছেন। তা ছাড়া, গরিব মানুষের বড় অংশের সমর্থনও বামেরা পায়নি। নিচু তলায় সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার দুর্বলতার কথাও তুলেছেন রাজ্য কমিটির বেশ কিছু সদস্য। তাঁদের মতে, ভোটের আগে ময়দানে বা সমাজমাধ্যমে প্রচার ভাল হলেও ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ত্রুটি থেকেই যাচ্ছে