কলকাতা: খাদিম কর্তা অপহরণ মামলায় জেলবন্দী সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত দুষ্কৃতী মিজানুর রহমানের মৃত্যু। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে প্রায় ১১ বছর ৫ মাস ২৪ দিন বন্দী থাকা অবস্থায় আচমকা মৃত্যু মিজানুর রহমানের। জেল সূত্রে খবর, বুধবার রাতে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভূত হয়।
জেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অসুস্থ মিজানুরকে নিয়ে প্রথমে এসএসকেএমে যায়। তারপর সেখান থেকে চিত্ত রঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ২ টো নাগাদ তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে জানায়।
এরপর ময়না তদন্তের জন্য এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয় দেহ। জেল সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন মিজানুর দুটো কিডনি নষ্ট ছিল, হার্টের সমস্যা ছিল। অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বলে দাবী হাসপাতাল ও জেল কর্তৃপক্ষর।
কে এই মিজানুর? গোয়েন্দা সূত্রে খবর, তিলজলা এলাকায় ২০০১ সালে পার্থ রায় বর্মন খাদিম কর্তা অপহরণ মামলা গ্রেফতার করা হয় মিজানুর রহমানকে। সেই ঘটনায় তিলজলায় অভিযোগ হয়। পরবর্তী কালে সিবিআই মামলা তদন্ত ভার হাতে নেয়। এই ঘটনায় -৩৬৪A(অপহরণ), ১২০B( ষড়যন্ত্র), এবং ৩৪২ IPC খাদিম কেস অপহরণ মামলা ছিল। সেই ঘটনায় মিজানুর রহমান অভিযুক্ত যাবজীবন সাজাপ্রাপ্ত।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ২০০১ সালের ২৫ জুলাই তিলজলা এলাকায় সি এন রায় রোডে খাদিম কর্তা পার্থ রায় বর্মনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের সময় দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে আহতও হয় তিনি। পার্থ রায় বর্মনকে রাখা হয়েছিল হাড়োয়ার পুকুরিয়ার একটি নির্জন বাড়িতে। সেই ঘটনায় পুলিশ তদন্তে নেমে বহু বছর পরে মিজানুর রহমান সর্দারকে গ্রেফতার করে। সেই ঘটনায় মিজানুর রহমান অভিযুক্ত যাবজীবন সাজাপ্রাপ্ত।
ব্যবসায়ী অপহরণে এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়। সিআইডি তদন্ত ভার নেয়। মূল চক্রী আফতাব আনসারী-সহ পাঁচ গ্রেপ্তার করে তদন্তকারীরা। এই মামলায় আফতাব-সহ পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। পরে আরও কিছুজন ধরা পরে। এর মধ্যে মিজানুর ছিল। ২০০৯ সালে মামলার দ্বিতীয় পর্যায়ে শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ দিন ধরে বিচার চলে। মিজানুর দোষী সাবস্ত্য হয়।
বসিরহাট এলাকায় বাড়ি মিজানুরের। মিজানুরের বিরাশি বছরের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মিজানুরের চুয়ান্ন বছর বয়স হয়েছিল। হঠাৎ বুকে ব্যথা থেকেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জেল সূত্রে খবর। এই খবর পাওয়া মাত্রই তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া । তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বিবির কথায়, ‘‘আর কয়েকদিন পরেই মিজানুর রহমান সর্দার সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেত।’’
মুক্তির মাত্র কয়েকদিন আগেই মিজানুরের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। তবে হঠাত্ই খাদিম কর্তা অপহরণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মৃত্যু ঘিরে প্রেসিডেন্সি জেলে চঞ্চল্য ছড়ায়। অসুস্থতা নাকি অন্য কোনও কারণও রয়েছে? ঘটনায় এই ইতিমধ্যেই ময়না তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও জেল কর্তৃপক্ষ দাবি, মিজানুর দীর্ঘ বছর ধরে অসুস্থ ছিল। অসুস্থতার জন্য মৃত্যু হয়েছে।
ARPITA HAZRA and ANUPAM SAHA