Virat Kohli

Virat Kohli Retirement: বিরাট বীরগাথার শেষ অধ্যায়, ‘জো জিতা ওহি সিকান্দর’

বার্বাডোজ: বিশ্বকাপের আগে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে বিরাট কোহলির গড় ছিল ৫০-এর উপরে। কিন্তু বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে নতুন দায়িত্ব, প্রথম থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে হবে, বাংলাদেশ ম্যাচ ছাড়া খুব একটা সফলও হননি। ফাইনালের আগের দিন পর্যন্ত চলছিল সমালোচনা, ‘ওপেনার বিরাটকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, তিন নম্বরে খেলানো হোক’। শেষ বার ভরসা রেখেছিলেন রোহিত, আর তাতেই রূপকথা লিখলেন কোহলি। পাওয়ারপ্লেতে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ৫৯ বলে ৭৬ রান। শুরু থেকে ধরে খেলা, তারপর বড় শট। ঠিক যেন ২০১১-র বিশ্বকাপের ধোনি, ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

২০১০ সালে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টি২০তে অভিষেক। তার পরে টানা ১৫ বছর আন্তর্জাতিক টি২০তে চলেছে বিরাট রাজত্ব। টি২০ ক্রিকেট মানে বড় বড় শট, ছক্কার হিসাব। বিরাটের কাছে ক্রিকেটের ব্যাকরণ গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাকরণ মেনেই ২০ ওভারের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন বিরাট। তিন নম্বরে নেমে কয়েকটা চার-ছয় মারা নয়, ইনিংসটাকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে ফিনিশ করা। ধোনি টি২০ থেকে অবসর নেওয়ার পরে ফিনিশারের দায়িত্ব যেন কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বিরাট, যদিও ফিনিশার বিরাটকে নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না।

২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১০টি আইসিসি টুর্নামেন্টের মধ্যে ৯টি ফাইনাল এবং সেমিফাইনাল খেলেছেন বিরাট। একাধিক নকআউট ম্যাচে ভারতের কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কোহলি, কিন্তু স্মৃতি বড় ক্ষণস্থায়ী, ট্র্যাজিক হিরোদের কে-ই বা কবে মনে রেখেছে! ছ’টি টি২০ বিশ্বকাপ খেলে দু’টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান স্কোরার। এই তো গত টি২০ বিশ্বকাপে একার কাঁধে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন কোহলি, সেমিফাইনালে বোলারদের ব্যর্থতায় হার মানতে হয়েছিল। অধিনায়ক হিসাবে বিশ্বকাপটা জিততে পারলে হয়তো ধোনি আর রোহিতের মাঝে তাঁর নাম আসত। অধিনায়ক হিসাবে ভাল ফল করেও কোনও ট্রফি জেতেননি, সেই আক্ষেপ হয়তো সারাজীবন থাকবে। কিন্তু গ্ল্যাডিয়েটররা তো সব সময় জেতে না। টি২০ বিশ্বকাপে ১৫ অর্ধ শতরান-সহ মোট ১২৯২ রান করেছেন কোহলি, যার ধারেকাছেও কেউ নেই।

বিরাট রূপকথার অবসান।
বিরাট রূপকথার অবসান।

কোহলি শৌখিন নন, বাইশ গজের এক গ্ল্যাডিয়েটর। যিনি জেতার জন্যই খেলেন। আবেগকে কখনওই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি কোহলি, তাই তো বিশ্বকাপ জিতে চোখের জল লুকোতে মাথা গোঁজেন রোহিতের কাঁধে। সত্যিই তো ১৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে রাজত্ব করেছে শুধু এই ট্রফিটার জন্যই। ধোনির অধিনায়কত্বে চাম্পিয়ান্স ট্রফি এবং ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জিতেছল ভারত, কিন্তু টি২০ বিশ্বকাপ কখনও জিততে পারেননি বিরাট।

ঠিক ১০ বছর আগে ধোনির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ৫৮ বলে ৭৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন বিরাট। কিন্তু দলে বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতা ৪ উইকেটে মাত্র ১৩০ রান করেছিল ভারত। সে বার বিশ্বকাপে ৩১৯ রান করে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়ার হয়েছিলেন বিরাট। কিন্তু ট্রফি পাননি। ওই যে স্মৃতি বড় ক্ষণস্থায়ী, ‘জো জিতা ওহি সিকান্দর’। তাই তো মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ জিতে আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসর নিলেন কোহলি। এই বয়সে চূড়ান্ত ফর্মে থেকে, এরকম ফিট ভারতের কেউ অবসর নিয়েছেন বলে মনে পড়ছে না। আসলে বিরাট কোহলি তো গ্রীক বীর আলেকজান্ডার! ২০২২ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করা যেই কিংবদন্তীকে বোর্ড খরচের খাতায় ফেলেই দিয়েছিল, দীর্ঘ দিন পরে হঠাৎ বিশ্বকাপে ফিরে- এলেন, দেখলেন, জয় করলেন… ১৫ বছর ধরে যে বীরগাথা তিনি লিখছিলেন, তার যেন মধুর সমাপ্তি হল।