Bengal BJP: সভাপতি পদ থেকে সরছেন সুকান্ত? মন্তব্যে শুরু জল্পনা…২৪ রাজ্যে তুমুল সাংগঠনিক রদবদল নাড্ডার, এবার কি বাংলা?

কলকাতা: নিচুতলার ময়নাতদন্তে উঠে আসছে লোকসভা ভোটে বঙ্গ বিজেপির ভরাডুবির একাধিক কারণ। এবার তাই লোকসভা ভোটে হতাশাজনক ফলের জেরে সাংগঠনিক স্তরে বড়সড় রদবদল করতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি। বিজেপি সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে হতাশাজনক ফলের জেরে জেলাস্তরে বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের পথে হাঁটতে চলেছে তারা। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো শীঘ্রই রাজ্য বিজেপিতেও বেশ কিছু সাংগঠনিক পদে রদবদল করা হবে। পুজোর আগেই বদল হতে পারে প্রায় ১৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। এমনই খবর গেরুয়া শিবির সূত্রের।

এদিকে রাজ‌্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজের সভাপতি পদ বদলের ক্ষেত্রেও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তবে, মূলত জেলা সংগঠনে ব‌্যাপক রদবদল করে জেলা থেকে মণ্ডল স্তর ঢেলে সাজানো হবে বলেই জানা গিয়েছে। চব্বিশের লোকসভা ভোটে যেখানে যেখানে খারাপ ফল হয়েছে সেখানকার অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করা হবে। একইসঙ্গে তিনশোর বেশি মণ্ডল সভাপতিও বদল করা হতে পারে। এছাড়া, সিংহভাগ বুথ কমিটির খোলনলচেও ঢেলে সাজানো হবে।

সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য একটি মন্তব্য করেছেন সুকান্ত৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের দলের নীতিই হচ্ছে এক ব্যক্তি এক পদ। সেক্ষেত্রে আমি যেহেতু মন্ত্রী হয়েছি তাই আমাকেও হয়তো সরে যেতে হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের দলের যা কাঠামো সাংগঠনিক স্তরে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রথমে উপরের স্তর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত পরিবর্তন হয়।’’

তবে সাংগঠনিক স্তরে রদবদল প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুকান্ত মজুমদার।‌ তবে রাজ্য বিজেপিতে সাংগঠনিক স্তরে রদবদল হলে তা যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই হবে বলে রাজ্য বিজেপির এক নেতা দাবি করেন। তবে সাংগঠনিক বিভিন্ন স্তরে রাজ্য বিজেপিতে রদবদল যে হচ্ছেই তা বিজেপিরই একটি সূত্র দাবি করেছে।

ক’দিন আগেই সল্টলেক পার্টি অফিসে ভোট পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন রাজ‌্য বিজেপি নেতৃত্ব। সেখানেই ঠিক হয়েছিল, একেবারে জেলা থেকে রিপোর্ট নেওয়া হবে। সেই মতো বিভিন্ন জেলায় পর্যালোচনা বৈঠক চলছে। মণ্ডল সভাপতি, জেলা ও জোন ইনচার্জ, বিধানসভা ইনচার্জদের নিয়ে এই বৈঠক হচ্ছে। শীঘ্রই নিচুতলার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা পড়বে রাজ‌্য কমিটির কাছে। তারপর সেই রিপোর্ট ঘসামাজা করে রাজ‌্য কমিটি পাঠাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে।

আরও পড়ুন: রথযাত্রা ঘিরে সতর্কতা, সিভিল ড্রেসে থাকবে পুলিশ…গ্যাংস্টার থেকে গণপিটুনি সব নিয়েই গুরুতর আলোচনা

কিন্তু কেন লোকসভা ভোটে এই হতাশাজনক ফলাফল? কেন নির্দিষ্ট লক্ষ‌্যমাত্রায় পৌঁছনো গেল না? উনিশের প্রাপ্ত ১৮টা আসন কেনই বা নেমে এল ১২তে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সংগঠনের হাল বুঝতে এখনও পর্যন্ত যে ক’টি পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে,  সেগুলির থেকে নিচুতলার নেতা—কর্মীদের কাছ থেকে যে যে বিষয়গুলি উঠে আসছে তা হল 1) অনেক পুরনো কার্যকর্তাকে ভোটের কাজে যুক্ত করা হয়নি। 2,) বুথ সংগঠন একেবারেই ঢিলেঢালা_ 3,,) বুথ নিয়ে ভুল রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। প্রায় সর্বত্রই বলা হয়েছিল ভাল ফল হবে। সংগঠন মজবুত। কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল না। 4) বাড়ি বাড়ি প্রচারেই খামতি ছিল বিজেপি সমর্থকদের। ভোটারদের কাছে সেভাবে কেউ যায়নি। জেলা সভাপতিদের সঙ্গে দলের প্রার্থীদেরই সমন্বয়ের অভাব ছিল অধিকাংশ লোকসভা কেন্দ্রেই। 6) কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘনঘন বৈঠক, বড়বড় সভা করতে গিয়ে জনসংযোগে ঘাটতি হয়েছিল। পাড়ায় পাড়ায় সেভাবে ভোটারদের কাছে যেতেই পারেনি দলের কর্মীরা।

এইসব কারণগুলি নিয়েই চর্চা চলছে দলের অন্দরে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে যে আগামী দু—তিন মাসের মধ্যে কোন কোন জেলা সভাপতির উপর খাঁড়া নামতে চলেছে, কার কার পদ যেতে পারে।

হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বর্ধমান—সহ একাধিক জেলায় সাংগঠনিক রদবদল অর্থাৎ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদলের পথেই হাঁটতে চলেছে গেরুয়া শিবির বলে খবর। হাওড়া জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রেই আশানুরূপ ফল হয়নি। হুগলি আসনটি হাতছাড়া হয়েছে। আরামবাগকে পজেটিভ সিট ধরা হলেও সেখানে হার হয়েছে। আবার বর্ধমান—দুর্গাপুর আসন হাতছাড়া হয়েছে। আসানসোল পজেটিভ হলেও সেখানে হার হয়েছে। বর্ধমান জেলায় দলের কোন্দলও রয়েছে। কাজেই বর্ধমান জেলায় সংগঠনের খোলনলচে বদল করা হবে বলে খবর।

আরও পড়ুন: সারদা মামলায় নলিনী চিদম্বরমের বিরুদ্ধে চার্জশিট, ইডি-কে কড়া ভর্ৎসনা বিচারকের, কিন্তু কেন?

দক্ষিণ ২৪পরগনায় অত‌্যন্ত খারাপ ফল হয়েছে, তার উপর গোষ্ঠীকোন্দলের খবর রয়েছে। সেখানেও একাধিক সাংগঠিক জেলায় রদবদল হতে চলেছে। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা কমিটিতেও রদবদলের প্রবল সম্ভাবনা। বাঁকুড়া আসন হাতছাড়া হয়েছে। সেখানে দলের মধ্যে কোন্দলও চরমে উঠেছিল ভোটের আগে। আবার সেই জেলারই বিষ্ণুপুর আসনে খুব কম মার্জিনে জিতেছে বিজেপি। ফলে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা ও বীরভূম ও বোলপুর সাংগঠনিক জেলাতেও সাংগঠনক রদবদল করতে চায় রাজ্য বিজেপি।

কারণ, ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখেই একেবারে জেলাস্তরে সংগঠনের খোলনলচে বদলানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে রাজ‌্য বিজেপির তরফে। সেক্ষেত্রে বঙ্গ বিজেপির ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ১৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করা হবে বলেই সূত্রের খবর। লোকসভা ভোটে জয়ী প্রার্থীদের পাশাপাশি পরাজিত প্রার্থীদেরও সংগঠনের কাজে লাগানো হবে বলেও জানান বঙ্গ পদ্ম সেনাপতি সুকান্ত মজুমদার।‌ এর পাশাপাশি তৈরি হয়েছে বঙ্গ বিজেপির সভাপতির রদবদলের সম্ভাবনা৷

শুক্রবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা নতুন করে সংগঠনের দায়িত্ব বণ্টন করেছেন ২৪ রাজ্যে। বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা হেডকোয়ার্টার ইনচার্জ অরুণ সিংহের সই করা যে তালিকা বার করেছে বিজেপি, তাতে ২৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। আন্দামান নিকোবর, অরুণাচল প্রদেশ, বিহার, ছত্তীসগঢ়, দমন-দিউ, গোয়া, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু এবং কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, পুদুচেরি, পাঞ্জাব, সিকিম, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির জন্য পর্যবেক্ষক এবং সহ-পর্যবেক্ষকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বেশ কয়েক জনকে সাংগঠনিক কাজে বড় দায়িত্বে উঠিয়ে এনেছে বিজেপি।

যেমন, সম্বিত পাত্র। ওড়িশায় ভাল ফলের পর তাঁকে উত্তরাখণ্ডের সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ওড়িশায় পর্যবেক্ষক এবং সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজয়পাল সিংহ তোমর এবং সুশ্রীলতা উসেন্দিকে। বিজয়পাল উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। আগেও তিনি ওড়িশার দায়িত্ব সামলেছেন। বিহারে বিজেপির পর্যবেক্ষক বিনোদ তাওড়ে, সহ-পর্যবেক্ষক করা হয়েছে সাংসদ দীপক প্রকাশকে। গোয়া এবং জম্মু-কাশ্মীরে পর্যবেক্ষক হয়েছেন আশিস সুদ। হরিয়ানায় পর্যবেক্ষক সতীশ পুনিয়া এবং সহ-পর্যবেক্ষক সুরেন্দ্র সিংহ নগর, হিমাচল প্রদেশে পর্যবেক্ষক শ্রীকান্ত শর্মা, সহ-পর্যবেক্ষক সঞ্জয় টন্ডন। এ ছাড়া কর্নাটকের জন্য বিজেপি পর্যবেক্ষক এবং সহ-পর্যবেক্ষক করেছে সাংসদ রাধামোহন দাস আগরওয়াল এবং সুধাকর রেড্ডিকে। ঝাড়খণ্ডে পর্যবেক্ষক হয়েছেন সাংসদ লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ী। তবে বাংলার কোনও নেতা বা নেত্রীর নাম এই তালিকায় পাওয়া যায়নি৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি পশ্চিমবঙ্গ নিয়েও৷