নয়াদিল্লি: ২০২০ সালের পর থেকে এই নিয়ে পঞ্চম বছর৷ ভারত থেকে মানস সরোবর তথা কৈলাস পর্বত যাওয়ার দু’টি বৈধ রুট একক সিদ্ধান্তে বন্ধ করে রাখল চিন৷ অন্যদিকে, নেপালের মধ্যে দিয়ে মানস সরোবর যাওয়ার যে একটি মাত্র রুট চিনের বদান্যতায় খোলা রয়েছে, সেখান দিয়ে পুণ্যার্থীদের মানস তীর্থ ভ্রমণ কার্যত অসম্ভব৷ ঠিক কী ঘটছে তাহলে?
সম্প্রতি, কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা সম্পর্কে বিদেশমন্ত্রকের কাছে দাখিল করা একটি আরটিআই-এর উত্তর পাওয়া গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে৷ সেখানে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে ভারত-চিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দু’টি চুক্তির অণুলিপিও প্রকাশ করেছে সরকার৷
সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চুক্তিটি হয়েছিল ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে৷ সেখানে লেখা হয়েছিল, মানস যাত্রার জন্য লিপুলেখ পাসের রুট খুলে দেওয়া হচ্ছে৷ কৈলাস মানসরোবর যাত্রার দ্বিতীয় রুট নাথু লা পাসের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করার জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪-সালে ইয়ের সাথে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দ্বিতীয় চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিলেন।
কিন্তু, কোভিডের দোহাই দিয়ে ২০২০ সাল থেকে ওই দু’টি রুটই একক সিদ্ধান্তে বন্ধ করে রেখেছে চিন৷ যদিও ভারতের সঙ্গে হওয়া দুই চুক্তিতেই লেখা রয়েছে, কোনও দেশই একক সিদ্ধান্তে এই রুট বন্ধ করতে পারবে না, প্রতি পাঁচ বছরে এই চুক্তির মেয়াদবৃদ্ধি হতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কোনও মতানৈক্য তৈরি হয়৷ তাহলে কি মানস যাত্রা নিয়ে সরাসরি চুক্তির খেলাপ করছে চিন?
কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই দুই চুক্তির কোনও ধারধারছে না চিন৷ উপরন্তু, নেপাল হয়ে মানস যাওয়ার রাস্তার ক্ষেত্রেও ভারতীয়দের উপর চাপানো হচ্ছে অলঙ্খনীয় সব বিধি এবং বিপুল খরচের ভার, যা সাধারণ পুণ্যার্থীদের ক্ষমতার অনেক ঊর্ধ্বে৷
এবছর যেমন, নেপালের নেপালগঞ্জ থেকে বিমানে ২৭,০০০ ফুট উচ্চতা থেকে কৈলাস পর্বত এবং মানস সরোবরের দর্শন করতে পেরেছেন ৩৮ জন ভারতীয়৷ মাটিতে নামার কোনও সুযোগ তাঁরা পাননি৷
আরও পড়ুন: উপনির্বাচনে ভোট বাড়াল বাম-কংগ্রেস! কিছুটা হলেও হল মুখরক্ষা, কী বলছে পরিসংখ্যান?
চিনের এই গাজোয়ারির জেরে বাধ্য হয়ে উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের ধারচুলায় লিপুলেখের শিখরে একটি জায়গা তৈরি করা হয়েছে যেখান থেকে ভারতীয়রা শিব মাহাত্ম্য যুক্ত কৈলাস পর্বতের দর্শন করতে পারবেন৷ এখান থেকে কৈলাস পর্বতের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার৷ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে এই দর্শন পর্ব৷
দর্শনার্থীদের লিপুলেখ পর্যন্ত গাড়িতে গিয়ে ভ্যানটেজ পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছতে ৮০০ মিটার ট্রেক করতে হবে৷
তবে বড় প্রশ্ন হল, চিন কি ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে হিন্দুদের পবিত্রতম স্থান কৈলাস ও মানস সরোবরে ভারতীয়দের প্রবেশে একতরফাভাবে বাধা দিতে পারে?
যাঁরা কৈলাস পর্বতে গেছেন তাঁরা একমত হবেন যে, পবিত্র পর্বত এবং মানস সরোবরের পরিক্রমা করার চেয়ে উন্নত ও মনোরম আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা আর নেই এবং ভারতের উচিত অবশ্যই এবিষয়ে দৃঢ় হস্তক্ষেপ করা।