পর্যটক টানতে খার্চি মেলা

Kharchi Puja Festival: পর্যটক টানতে খার্চি মেলার প্রচারে সচেষ্ট ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী, কী এই মেলা? অবাক হবেন শুনলে!

আগরতলা: ভারতবর্ষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরা সারা বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘ প্রাচীন। খার্চি উৎসবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সচেষ্ট ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা৷ তাঁর কথায়, “ভারতবর্ষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরা সারা বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘ প্রাচীন। নতুন প্রজন্মকে খার্চি উৎসব ও চতুর্দশ দেবতা বাড়ির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত করতে হবে। এসবের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে অবহিত করতে না পারলে এই উৎসবের ঐতিহ্য অধরা থাকবে।”

ত্রিপুরার খয়েরপুরের পুরাতন আগরতলার চতুর্দশ দেবতাবাড়ি চত্বরে ৭ দিন ব্যাপী রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।          প্রত্যেক বছরের মতো এবারও হাওড়া নদীর পুণ্যস্নানঘাটে চতুর্দশ দেবতাকে অবগাহনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী জাতি জনজাতি মানুষের মিলন মেলা খার্চি উৎসব। এবার ২৬৫ বছরে পদার্পন করল এই খার্চি পুজো। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, খার্চি পুজোর ফাইল আমার কাছে আসলে লক্ষ্য করি উদ্বোধনের দিনটি রবিবার ছুটির দিন। সাধারণত এধরণের সরকারি ছুটি সবাই আশা করে থাকেন। তাই অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলে খার্চি উৎসবের সমাপ্তির দিন অর্থাৎ ২০ জুলাই সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করি যাতে এই উৎসবে মানুষ আরও বেশি আনন্দের সঙ্গে সামিল হতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই উৎসবে ফের একবার অংশ নিতে পেরে খুবই আনন্দিত বোধ করছি। এখানে আবার আসতে পেরে এই এলাকার বিধায়ক তথা উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী ও তাঁর সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাই।”

“অনুষ্ঠানে ডাঃ সাহা বলেন, আমাদের ভারতবর্ষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরা অনেক প্রাচীন। সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো সভ্যতা – যা সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ পুরনো সংস্কৃতি। এখানে খার্চি পুজোও অনুরূপ একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এর একটা সুবিশাল ইতিহাস রয়েছে। এখানে ১৪ জন দেবদেবীকে আমরা পূজা করি। স্মৃতিচারণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছোট বেলায় আমরাও খার্চি পুজোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম। এখনকার সময়ের মতো তখন খার্চি পুজোয় আসা এত সহজ ছিল না। তখন নদীর এত জলস্রোত ছিল যে পার হওয়া আতঙ্কের ব্যাপার ছিল। নৌকায় চড়ে নদী পার হতে হতো। তখন অনেক দুর্ঘটনাও ঘটতো। পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে মনে হতো যে প্রকৃত অর্থে চৌদ্দ দেবতার আশীর্বাদে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পেরেছি। ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরে যাওয়াও তখন খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। গাড়ি গেলেও সেই গাড়ি নৌকায় তুলে পার হতে হত।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য ব্যাপক উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে চলছে। উন্নয়ন এখন এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে যেটা ভাবা যায় না। উল্লেখ্য, খার্চি পুজো ও মেলার এবারের ভাবনা – পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজায়ন। ডাঃ সাহা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় এধরণের চিন্তাভাবনা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিছুদিন আগে বন দপ্তরের উদ্যোগে সারা রাজ্যে ৫ মিনিটে ৫ লক্ষ চারা গাছ রোপণ করা হয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে এধরণের কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল। ২ লাখ থেকে এক লাফে এবার ৫ লাখে পৌঁছে গিয়েছে। প্রকৃতিকে নিয়েই আমাদের থাকতে হবে। প্রকৃতি ছাড়া আমরা কেউ বাঁচবো না। আমাদের মহারাজারাও প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করতেন, ভালোবাসতেন এবং পূজা করতেন। তাই আমরাও সেই দিশায় এগিয়ে চলছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সেই দিশায় চলেন। আমরা জানি এখানে চৌদ্দ দেবতার মধ্যে তিনজন দেবতাকে নিয়মিত পূজা করা হয়। আর খার্চি পুজো উপলক্ষে বাকি দেবদেবীদেরও ৭দিন সমানে পুজো করা হয়। এসব ইতিহাস আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অবগত করতে হবে। এখানে কোন পূর্ণবয়ব মূর্তিকে পুজো করা হয় না। শুধু অষ্টধাতুর তৈরি দেবদেবীর মস্তক পূজিত হয়। আর এই পরম্পরা তখনই রক্ষা করতে পারব যদি পরবর্তী প্রজন্মকে এসবের পুরো ইতিহাস সম্পর্কে অবগত করতে পারি। এধরণের মেলা, এধরণের সংস্কৃতি ও পরম্পরার মাধ্যমে জাতি জনজাতির মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ববোধের মেল বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে বলেও গুরুত্ব তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
৭ দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই খার্চি উৎসব ও প্রদর্শনী চলবে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত। মেলা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, পুলিশ হেল্প ডেস্ক সহ নিরাপত্তার অভূতপূর্ব বন্দোবস্ত। সপ্তাহ ব্যাপী এই উৎসবে কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম হবে বলে মনে করছেন আয়োজক কমিটি। মেলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রচুর স্টল খোলা হয়েছে। উদ্বোধনী পর্বের পর মন্দির ও স্টল ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।