নয়াদিল্লি: সোমবার থেকে শুরু হয়েছে লোকসভার বাদল অধিবেশন। আর রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এবারের অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধীদের হাতে রয়েছে দু’টি অস্ত্র৷ এক, নিট কেলেঙ্কারি এবং দুই, কানওয়াড় যাত্রা সংক্রান্ত বিতর্ক৷ বাদল অধিবেশন শুরুর দিনেই অবশ্য কানওয়াড় যাত্রা সংক্রান্ত উত্তরপ্রদেশ সরকারের নির্দেশিকার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত৷ এখন প্রশ্ন, বিতর্কটা ঠিক কী বিষয়ে?
পড়ে গিয়েছে শ্রাবণ মাস৷ এই মাসেই উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং বিহারে অনুষ্ঠিত হয় কানওয়াড় যাত্রা৷ দীর্ঘ পদযাত্রা শেষে শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালেন তাঁর ভক্তেরা৷ রাজ্যজুড়ে পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে করা হয় নানা ব্যবস্থা৷
তবে, চলতি বছরে এই কানওয়াড় যাত্রা চলাকালীন বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারের একটি বিশেষ নির্দেশিকা নিয়ে সূত্রপাত হয় বিতর্কের৷ যার মধ্যে ছিল যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশও৷ সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, কানওয়াড় যাত্রার পথের দু’পাশে যে খাবারের দোকান দেওয়া হয়, সেই দোকানের নামের পাশে লিখে রাখতে হবে দোকানদারের সম্পূর্ণ নামও৷
এহেন নির্দেশিকার পর পরই বিতর্কের ঝড় ওঠে৷ এমন নির্দেশিকাকে ‘সাম্প্রদায়িক এবং বৈষম্যমূলক’ বলে সরব হয় বিরোধীরা৷ তাদের দাবি, এক্ষেত্রে দলিত এবং সংখ্যালঘুদেরই নিশানা করতে চেয়েছে এই সমস্ত রাজ্যের শাসকদল৷ এই নির্দেশিকা দলিত ও সংখ্যালঘু হিসাবে জোর করে তাঁদের (দোকানদারদের) পরিচয় প্রকাশ করার উদ্দেশ্যেই জারি করা হয়েছে৷ যাতে তাঁরা সামাজিক বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন৷
এই ইস্যুতে বিরোধীদের ক্যাম্পে নাম লিখিয়েছে বিজেপির শরিক দল আরএলডি-ও৷ যদিও বিজেপি সাফাই দিয়েছে, পুণ্যার্থীদের ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই এমন নির্দেশিকা জারি করা সঙ্গত হয়েছে৷
সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রাক্কালে রবিবার আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকেও, কংগ্রেস, ডিএমকে, এসপি এবং এএপি সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল এই নির্দেশের তুমুল সমালোচনা করে এবং স্পষ্ট করে দেয় যে, তারা উভয়কক্ষেই বিষয়টি উত্থাপন করবে। তারা সরকারের কাছে এ বিষয়ে সংসদে আলোচনার অনুমতি দেওয়ার দাবিও জানাবে বলে জানায়।
আরও পড়ুন: উঠল ৫৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা! আরএসএস-এর কাজে যোগ দিতে সরকারি কর্মীদের আর রইল না বাধা
ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের এই বিতর্কিত নির্দেশিকার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে একটি মানবাধিকার সংগঠন৷ ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস’ – এর আবেদনেই বিষয়টি শীর্ষ আদালতে পৌঁছয়। মামলার শুনানি চলাকালীন প্রবীণ আইনজীবী সি ইউ সিং বলেন, “এটি একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি৷ পুলিশ কর্তৃপক্ষ একটি বিভাজন তৈরি করার জন্য এই কাজ করেছে৷ তারা চাইছে সামাজিকভাবে অনগ্রসর এবং সংখ্যালঘুরা যাতে অর্থনৈতিক বিভাজনের সম্মুখীন হয়৷”
আবেদনকারীদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে, অন্য একজন আইনজীবী অভিষেক সিংভি বলেন, “আমি যদি আমার নাম না রাখি, তা-ও আমি বাদ পড়ব, যদি নাম রাখি তাও বাদ পড়ব।”
সব শুনে এদিন যোগী সরকারের দোকানের নামের পাশে দোকানির সম্পূর্ণ নাম লেখার নির্দেশিকার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে, দোকানে কী ধরনের খাবার বিক্রি হবে, তার বিস্তারিত তথ্য নামের ব্যানারে অবশ্যই উল্লেখ করার নির্দেশ বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত৷