ত্রিপুরা মহকুমার উন্নতিকল্পে বিপুল বরাদ্দ

Tripura: গন্ডাতুইসা মহকুমার সার্বিক উন্নয়নে ২৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ, অশান্ত বরদাস্ত করব না, ঘোষণা মাণিক সাহার 

আগরতলা: গন্ডাতুইসায় সাম্প্রতিক অনভিপ্রেত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে রয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সব রকম সাহায্য দেওয়া হবে।

এই অনভিপ্রেত ঘটনায় নিহত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের পরিবারকে মোট ১০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করার কথা ঘোষণা করা হয়৷  এছাড়াও আক্রান্ত পরিবারগুলিকে মোট ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন:কেরলে ভয়ঙ্কর রোড অ্যাক্সিডেন্ট, মৃত বিধায়কের ছেলে

এর পাশাপাশি ত্রিপুরা সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গন্ডাতুইসা মহকুমার সার্বিক উন্নয়নে ২৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অশান্তি সৃষ্টিকারী এবং আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের কোনও অবস্থায় রেহাই দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন:‘‘জলপ্রপাতের কাছে ধস নামবে৷ সব ধ্বংস হয়ে যাবে৷’’ ম্যাগাজিনের গল্পই বাস্তব হয়ে ফিরল বিপর্যস্ত কেরলে

ধলাই জেলার গন্ডাতুইসা মহকুমায় উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করে এই আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। এদিন গন্ডাতুইসা সফরে গিয়ে নারায়ণপুর বাজার, ৩৩ কেভি এলাকা, উদ্বাস্তু শিবির সহ একাধিক জায়গা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।

সেই সঙ্গে মৃত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের জগবন্ধু পাড়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা, মা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলেন। এই অনভিপ্রেত ঘটনাটি নিয়ে মৃত যুবকের পরিজনদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

ত্রিপুরার রাজ্য সরকার সবসময় তাঁদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরবর্তী সময়ে মানিক সাহা ডাকবাংলোয় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এবং গন্ডাতুইসা মহকুমার সামগ্রিক উন্নয়নে একগুচ্ছ ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জুলাই আনন্দ মেলাকে কেন্দ্র করে একটি অনভিপ্রেত ঘটনায় পরমেশ্বররিয়াং নামে এক যুবক আহত হন। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাঁকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷  পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুলাই, তাঁর মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময় এই ঘটনাকে ঘিরে রাতের বেলায় অনেকের বাড়িঘর আক্রান্ত হয়। উদ্বাস্তু হতে হয় অনেক পরিবারকে।

তাঁদের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়। মানিক সাহা জানিয়েছেন, পরমেশ্বরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। গন্ডাতুইসার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন সার্বিক নজর রেখেছিল। এই নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তা করা যায় সেই নিয়ে প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘৩৩ কেভি ও ৩০ কার্ড এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তা শিবিরের বন্দোবস্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হবে।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এম আর দাস পাড়া ও রামনগরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মৃত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের পরিবারকে আগে ৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। পরে আরও চার লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

যেসব পরিবারগুলির ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এমন ১০১টি পরিবারকে আগে ৯৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের আরও ২ লাখ ৫ হাজার টাকা সহ সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত আরও ১৩টি পরিবারকে আগে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে এমন ৩১টি পরিবারের মধ্যে ১৮টি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

তাঁদের আরও ২৫ হাজার টাকা সহ মোট ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া ৫টি পরিবারকে আগেই ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে জানানো গিয়েছে, তাঁদের আরও ২০ হাজার টাকা সহ মোট ৪০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

এখন আরও ১৫ হাজার টাকা সহ মোট ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত আরও ৩টি পরিবারকে এর আগে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তাদের পরে আরও টাকা দেওয়া হবে। আরও ২টি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে পরিবার পিছু মোট ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়।

সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১৪৫টি পরিবারকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে আরও ২ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে মোট ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী জানান, গন্ডাতুইসার নারায়ণপুর মার্কেটের (৩০টি মার্কেট স্টল) উন্নয়নে ১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। দশরাম চৌধুরী সুপার মার্কেটের পরিকাঠামো উন্নয়নে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

গন্ডাতুইসা বাজার এলাকায় পেভার ব্লক ইন্টারনাল রোড, স্ট্রিট লাইট, পয়:প্রণালী ব্যবস্থা সহ ইত্যাদি পরিকাঠামো উন্নয়নে মোট ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

গন্ডাতুইসা – আমবাসা সড়কের উন্নয়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গন্ডাতুইসা মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। হাতিমাথা – দলপতি সড়ক (৯ কিমি) উন্নয়নে বরাদ্দ করা হয়েছে ১২ কোটি টাকা।

রঞ্জিতপাড়া থেকে বুধুজয় পাড়া (৫ কিমি) সড়ক উন্নয়নে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। জমাতিয়া পাড়া সড়কের (৩ কিমি) উন্নয়নে ৭.৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গন্ডাতুইসা দ্বাদশ স্কুলে সিন্থেটিক টার্ফ গ্রাউন্ড তৈরি করতে ৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

ডম্বুর জলাশয়ে মৎস্য ক্ষেত্রে বিকাশে ৫ কোটি টাকা এবং ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ড্রাগস রিহ্যাব সেন্টার গড়ে তুলতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও জানা গিয়েছে, গন্ডাতুইসায় স্কুলের পরিকাঠামো (স্মার্ট ক্লাস, ফার্নিচার ইত্যাদি) উন্নয়নে ৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। আম উৎপাদনকারীদের জন্য ১৫ মেট্রিক টন বিশিষ্ট সোলার পাওয়ার মাইক্রো কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

এছাড়াও মাছ সংরক্ষনের জন্য ৩ কোটি টাকা খরচ করে কোল্ড স্টোরেজ ও কোল্ড চেম্বার নির্মাণ করা হবে। খেলার উন্নতিকল্পে ইনডোর ব্যাডমিন্টন কোর্ট নির্মানে ২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

১০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উন্নয়নে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এছাড়া গন্ডাতুইসা বাজার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা চলছে৷ নিরাপত্তা বিষয়ক জোরদার করতে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে, বলে জানানো হয়েছে।

গন্ডাতুইসার উন্নয়নে মোট ২৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা আর্থিক বরাদ্দ করা হয়েছে। পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে মোট ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এই দুই খাতে ব্যয় হবে মোট ২৪২ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্য ও দেশের উন্নতির জন্য শান্তির দরকার৷  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস ও সবকা বিশ্বাসের মন্ত্র নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন।

কোন অবস্থায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি, অশান্তি সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়া হবে না। আইন আইনের পথে চলবে। সবাইকে মিলে ‘এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।