বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে একটি যুগের অবসান৷

Buddhadeb Bhattacharjee: দু কামরার ফ্ল্যাট, অ্যাম্বাসাডর আর ধুতি- পাঞ্জাবি৷ বুদ্ধদেব বরাবরই ব্যতিক্রমী

কলকাতা: দু কামরার ছোট্ট ফ্লাট৷ নিজে যে ঘরে থাকতেন, সেটি আরও ছোট৷ মেঝে ছিল স্যাঁতস্যাঁতে৷ চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে সিওপিডি-র সমস্যা থাকায় ওই স্যাঁতস্যাঁতে ঘর তাঁর জন্য ঠিক নয়৷

যদিও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিকিৎসকদের সেই পরামর্শ কানে তোলেননি৷ আজীবন পাম অ্যাভিনিউয়ের যে দু কামরার ফ্ল্যাটে কাটিয়েছেন, সেই ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র যেতে রাজি হননি তিনি৷ শুধু শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রেই নয়, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবেও পাম অ্যাভিনিউয়ের ওই ফ্ল্যাট ছাড়তে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বুদ্ধদেবকে৷ তখনও রাজি হননি তিনি৷

আরও পড়ুন: বুদ্ধদেবের প্রয়াণে আজ রাজ্য সরকারি ছুটি ঘোষণা মমতার, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায়

ধুতি-পাঞ্জাবি পরে রাজনীতি, সাদা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি চড়ে যাতায়াত, সাধারণ জীবনযাপন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে যেন সমর্থক হয়ে গিয়েছিল৷ রাজনীতিতে বরাবরের সৌজন্য বজায় রাখা কম কথার, প্রচার বিমুখ মানুষটি আজীবন নিজের এই নীতি বজায় রেখেছেন৷ বর্তমান বঙ্গ রাজনীতিতে যা বিরল৷ বুদ্ধদেবের প্রয়াণে তাই একটা যুগের অবসান হল, একথা বলাই যায়৷

বর্তমান বাম নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার অভিযোগ ওঠে৷ কিন্তু ২০১১-য় নিজের এবং দলের পরাজয়ের পর রাজনীতি থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব৷ যাদবপুর থেকে পরাজিত হওয়ার পর আর নির্বাচনী লড়াইয়ে নামেননি তিনি৷ অভি যদিও দলের প্রয়োজনে সবসময় সাড়া দিয়েছেন৷ অসুস্থ শরীরে ব্রিগেড সমাবেশে এসে গাড়িতে বসে থেকেছেন৷ নির্বাচন হোক বা দলের সমাবেশ, নিজে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন৷ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পার্ক সার্কাসে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির সঙ্গে একই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে অনুজ কংগ্রেস নেতাকে সাদরে বরণ করে নিয়েছিলেন৷

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পরে কখনও বুদ্ধদেবের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেননি কেউ৷ ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও সৌজন্যের অভাব আসেনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে৷ রাজ ভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও হাজির হয়েছিলেন তিনি৷ বুদ্ধদেব তাই ছিলেন বরাবরের ব্যতিক্রমী৷