কলকাতা: সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটেই শেষ হল বামেদের অভিভাবকের জীবনযাত্রা। তবে শুধু রাজনীতির ময়দানে নয়, তার ঊর্ধ্বেও ছিল তাঁর অবাধ আনাগানো। শিল্প-সাহিত্যের প্রতিও ছিল বুদ্ধদেবের অগাধ উৎসাহ। এ হেন মানুষের জীবনাবসানের পর সেই কথাগুলিই যেন বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের।
বুদ্ধদেবের প্রয়াণের কথা যেন বিশ্বাসই করতে পারেননি শিল্পী। এত বছর মাথার উপর ছাতা হয়ে যিনি ছিলেন, তাঁর না-থাকাটাই তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। শোক সামলে অতীত ছুঁয়ে দেখলেন স্বাগতালক্ষ্মী। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, “রাজনীতিবিদ হিসাবে তাঁর বিরাট সব কর্মকাণ্ডের কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রতি ওঁর ভালবাসা দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি। অত বড় মাপের একজন মানুষ কী সরলভাবে গানের খোঁজ করতেন। নতুন কোথায় কী গান করছি, জানতে চাইতেন।”
বাংলা রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ বুদ্ধদেবকে আগাগোড়াই ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেছেন স্বাগতালক্ষ্মী। সঙ্গীতযাপনের দীর্ঘ পথেও সান্নিধ্য পেয়েছেন তাঁর। স্মৃতির পাতা উল্টে প্রায় বছর ১৮ আগের কথা মনে করলেন গায়িকা। সাল ২০০৬। তখন সদ্য প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একলা গীতবিতান। স্বাগতালক্ষ্মীর সেই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তিনি। স্বাগতালক্ষ্মী বললেন, “তিনি একলা গীতবিতানটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন। বলেছিলেন অবিশ্বাস্য একটা কাজ করেছি। আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।”
আরও পড়ুন: তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে… ৩৪ বছর, লাল পতাকা আর কাস্তে-হাতুড়ির মাঝে আজ ‘তারা’
আরও পড়ুন: ‘হে চিরসারথি, তব রথচক্রে…’ ১৯৪৪-২০২৪ : সাদা পোশাকের মুকুটহীন সম্রাট…
শুধু সুসময়েই নয়, বিপদেও স্বাগতালক্ষ্মীর পাশে ছিলেন বুদ্ধদেব। গায়িকার সঙ্গীতগুরু মায়া সেন যখন প্রবল অসুস্থ, তখন তাঁর চিকিৎসরা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনিই। সেই আখ্যান শুনিয়েই গায়িকা বললেন, “এরকম কত রকম সাহায্যই যে উনি করেছেন, তা বলে শেষ করতে পারব না। ওর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। মনটা খুব খারাপ লাগছে। রবীন্দ্রনাথ চলে গিয়েছিলেন ২২ শ্রাবণ। উনিও ঠিক তাঁর মৃত্যুদিনটা পার করেই চলে গেলেন। খবর পেতাম, খুব ভুগছিলেন। উনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন।”