Tag Archives: Buddhadeb Bhattacharjee

Buddhadeb Bhattacharjee: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণ সভাও মুখরিত ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে, কী বললেন সুজন চক্রবর্তী?

কলকাতাঃ নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ২২ অগাস্ট প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা চলছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছিলেন এই স্মরণ সভায় যোগ দিতে। মঞ্চে বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম-সহ নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভূমিকা, তারও আগে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তাঁর কর্মকাণ্ড। এছাড়াও কবিতা, নাটক, সংস্কৃতি জগতে তাঁর বিচরণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরছিলেন বক্তারা। এরই সঙ্গে মাঝে-মধ্যেই উঠছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান।

আরজি কর-কাণ্ডে অলিগলি থেকে রাজপথ কাঁপাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। সিপিএমের পাশাপাশি গণ সংগঠনগুলিও তো রাস্তায় নেমে সরাসরি এই আন্দোলন করছে। একইরকম দাবি উঠল প্রাক্তন মুখ্যামন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভাতেও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আরজিকর কাণ্ডটা এত ভয়াবহ ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট বলছে তাঁরা তাঁদের কর্মজীবনে এই ধরণের ঘটনা বা এই ধরণের ব্যাখ্যা শোনেনি যা রাজ্য দিচ্ছে। তাছাড়া সর্বত্র ছাত্র, যুব, মহিলা, গ্রামের কৃষক কে না? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স প্রত্যেক কমিউনিটি। এমন কোনও অংশ নেই যারা এর প্রতিবাদে নামেনি।

আরও পড়ুনঃ ছবির চেয়েও বেশি সুন্দর! পাহাড়ের এই অচেনা গ্রাম পর্যটকদের কাছেও একেবারে নতুন, পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা ছিল। সেখানেও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। স্মরণসভায় আসার পথে, মাঝখানে, যাওয়ার পথে ‘জাস্টিস ফর আরজিকর’। একথাটা বারেবারে যেভাবে উঠছে। বোঝা যাচ্ছে মানুষ সহ্য করতে চাইছে না। সহ্য করতে পারছে না। যে ভয়াবহ অপরাধ মানুষের উপরে চলছে। চাপিয়ে দিচ্ছে। রাজ্য সরকার ধরা পড়ে যাচ্ছে। মানুষের কথাতে কিন্তু তা স্পষ্ট।”

স্মরণসভায় নিজের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “আজকে যখন আমরা তাঁকে স্মরণ করছি তখন হাজারো লাখো মানুষ রাত জাগছে গোটা দেশে। তারপর দেখলাম কত অমানবিক স্বার্থপর হলে তাঁরা সমস্ত শক্তি দিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার চেস্ট করছে। ওই নির্যাতিতার দেহ লোপাট করার চেষ্টা করেছিল তখন বুদ্ধদার যুব সংগঠনের ছেলেমেয়েরা গাড়ির সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁদের মলেস্ট হতে হয়েছিল। তাঁদের ম্যাল হ্যান্ডেল হতে হয়েছিল। আমরা মামলা করেছি। সেটা নিয়ে পুলিশ কিছু করছে। বরং, আমাদের ছাত্র যুবদের অপরাধী বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।”

UJJAL ROY

Buddhadeb Bhattacharjee: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভার আয়োজন সিপিএম-এর! জানিয়ে দিল দিনক্ষণ, স্থান

কলকাতাঃ আগামী ২২ অগাস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুধবার একথা জানিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। এক প্রেস বিবৃতিতে সেলিম জানান, “আগামী ২২ অগাস্ট বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টেয় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য প্রয়াত কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। স্মরণসভায় যোগ দেবেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। এই উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সংগ্রামী জীবন ও কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনীও করা হবে। অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তৃতা, আবৃত্তি, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হবে।”

আরও পড়ুনঃ আরজি কর কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়ের আজ পলিগ্রাফ টেস্ট! ফাঁস হবে বড় রহস‍্য?

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৮ অগাস্ট প্রয়াত হয়েছেন কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পরদিন কলকাতায় তাঁর মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড জনপ্লাবিত হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ শোকার্ত হৃদয়ে বহু জায়গা থেকে এসে শোকযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন, আমরা পার্টির পক্ষ থেকে তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ২২ আগস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের স্মরণসভাতেও তাঁদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই অনুষ্ঠান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনুরাগী সবার কাছে তাতে অংশ নেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে।”

যদিও ব্রিগেড ময়দানে এই কর্মসূচি করার দাবি জানিয়েছিলেন দলের একটা বড় অংশ। এই দাবি জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারও করা হয়েছিল। যদিও বর্ষার জন্য সেটা করা সম্ভব হয়নি বলেই দলীয় সূত্রে খবর। পরবর্তী সময়ে কলকাতা জেলা কমিটির দফতর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে এই কর্মসূচি করার কথা আলোচনা হয় কিন্তু সেই জায়গাটি এই কর্মসূচির জন্য অনেকটাই ছোট হতে পারে মনে করে শেষ পর্যন্ত নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কর্মসূচি করার কথা সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “অনেকেই চেয়েছিল ব্রিগেড ময়দানে স্মরণসভা হোক ৷ কিন্তু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রা যে পরিমাণ মানুষের ঢল নেমেছিল তার রেশ স্মরণসভাতেও পড়তে পারে ৷ একারণেই নেতাজি ইন্ডোরে ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷”

Bangla Video: বাম আমলে তৈরি ভেষজ সুতো রঙের কারখানার শ্রমিকদের মনে ‘বুদ্ধ’ আজও অমলিন

নদিয়া: তাঁতিদের কথা মাথায় রেখেই বাম আমলে ফুলিয়ায় তৈরি হয়েছিল সমবায় পরিচালিত ভেষজ সুতো রং করার কারখানা। সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের তাঁত শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরই বাংলার হস্তচালিত তাঁত শিল্পের জন্য রাজ্যের মধ্যে প্রথম ভেষজ উপায়ে সুতো রং করার কারখানা নিজের হাতে উদ্বোধন করেছিলেন নদিয়ার জেলার অন্তর্গত শান্তিপুরের ফুলিয়া অঞ্চলে।

তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে বাংলার তাঁত শ্রমিকদের জন্য এই অভিনব প্রচেষ্টাকে আজও সম্মান জানান নদিয়া জেলার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা। তবে কালের নিয়মে বুদ্ধবাবুর নামটি আজ মুছে গিয়েছে উদ্বোধনী ফলক থেকে। কিন্তু তাঁর উদ্যোগে তৈরি এই রং কারখানা তৎকালীন তাঁত শ্রমিকদের অনেকটাই আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করেছিল।

আর‌ও পড়ুন: গাড়ি চালকদের চোখ ঠিক রাখতে এগিয়ে এল সরকার

এছাড়াও তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের তাঁত শিল্পকে অন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছতে একাধিক উদ্যোগও নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, সেইসময় তাঁর এই কর্মকাণ্ডকে স্বচক্ষে দেখতে হাজির হয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত। তবে সেই কারখানা আজ ভগ্নপ্রায়, যদিও পরবর্তীকালে কারখানার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন রাজ্যের বর্তমান সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় করলেও সমস্যার তেমন কিছু সুরাহা হয়নি। তাই আক্ষেপের সুরে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, আজ‌ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখানকার মানুষের মনে রয়ে গিয়েছেন।

মৈনাক দেবনাথ

Buddhadeb Bhattacharjee last rites: বাড়ির বাগানের প্রিয় ফুল দিয়েই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন তরুণীর

কলকাতা: আলিমুদ্দিনে তখনও আসেনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ। অথচ তাঁকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর লাইন এজেসি বোস রোড ছাপিয়ে গিয়েছে। এরপর সময় যত এগিয়েছে লাইন তত লম্বা হয়েছে লাইন। সবার হাতে ফুলের মালা। বুকে বুদ্ধবাবুর ছবি।

লাইনেরই একদম পিছনের সারিতে পলিথিনের ব্যাগে কয়েকটা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন জয়নগর থেকে আসা তরুণী দীপালি দাস। লাইন তখন মৌলালির কাছে। শেষ পর্যন্ত এই ফুল দেওয়া যাবে কিনা সেই দুশ্চিন্তা চোখেমুখে। এরই মধ্যে চলছে মেঘবৃষ্টির খেলা। ফিরতি পথে যাকেই দেখছেন জিজ্ঞেস করে চলেছেন আর কতক্ষণ দেহ থাকবে। লাইন দ্রুত এগোচ্ছে না কেনও? ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রুখতে বড় দাবি অভিষেকের, কী বললেন তৃণমূল সাংসদ?

দিপালী দাস বলেন, “গতকাল খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনখারাপ। শেষবার অন্তত একবার বুদ্ধবাবুকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। তারপর থেকেই মনে মনে ঠিক করে ফেলি বাজার থেকে ফুল কিনে নয় আমার বাগানের প্রিয় ফুলটাই বুদ্ধবাবুর পায় অর্পণ করবো। সকালবেলায় সেইমতো বাগানে গিয়ে কয়েকটা ফুল তুলে নিয়ে আসি। কিন্তু আসতে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল। আসার পর আবার দেখতে পাচ্ছি এত লম্বা লাইন। তবে যত সময়ই দাঁড়াতে হয় হোক আপত্তি নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানাতে কাছে যাওয়া যাবে কি না সেটাই প্রশ্ন। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পরেই তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ। তবে আমি আশাবাদী যে ঠিক এই ফুল বুদ্ধবাবুর পায়ে অর্পন করতে পারব।”

আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে পড়ুয়াদের সমস্ত দাবি দাবি মেনে নিল স্বাস্থ্য দফতর, কী কী পদক্ষেপ?

মুজাফফর আহমেদ ভবন। সিপিএমের রাজ্য দফতর। এখান থেকেই কাজ করতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর এই বাড়িতেই। অসুস্থ হওয়ার পরেও কিছুদিন এসেছিলেন তিনি। তারপর একটা বিরাট সময়ের ব্যাবধান। শুক্রবার তাঁর দেহ শেষবারের মতো নিয়ে আসা হলো দীর্ঘদিনের তাঁর কর্মস্থলে।

এদিকে সময় যত এগিয়েছে কপালের ভাঁজ তত চওড়া হয়েছে সিপিএম নেতৃত্বের। বিকেল চারটের মধ্যে এনআরএসে দেহ দান করার কথা। তার আগে দীনেশ মজুমদার ভবনে কিছুক্ষণের জন্য দেহ রাখা হবে। এদিকে বাইরে তখন দাঁড়িয়ে হাজার হাজার জনতা। বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর অনেকেরই ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে। এদিকে দ্রুত শ্রদ্ধা জানিয়ে পরেরজন কে সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চলেছেন নেতৃত্ব। একটা সময়ে আলিমুদ্দিনের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটা সময়ে মাইকে ঘোষণা করা হয় যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতালে দেহ দান করতে হবে তাই আর কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ভিড়ের একটা অংশ। এরপরেই রাশ ধরেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সকলকেই শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেন তিনি। আর এই সুযোগেই প্রত্যেকে শেষ বারের মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছেন। খালি হাতে ফিরে যেতে হয়নি দীপালি দাসের মতো অনেককেই।

Buddhadeb Bhattacharjee’s Favourite Vacation Destinaton: ভালবাসতেন পোস্তর পদের সঙ্গে বাহারি মাছ, শঙ্করপুরের এই সরকারি কটেজ ছিল প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর খুব প্রিয়

সৈকত শী, শংকরপুর: সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত প্রিয় ছিল জেলার এই সমুদ্রসৈকত। সুযোগ পেলেই তিনি এই সমুদ্রসৈকতে সপরিবারে  আসতেন ছুটি কাটাতে। শুধু অবসর সময়ে নয়। ২০০৬ সালের পর একাধিক জায়গায় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদল-সহ সাধারণ মানুষের আন্দোলনে রাজ্য মুখর, তখনও মানসিক চাপ কাটাতে বেছে নিয়েছিলেন এই সমুদ্র সৈকতকেই। এই সমুদ্র সৈকতের সরকারি কমপ্লেক্সের একটি কটেজ ছিল তাঁর অত্যন্ত প্রিয়।

প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময় কাটানোর জন্য অত্যন্ত পছন্দের ছিল শংকরপুর সমুদ্রসৈকত। নির্জন এই সমুদ্রসৈকতে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসতেন তিনি। আর এখানে রাজ্য মৎস্য দফতরের ‘জোয়ার’ কমপ্লেক্স-এর একটি কটেজ ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের খুব প্রিয়। শংকরপুর এলেই তিনি ওই কটেজেই সপরিবারে থাকতেন। শংকরপুর সমুদ্র উপকণ্ঠে রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একাধিক স্মৃতি। শুধু রাজ্য মৎস্য দফতরের কটেজে থাকাই নয়, কটেজের সঙ্গে থাকা ক্যান্টিনের আটপৌরে বাঙালি খাবার তাঁর অত্যন্ত পছন্দের ছিল।

আরও পড়ুন : মেঘলা আকাশের নীচে পড়ে রইল তাঁর প্রিয় কলকাতা, নন্দন চত্বর ও বইমেলা, এক ২৩ শ্রাবণের সকালে চিরঘুমে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

তিনি একাধিক বার এসেছেন শংকরপুরে। বন্দর এলাকায় মধ্যে রয়েছে ‘ময়ূরপঙ্খী’ কটেজ। আর এটাই ছিল তাঁর মন ভাল করার জায়গা। ভালবাসতেন উপকূলের ঝাউগাছের শব্দ ও সমুদ্রের কলতান শুনতে। সমুদ্রে নিরিবিলি ও সৈকতে হাঁটতে ভালবাসতেন। সাধারণ খাবার পছন্দ করতেন, তার মধ্যে পোস্তর পদ বেশি পছন্দ করতেন। ফিঙ্গার চিপস, ফিশফিঙ্গার সান্ধ্যকালীন আহার হিসেবে পছন্দ করতেন। কফির চাহিদা ছিল বেশি। দুপুরের মেনুতে ভাত, ডাল, আলুভাজা, আলুপোস্ত, ঝিঙেপোস্ত, পোস্তরবড়া, মাছের মধ্যে ভেটকি, পারসে, তোপসে, আবার কখনও কখনও ইলিশ এবং খাসির মাংস পছন্দের তালিকায় ছিল শীর্ষে।

বর্তমানে ময়ূরপঙ্খী কটেজে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এই সৈকতশহরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতি আজীবন অমলিন থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

Sourav Ganguly on Buddhadev Bhattacharjee: বুদ্ধদেবকে শেষবিদায় জানাতে পারলেন না, হাসপাতালের কাছে গিয়েও কেন ফিরে আসতে হল সৌরভকে?

কলকাতা: প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অতীতের বিভিন্ন ঘটনা স্মৃতিচারণ করার মাঝে আক্ষেপ মহারাজের গলায়। বিদায় বেলায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সামনে থেকে শেষশ্রদ্ধা না জানাতে না পারার আক্ষেপ সৌরভের গলায়। চেষ্টা করেও পারলেন না।  প্রচুর ভিড় এবং পুলিশের অনুরোধে নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছাকাছি পৌঁছেও ফিরে যেতে হল সৌরভকে।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণের দিন কলকাতায় ছিলেন না সৌরভ। ‌তবে শুক্রবার সকালে মুম্বই থেকে কলকাতা ফিরে আসেন প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক। নিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষ করেই বুদ্ধদেবকে শেষবার দেখার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নিউজ ১৮ বাংলার প্রতিনিধির কাছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষ যাত্রার সূচি নিয়ে খোঁজ নেন। সব শুনে NRS হাসপাতালে যাবেন বলে জানান। প্রথমে আলিমুদ্দিনে আসার কথা ভাবলেও সময়ের হিসেব অনুযায়ী নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো গাড়ি নিয়ে রওনাও দেন। ‌

তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রায় জনজোয়ার নামে রাস্তায়। তার মধ্যে থেকেই বহু কষ্টে মৌলালি পর্যন্ত সৌরভ গাড়ি নিয়ে পৌঁছান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। ৪টে বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ তিনি মৌলালি চলে এলেও ভিড় ঠেলে আগে এগুলো সম্ভব হয়নি। ভিড়ের জন্য কাছে যেতে না পারলেও সৌরভ চেষ্টা করেন যতটা সম্ভব কাছাকাছি যাওয়ার।

একটা সময় মৌলালি থকে এগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকেন সৌরভ। কিন্তু ভিড়ের জন্য কিছুতেই গাড়ি এগোতে পারে নি। রাস্তা নো-এন্ট্রি করে দেওয়া হয়। সেই সময় অনেকে বলেন মিছিল থামিয়ে সৌরভের গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু মহারাজ সেটা ‘না’ করেন। আসলে এরকম একটা দিনে মিছিল থামিয়ে তিনি যেতে চাননি। বরং সেখানে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মীকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন যে, অন্য কোনও রাস্তা দিয়ে এনআরএস হাসপাতালে পৌঁছনোর উপায় আছে কি না!

সৌরভ ওই পুলিশকর্মীকে বলেন, “অন্য কোনও রাস্তা দিয়ে কি আর যাওয়া সম্ভব?” পুলিশকর্মী উত্তর দেন, “না স্যর, এর বাইরে অন্য কোনও রাস্তা তো আর নেই।” সৌরভকে দেখে ততক্ষণে আরও ভিড় জমতে শুরু করে দেয়। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এক সময় ঠিক করেন, গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই এনআরএসে যাবেন। কিন্তু ভিড় বেড়ে যাওয়ায় সেটাও আর সম্ভব হয়নি। অগত্যা দূর থেকেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে যান সৌরভ।

পরে সন্ধেবেলা বাড়িতে নিউজ ১৮ বাংলাকে নিজের আক্ষেপের কথা জানান সৌরভ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিচারণার শুরুতেই তিনি বলেন, “খবরটা শোনার পর মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি ঠিক করেছিলাম কলকাতায় ফিরে শ্রদ্ধা জানাব। সেই মতো অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু যেতে পারিনি। তাই একটা আক্ষেপ থাকবে।”

আরও পড়ুন- না বাসি মিষ্টি বুঝবেন কী ভাবে? খাওয়ার আগে জেনে নিন সহজ উপায়! আর ঠকবেন না

Buddhadeb Bhattacharjee: অঙ্গীকার করেছিলেন বুদ্ধদেব, কীভাবে করা যায় দেহদান? জানুন নিয়ম, খুঁটিনাটি

কলকাতা: দেহদান করা ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের৷ এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসায় গবেষণার জন্য দান করা তাঁর দেহ৷ একা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নন, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের মতো সিপিএম নেতারাও দেহ দানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন৷ এর আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাস, শ্যামল চক্রবর্তীরাও দেহদান করে গিয়েছিলেন৷

দেহদানের নিয়ম কী?

কোনও সাবালক নাগরিক এক নিকটাত্মীয়-সহ দুই সাক্ষীর সামনে লিখিত ভাবে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করতে পারেন। নাবালকও পারে, তবে অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে। অঙ্গীকারপত্রটি সব সময়ে সঙ্গে রাখাই বাঞ্ছনীয়। নিকটজনদের কাছেও বিষয়টি জানিয়ে রাখা চাই। কারণ, মৃত্যুর পরে অঙ্গীকার রক্ষার দায়িত্ব তাঁদেরই।

মৃত্যুর পর হাসপাতালে দেহদান করার পদ্ধতি

মরদেহ এবং অঙ্গীকারপত্র সঙ্গে নিয়ে যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে। কলেজ বন্ধ থাকলে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তিনি মরদেহ মর্গে রাখার ব্যবস্থা করবেন। কলেজ খুললে কর্তৃপক্ষ দেহটি সংগ্রহ করবেন এবং রসিদ দেবেন। অঙ্গীকার করা না থাকলেও কারও মৃত্যুর পরে নিকটাত্মীয়েরা ইচ্ছে করলে দেহদান করতে পারেন। মরণোত্তর চক্ষুদানের ক্ষেত্রে এমনটা প্রায়ই হয়।

২৪ ঘণ্টার যে কোনও সময়ে মরণোত্তর দেহদান করা যাবে না কোনও মেডিক্যাল কলেজে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্তই নির্দিষ্ট সময়সীমা। বেশি রাতে দূর থেকে ভুল করে কেউ শবদেহ নিয়ে পৌঁছে গেলে মরদেহ রাতভর রাখা থাকবে কলেজের মর্গে। সেখান থেকেই পরের দিন সম্পন্ন হবে দেহদান প্রক্রিয়া।

কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা তৃতীয় কোনও পক্ষের মাধ্যমে দেহদান করা যাবে না। যাঁর মরদেহ দান করা হচ্ছে, দেহদানের সময়ে তাঁর কোনও নিকটাত্মীয়কে হাজির থাকতে হবে মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে। এবং মৃত ব্যক্তি এবং নিকটজন, উভয়েরই পাসপোর্ট অথবা আধার অথবা ভোটার কার্ডের মধ্যে যে কোনও একটি সচিত্র পরিচয়পত্র দেহদানের সময় সঙ্গে রাখতে হবে।

মরণোত্তর দেহ বা চক্ষুদান করলে কি কোনও সুবিধা পাওয়া যায়?

দান সব সময়েই নিঃশর্ত। কোনও সুযোগ-সুবিধার প্রশ্নই নেই।

ভারতবর্ষে দেহদানের ইতিহাস

ভারতবর্ষে প্রথম প্রখ্যাত বিজ্ঞানী জে বি এস হলডেন ১৯৬৪ সালের পয়লা ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশে দেহ দান করেন৷ পশ্চিমবঙ্গে ১৯৮৬ সালের ৫ নভেম্বর জে বি এস হলডেনের ৯৫তম জন্ম দিবস উপলক্ষে গণদর্পণ সংস্থার পক্ষ থেকে ব্রজ রায়ের উদ্যোগে ৩৪ জনের মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকারের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু হয়৷

Buddhadeb Bhattacharjee last rites: অন্তিমযাত্রা সম্পন্ন, দীনেশ মজুমদার ভবন থেকে এনআরএসে বুদ্ধদেবের দেহ

কলকাতা: বৃহস্পতিবার প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিধানসভা থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ আনা হল আলিমুদ্দিনে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দীনেশ মজুমদার ভবনে। শেষ পর্যন্ত এনআরএসে দান করা হল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ।

চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণায় কাজে লাগানো হবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ। আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধা জানালেন বাম নেতা, কর্মী সমর্থকেরা। শ্রদ্ধা জানালেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ একাধিক নেতারা। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত। আলিমুদ্দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছেন প্রচুর মানুষ।

দুপুরে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বুদ্ধবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখানেই শায়িত ছিলেন প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিবিদ কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এদিন শেষযাত্রায় প্রথমেই তাঁর দেহ আনা হয় রাজ্য বিধানসভায়। সেখানে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির বাম-তৃণমূল-বিজেপি সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলেন নেতা-কর্মীরা।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইউনুসকে শুভেচ্ছা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কী বললেন মমতা?

তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান রাজ্য়ের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা। উপস্থিত অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চট্টোপাধ্য়ায়, বিমান বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। বুদ্ধদেবকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে মুখোমুখি হলেন অভিষেক-শুভেন্দু।

মন্ত্রী ও মুখ্য়মন্ত্রী হিসেবে এই বিধানসভায় দীর্ঘ সময় কেটেছিল বামনেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। এদিন সেখানেই তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানানোর পালা এসে হাজির। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সমস্ত নেতা-মন্ত্রীদেরও মিলিয়ে দিল এই বিদায়বেলা। বুদ্ধবাবুর মরদেহের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাম নেতা, স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন।

আরও পড়ুন: ‘সকলের প্রিয়জন’, বিধানসভায় বুদ্ধদেবের মরদেহ, শাসক-বিরোধীদের শ্রদ্ধা, পাশাপাশি অভিষেক-শুভেন্দুও

একনজরে দেখে নেওয়া যাক, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রার সূচি:সময়সূচি মেনে সকাল সাড়ে দশটায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তায় পিস ওয়ার্ল্ড থেকে রওনা হবে বুদ্ধবাবুর মরদেহ। প্রয়াত রাজনীতিবিদ, সিপিআইএম-এর প্রবীণ নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিধানসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ শায়িত থাকবে সকাল ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত। বিধানসভা থেকে বুদ্ধবাবুর মরদহ এরপর নিয়ে যাওয়া হবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেখানে বারোটা থেকে বেলা ৩টে ১৫ পর্যন্ত শায়িত থাকবে মরদেহ।

বেলা তিনটে বেজে তিরিশ মিনিট থেকে ৩টে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ থাকবে দীনেশ মজুমদার ভবনে। তিনটে বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ সেখান থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রার সূচনা, যা শেষ হবে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে। বিকেল চারটেয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরণোত্তর দেহদান করা হবে এনআরএস হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়াদের গবেষণার জন্য।‌ আজ রাতভোর মরদেহ সংরক্ষণ করে রাখা থাকবে পিস ওয়ার্ল্ডে।‌

Swagatalakshmi Dasgupta on Buddhadeb Bhattacharjee: সুসময়েই নয়, বিপদেও পাশে ছিলেন বুদ্ধদেব! ‘স্যার’-এর প্রয়াণে বিষণ্ণ স্বাগতালক্ষ্মী

কলকাতা: সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটেই শেষ হল বামেদের অভিভাবকের জীবনযাত্রা। তবে শুধু রাজনীতির ময়দানে নয়, তার ঊর্ধ্বেও ছিল তাঁর অবাধ আনাগানো। শিল্প-সাহিত্যের প্রতিও ছিল বুদ্ধদেবের অগাধ উৎসাহ। এ হেন মানুষের জীবনাবসানের পর সেই কথাগুলিই যেন বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের।

বুদ্ধদেবের প্রয়াণের কথা যেন বিশ্বাসই করতে পারেননি শিল্পী। এত বছর মাথার উপর ছাতা হয়ে যিনি ছিলেন, তাঁর না-থাকাটাই তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। শোক সামলে অতীত ছুঁয়ে দেখলেন স্বাগতালক্ষ্মী। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, “রাজনীতিবিদ হিসাবে তাঁর বিরাট সব কর্মকাণ্ডের কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রতি ওঁর ভালবাসা দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি। অত বড় মাপের একজন মানুষ কী সরলভাবে গানের খোঁজ করতেন। নতুন কোথায় কী গান করছি, জানতে চাইতেন।”

বাংলা রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ বুদ্ধদেবকে আগাগোড়াই ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেছেন স্বাগতালক্ষ্মী। সঙ্গীতযাপনের দীর্ঘ পথেও সান্নিধ্য পেয়েছেন তাঁর। স্মৃতির পাতা উল্টে প্রায় বছর ১৮ আগের কথা মনে করলেন গায়িকা। সাল ২০০৬। তখন সদ্য প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একলা গীতবিতান। স্বাগতালক্ষ্মীর সেই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তিনি। স্বাগতালক্ষ্মী বললেন, “তিনি একলা গীতবিতানটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন। বলেছিলেন অবিশ্বাস্য একটা কাজ করেছি। আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।”

আরও পড়ুন: তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে… ৩৪ বছর, লাল পতাকা আর কাস্তে-হাতুড়ির মাঝে আজ ‘তারা’

আরও পড়ুন: ‘হে চিরসারথি, তব রথচক্রে…’ ১৯৪৪-২০২৪ : সাদা পোশাকের মুকুটহীন সম্রাট

শুধু সুসময়েই নয়, বিপদেও স্বাগতালক্ষ্মীর পাশে ছিলেন বুদ্ধদেব। গায়িকার সঙ্গীতগুরু মায়া সেন যখন প্রবল অসুস্থ, তখন তাঁর চিকিৎসরা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনিই। সেই আখ্যান শুনিয়েই গায়িকা বললেন, “এরকম কত রকম সাহায্যই যে উনি করেছেন, তা বলে শেষ করতে পারব না। ওর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। মনটা খুব খারাপ লাগছে। রবীন্দ্রনাথ চলে গিয়েছিলেন ২২ শ্রাবণ। উনিও ঠিক তাঁর মৃত্যুদিনটা পার করেই চলে গেলেন। খবর পেতাম, খুব ভুগছিলেন। উনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন।”

Buddhadeb Bhattacharjee death: বুদ্ধ আর নেই! মেনে নিতে না পেরে এ কী অবস্থা হল প্রাণকৃষ্ণের! 

প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার তাঁর শেষযাত্রা। দুপুরে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বুদ্ধবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিস ওয়ার্ল্ডে। তাঁর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বীরভূমের প্রাণকৃষ্ণ সিমলান্দী। রামপুরহাটের বাসিন্দা প্রাণকৃষ্ণ নিজের কর্মদক্ষতায় মসুর ডাল,  খেজুরের বীজের মধ্যে মনীষী,  রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছবি এঁকে উপহার দিয়েছেন। সেই মতোই তিনি উপহার দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।

প্রাণকৃষ্ণবাবু  জানান, সামান্য একটি মসুর ডালের মধ্যে সাদা পাঞ্জাবি ও কালো বোতাম দিয়ে ছবি এঁকেছিলেন বুদ্ধদেববাবুর। ছবি আঁকার পর তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর তত্ত্বাবধানে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে পৌঁছন। নিজের হাতে তুলে দেন উপহার।  বুদ্ধবাবুর মৃত্যুর খবর পেতেই কার্যত শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে যখন তিনি বুদ্ধবাবুকে সেই উপহার দিতে গিয়েছিলেন তখন ৩৫ মিনিট কথা হয়েছিল।