কলকাতা: বুধবার রাতে আরজি কর হাসপাতালে উন্মত্ত জনতার ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতা কার্যত স্বীকার করে নিলেন নগরপাল বিনীত গোয়েল৷ এ দিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কলকাতা পুলিশের সিপি স্বীকার করে নেন, আরজি করের সামনে যে অত বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েত হবে, তা আন্দাজই করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ৷ তবে একই সঙ্গে ওই দিন হাসপাতালে হামলার ঘটনায় যারা জড়িত, তারা বিচ্ছিন্ন ভাবেই জমায়েত করেছিল৷ ফলে পরিকল্পিত ভাবে হাসপাতালে ভাঙচুর করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছিল, তা মানতে চাননি নগরপাল৷
একই সঙ্গে এ দিনও নগরপাল দাবি করেছেন, কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে কোনও কিছুই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়নি৷ মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ নিয়ম বিরুদ্ধ কিছু করেনি বলেই দাবি করেছেন নগরপাল৷
আর জি কর হাসপাতালে উন্মত্ত জনতার তাণ্ডবের পর পুলিশের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে৷ দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়ে যে হাসপাতালে হামলা চালাতে পারে, সেই খবর কেন পুলিশের কাছে আগাম ছিল না, সেই প্রশ্নও উঠছে৷
যদিও গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নগরপাল বলেন, ওই দিন গোটা কলকাতা জুড়েই আলাদা একটি কর্মসূচি ছিল৷ কিন্তু ওই কর্মসূচিতে কত মানুষের ভিড় হতে পারে, তা আগাম আন্দাজ করা সম্ভব হয়নি৷ কারণ এই কর্মসূচি সংগঠিত ছিল না, নেতৃত্ব স্থানীয় কেউ ছিলেন না৷ ফলে ভিড় কত হতে পারে সেই অনুযায়ী বাহিনী মোতায়েন করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি৷ তাছাড়া, প্রথম দিকে পুলিশ অনেক সংযমও দেখিয়েছে৷
আরও পড়ুন: মাঝরাস্তা থেকে সন্দীপ ঘোষকে পাকড়াও করল সিবিআই, সোজা নিয়ে গেল সিজিও-তে
বিনীত গোয়েল অবশ্য দাবি করেছেন, ওই দিন যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা ছিল৷ কলকাতা পুলিশের ডিসি নর্থ নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ এ কথা বলেও অবশ্য নগরপাল বলেন, ‘ভিড়ের পরিমাণ এতই ছিল ঠেকানো সম্ভব হয়নি, ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার পর কোনওমতেই সম্ভব হয়নি তাদেরকে ঠেকানো। আপনারা যদি বলেন এটা আমাদের ব্যর্থতা, তাহলে অবশ্যই এটা আমাদের ব্যর্থতা।’
হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ তবে ধর্ষণ খুন কাণ্ডের প্রমাণ লোপাটের জন্যই হাসপাতালে হামলা হয়েছে, সরাসরি এই অভিযোগ মানতে চাননি নগরপাল৷ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেও সেরকম কোনও তথ্য মেলেনি বলেই দাবি করেছেন তিনি৷ বরং নগরপাল দাবি করেছেন, এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছে, তারা বিচ্ছিন্ন ভাবেই বুধবার রাতে আরজি করের সামনে এসেছিলেন৷ বিনীত গোয়েল বলেন, কেউ হাওড়া থেকে এসেছিল, কেউ আবার দমদম, মুরারিপুকুর থেকে৷ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে৷
নগরপাল এই যুক্তি দিলেও এ দিন পুলিশের ভূমিকায় ফের একবার তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনাতেও পুলিশের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট৷ হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷