যে অভিনেত্রীর ছবি দেখতে পাচ্ছেন, তিনি তাঁর সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। অনেক শীর্ষস্থানীয় তারকা অভিনেতাও তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধতে মুখিয়ে থাকতেন। অভিনেত্রীর জীবনে একটি ভূমিকা পালন করেছিল যিনি অনেক কষ্টের মুখোমুখি হন। কে এই বিখ্যাত অভিনেত্রী এবং তাঁর জীবনে কী ঘটেছিল?রূপালি পর্দার অনেক শিশু তারকাই পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেতা, অভিনেত্রী বা চরিত্র শিল্পী হয়েছেন। প্রতিভা তো বটেই সঙ্গে প্রয়োজন ভাগ্যেরও৷ অনেকে মনে করেন, একটি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেলেই তারকা হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শুধু গ্ল্যামারাস নয় যেটা সবাই ভাবে। কিছু তারকাদের জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায় তাঁদের বহু দুঃখ বেদনাময় অধ্যয়৷অভিনেত্রী শ্রীবিদ্যা জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা কৃষ্ণমূর্তি এবং কর্নাটিক সঙ্গীত গায়ক এমএল বসন্ত কুমারীর মেয়ে। শ্রীবিদ্যার জন্মের এক বছর পর তাঁর বাবা কৃষ্ণমূর্তি একটি দুর্ঘটনার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে তাঁর স্ত্রী এমএল বসন্ত কুমারীকে পরিবারের সকল দায়িত্ব সামলাতে হয়। অভিনেত্রী শ্রীবিদ্যা ১৪ বছর বয়সে তার পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন।শ্রীবিদ্যা অভিনেতা থিলাকাম শিবাজি গণেসান অভিনীত থিরুভারুচেলভানের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল। এরপর ‘পেতেরশি বেথাম্মা’ ছবির মাধ্যমে তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অভিষেক হয়। তাঁর অবিশ্বাস্য অভিনয়, আশ্চর্যজনক নাচ এবং মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের কারণে, শ্রীবিদ্যা আরও চলচ্চিত্রের সুযোগ পেতে শুরু করে। এছাড়াও, পরিচালক দাসারি নারায়ণনের অনুপ্রেরণার কারণে, তাঁর কাছে অনেক চলচ্চিত্রের সুযোগ এসেছিল।তামিল সিনেমার অপরিহার্য পরিচালক কে. বালাচান্দর পরিচালিত ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’-এ শ্রীবিদ্যা রজনীকান্ত এবং কমল হাসানের সঙ্গে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং পরবর্তীতে তেলুগুতে রিমেক হয়। অভিনেত্রী শ্রীবিদ্যা তামিল ও তেলুগু উভয় ভাষায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।শ্রীবিদ্যা ও কমল একসঙ্গে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন। শ্রীবিদ্যা এবং কমল হাসান শুধুমাত্র রিল লাইফেই নয়, বাস্তব জীবনেও একে অপরের প্রেমে পড়েছিলেন। শ্রীবিদ্যার মা তাঁদের বিয়েতে সম্মতি দেননি এবং তারা তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।এরপর ১৯৭৮ সালে মালায়ালাম পরিচালক জর্জ টমাসকে বিয়ে করেন শ্রীবিদ্যা। বিয়ের পর স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার ছেড়ে দেন। কিন্তু বিয়ের পর তাঁর জীবন উল্টে যায় এবং আর্থিক সমস্যার কারণে শ্রীবিদ্যা আবার সিনেমায় প্রবেশ করেন। কিন্তু শ্রীবিদ্যার সম্পত্তি তাঁর স্বামী চুরি করে, এমনই অভিযোগ এবং সেই থেকে তাঁদের বিবাহিত জীবনে ফাটল ধরে৷ ১৯৮০ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।এরপর, শ্রীবিদ্যা, চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিলেন৷ তামিল, তেলেগু এবং মালায়ালাম চলচ্চিত্রে চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তারপরও ভাগ্য হাল ছাড়েনি। ২০০৩ সালে, শ্রীবিদ্যার শারীরির সমস্যা হয়। ক্যানসারে ভুগছিলেন, তিনি অনুভব করেছিলেন যে তিনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না।পরবর্তীকালে, শ্রীবিদ্যাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সঙ্গীত এবং নৃত্য কলেজে অধ্যয়নরত দরিদ্র ছাত্রদের বৃত্তি হিসাবে অভিনয় করে যে কোটি কোটি টাকার সম্পদ জমা করেছিলেন তা দান করার প্রস্তাব দেন। অভিনেতা গণেশের সাহায্যে, শ্রীবিদ্যা যোগ্য লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। ক্যানসারের সঙ্গে তিন লড়াইয়ের পর ৫৩ বছর বয়সে ২০০৬ সালে এই অভিনেত্রী মারা যান।
