কলকাতা থেকে বদলাপুরে ক্ষোভের চিত্রটা একই

Badlapur-Kolkata Harassment Case: হাসপাতাল বা স্কুল, কোথাও নিরাপদ নন মহিলারা; কলকাতা থেকে বদলাপুরে ক্ষোভের চিত্রটা একই, ঠিক কী ঘটেছে

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাই হোক, কিংবা মহারাষ্ট্রের বদলাপুরই হোক, মানুষের রাগ-ক্ষোভ চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। আসলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারী নিগ্রহ, ধর্ষণ-খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। বোঝা যাচ্ছে, মেয়েরা স্কুলে কিংবা হাসপাতালে কিংবা কর্মক্ষেত্রে কোথাওই সুরক্ষিত নয়।

সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর হাসপাতালেই তরুণী চিকিৎসককে নৃশংস ভাবে খুন এবং ধর্ষণ করা হয়েছে। যার জেরে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে গোটা দেশেই। সেই প্রতিবাদ-আন্দোলনের মাঝেই মহারাষ্ট্রের বদলাপুরের এক স্কুলে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে চার বছরের দুই শিশুকন্যাকে। ফলে কলকাতার মতো করেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে বদলাপুরও। সেখানে এমন পরিস্থিতি যে, ইন্টারনেট অবধি বন্ধ রাখতে হয়েছে। মঙ্গলবার প্রচুর মানুষ সেখানে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। উত্তেজিত আন্দোলকারীরা স্কুলে চড়াও হয়ে ভাঙচুরও করেছেন। এখানেই শেষ নয়, রেল স্টেশনে গিয়ে পড়েছে সেই আন্দোলনের আঁচ। বহুক্ষণ অবরোধ-বিক্ষোভ চলে সেখানেও।

যৌন নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত সাফাইকর্মীকে পাকড়াও করা হয়েছে। আর এই ঘটনাটির তদন্ত করছে সিট। সরকারের বক্তব্য, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে অভিযুক্তকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। এদিকে আবার আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কটাক্ষ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এমনকী নির্যাতিতা এবং মৃত তরুণী চিকিৎসকের ছবি প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় বিস্ময়ও প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কলকাতার ঘটনা থেকে শুরু করে বদলাপুরের সংঘর্ষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি।

বদলাপুর সংঘর্ষের গোটা বিষয়:

মহারাষ্ট্রের বদলাপুরে ৪ বছরের দুই শিশুকন্যাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে স্কুলের সাফাইকর্মীর বিষয়ে। গত ১৪ অগাস্টের ঘটনা। কিন্তু পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে মঙ্গলবার অভিভাবকদের রাগ তুঙ্গে গিয়ে পৌঁছয়। গোটা থানে জেলাতেই প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে। স্কুল ভাঙচুর হয়। এরপর প্রতিবাদকারীরা চড়াও হয় রেলস্টেশনে। এই সংঘর্ষের পরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিট-এর হাতে।

সিট-এর মাথায় কে থাকবেন?

বদলাপুরে স্কুল ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা। এমনকী রেল স্টেশনে অবরোধও করেন তাঁরা। যার জেরে বিভিন্ন জায়গায় থমকে গিয়েছিল ট্রেন চলাচল। এর পাশাপাশি বেশ কিছু ট্রেনের রুট বদলে দেওয়া হয় আর ট্রেন ছাড়তে কিংবা গন্তব্যে পৌঁছতেও দেরি হয়ে যায়। বদলাপুর সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সিনিয়র পুলিশ ইনস্পেক্টর, পুলিশ ইনস্পেক্টর এবং হেড কনস্টেবল অর্থাৎ তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বদলাপুরের সংঘর্ষের বিষয়টা তদন্ত করার জন্য আইপিএস আরতি সিংকে সিট-এর মাথায় বসানো হয়েছে। সেখানে উজ্জ্বল নিকম হবেন পাবলিক প্রসিকিউটর।

আরও পড়ুন: নির্মম! পরকীয়ার অভি‌যোগে গৃহবধূর সঙ্গে যা করল এলাকাবাসী…! গুরুতর জখম মহিলা

১০ ঘণ্টা পর চালু হয়েছে রেল পরিষেবা:

হাজার হাজার আন্দোলনকারী স্টেশনে অবরোধ করে রেল চলাচল ব্যাহত করে দিয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার জন্য লাঠিচার্জও করা হয়েছে। প্রায় ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় রেলওয়ে ট্র্যাক থেকে সকলকে সরানো হয় এবং তারপরে স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল। সেখান থেকে আটক করা হয় একাধিক বিক্ষোভকারীকে। আসলে নির্যাতিত দুই শিশুর পরিবারের অভিযোগ, এফআইআর দায়ের করতে দেরি করেছিল পুলিশ। কয়েক ঘণ্টা ধরে তাঁদের থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তারই প্রতিবাদে মঙ্গলবারের ওই বিক্ষোভ।

বদলাপুরে কী ঘটেছিল?

স্কুল প্রাঙ্গণেই দুই শিশুকন্যাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম অক্ষয় শিন্ডে। পেশায় সে স্কুলেরই সাফাইকর্মী। ১৪ অগাস্ট এই কাণ্ড ঘটিয়ে শিশুকন্যাদের ভয় দেখিয়েছিল সে। বর্তমানে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ওই অভিযুক্তকে। যদিও পরিবারের অভিযোগ, গত ১৬ অগাস্ট অভিযোগ দায়ের করতে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ফলে জনসাধারণের আক্রোশ চরমে পৌঁছেছিল। সেই কারণে গত ২০ অগাস্ট বিক্ষোভ শুরু হয়।

কলকাতা তরুণী চিকিৎসকের ঘটনা:

নিজের কর্মক্ষেত্রে তথা কলকাতা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালেই নৃশংস ভাবে ধর্ষণ এবং খুন হতে হয়েছে তরুণী চিকিৎসককে। আর শ্বাসরোধ করার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। গত ৯ অগাস্ট করা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে যে, ওই তরুণী চিকিৎসকের শরীরে ১৬টি এক্সটার্নাল এবং ৯টি ইন্টার্নাল ইনজুরি পাওয়া গিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে যে, ওই তরুণীর যৌনাঙ্গে বলপূর্বক পেনিট্রেশন-এর প্রমাণ মিলেছে। ফলে যৌন নিগ্রহের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নির্যাতিতা ওই মহিলা চিকিৎসকের গালে, ঠোঁটে, নাকে, ঘাড়ে, হাতে এবং হাঁটুতে ক্ষতচিহ্ন দেখা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তরুণীর গোপনাঙ্গেও রয়েছে ক্ষতর দাগ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, চিকিৎসকের মৃত্যুর আগেই তৈরি হয়েছে এই ক্ষতগুলি। এর পাশাপাশি মস্তিষ্ক, ঘাড় এবং দেহের অন্যান্য অংশের পেশিতেও মিলেছে ক্ষতচিহ্ন।

হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় পদক্ষেপ:

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুরের বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে তিন পুলিশ অফিসারকে। বিভাগীয় তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশ।

চিকিৎসকদের ধর্মঘট কবে উঠবে?

অন্যদিকে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) বুধবার দিল্লিতে সমস্ত RDA-এর সঙ্গে কলকাতার ঘটনায় ধর্মঘটের বিষয়ে একটি বৈঠক করবে। চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলবে না কি শেষ হবে, সেটাই আলোচনা করা হবে। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের লিখিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সে থাকবেন ৯ জন সদস্য এবং ৫ জন এক্স-অফিসিও সদস্য। সিজেআই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ তা মঙ্গলবারের শুনানিতে স্পষ্ট করে দিয়েছে।

জারি রয়েছে প্রতিবাদ-আন্দোলন:

কলকাতা আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ-আন্দোলন জারি রয়েছে। স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দেবেন ভারতীয় ক্রিকেট তারকা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। ইতিমধ্যেই বুধবার সকাল ১১টা থেকে পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিবাদ শুরু করতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে শুরু হবে মিছিল। অন্যদিকে গোটা রাজ্যের নারীরা নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জারি রেখেছেন বিভিন্ন জায়গায়। মঙ্গলবার শুনানিতে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

কলকাতার ঘটনা

গত ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল ট্রেনি চিকিৎসকের দেহ। গত ৮ অগাস্ট রাতে কর্তব্যরত অবস্থাতেই নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছে তাঁকে। ধর্ষণ করা হয়েছিল ওই চিকিৎসককে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। প্রথমে কলকাতা পুলিশ ঘটনার তদন্ত করলেও আপাতত এই ঘটনার তদন্তভার সঁপে দেওয়া হয়েছে সিবিআই-এর হাতে। গোটা কলকাতা এই নিয়ে সরব হয়েছে। আপাতত ধর্মঘটে গিয়েছেন সমগ্র দেশের চিকিৎসকেরা।