নয়াদিল্লি: ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান এবারে চাঁদে যে এক সময় ম্যাগমার সমুদ্র ছিল সে বিষয়ে কার্যত নিশ্চিত করল। চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছানো চন্দ্রযান চাঁদের ওই অন্ধকারতম অংশ থেকে বিভিন্ন ছবি তুলে পাঠিয়েছে। ফলে বিজ্ঞানীদের এতদিন ধরে চাঁদের বিবর্তন সম্পর্কিত যে মতবাদ ছিল তা আরও জোরাল হল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন চাঁদেও এক সময় ম্যাগমা অর্থাৎ গলন্ত বিভিন্ন শিলা এবং অন্যান্য পদার্থ ছিল। ক্রমে তা ঠাণ্ডা হয়ে পাথুরে অবস্থায় আসে। চন্দ্রযান-৩ চাঁদের বুকে পৌঁছানোর পর এই মতবাদ আরও জোরাল হয় বিজ্ঞানীদের মতে।
গত বছর ১৪ জুলাই ইসরোর তরফ থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হয় চন্দ্রযান-৩। ২৫ অগাস্ট চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করে বিক্রম। এরপর থেকেই একের পর এক ছবি পাঠাতে থাকে চন্দ্রযান। ছবিগুলি আহমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে আরও বিশেষ ভাবে অনুসন্ধান করা হয়।
এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রফেসর সন্তোষ ভাড়াওয়ালে জানান, ” একসময় চাঁদ একটি গলন্ত অবস্থায় ছিল। গোটা চাঁদ জুড়েই ম্যাগমার সমুদ্র ছিল। কিন্তু আমরা এখনও জানি না সেটা ঠিক কতটা বড় এবং আদৌ তার অস্তিত্ব ছিল কি না। কিন্তু, আগের চন্দ্র অভিযানের রিমোট সেন্সিং ডেটা থেকে আমরা পাথরের স্যাম্পেল সংগ্রহ করে দেখেছি তা সেইদিকেই ইঙ্গিত করছে। কিন্তু এখনও অনেক তদন্ত বাকি আছে।”
চাঁদের মাটিকে রিগোলিথ বলে অভিহিত করা হয়। এই রিগোলিথের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করেই দেখা হচ্ছে চাঁদের মাটিতে আদৌ ম্যাগমার সমুদ্র আছে কিনা তা খুঁজে দেখা। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে আমরা দেখতে চাইছি। কিন্তু আমাদের আরও জোরাল প্রমাণ প্রয়োজন। এইক্ষেত্রে আমরা আমেরিকার অ্যাপোলো ১৬ এবং সোভিয়েট ইউনিয়ন মিশনের লুনা-২০ এর বিভিন্ন তথ্যও খুঁটিয়ে দেখছি।”
আরও পড়ুন: এক ব্যক্তির দু’টি হৃদপিণ্ড! সফল অস্ত্রোপচারে জীবনদান চিকিৎসকদের, ঘটনা জানলে অবাক
বিক্রম যেখানে ল্যান্ড করেছে সেখানে ফেরোরান আন্থ্রোসাইটের প্রাধান্য দেখা গিয়েছে। এছাড়াও কিছু রাসায়নিক কম্পোজিশনও চাঁদের বুকে ম্যাগমার মতবাদের যে দাবি তা কিছুটা হলেও জোরাল হয়েছে।
বর্তমানে চাঁদের বুকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা চাঁদের বিবর্তন নিয়ে জানতে চাইছেন। ইতিমধ্যে নাসাও আর্টেমিস প্রোগ্রাম শুরু করেছে। অন্যদিকে, ইসরোও পরবর্তী চন্দ্রঅভিযান ২০২৭ সালে করবে বলে ঘোষণা করেছে। এই অভিযানে চাঁদের থেকে মাটি এবং বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতে ফিরে আসবে।