বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদলীয় বৈঠকে সব দলের কাছে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর

Flood Control in Bengal: বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদলীয় বৈঠকে সব দলের কাছে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা: রাজ্যে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রাজনৈতিক দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ করা সম্ভব হবে, এমনই প্রস্তাব ত্রিপুরা প্রশাসনের।

রেকর্ড পরিমাণ ভারী বৃষ্টির কারণে রাজ্যে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায়  রাজ্য অতিথিশালায় আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকে এই আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রীর পৌরহিত্যে আয়োজিত এই বৈঠকের শুরুতেই সাম্প্রতিক বন্যায় মৃত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়।

আরও পড়ুন- দেখলেও বিশ্বাস করতে পারবেন না! এই মুরগির সঙ্গে সেলফি তুলতে হাজির দূর-দূরান্তের মানুষ! কী আছে মুরগির?

 বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কাছে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন এবং তাদের মূল্যবান পরামর্শ চেয়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সকলের কাছে সহযোগিতার আহ্বান রাখেন তিনি।

সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ১৯ আগস্ট থেকে সারা রাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুধু দক্ষিণ জেলার অন্তর্গত বকাফায় ৪৯৩ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বন্যার দরুণ পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে যায়। ত্রিপুরার সব নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে কথা বলার সময় তিনি আমাকে হেলিকপ্টার এবং অতিরিক্ত এনডিআরএফ টিম পাঠানো সহ সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন। আমাদের প্রশাসন অক্লান্ত পরিশ্রম করছে, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে এবং উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন- খেতে ভ্যানিলা আইসক্রিমের মতো! হলুদ নয়, নীল এই কলা দেখলে কী করবেন?

বর্তমানে গোমতী নদী ছাড়া সব নদীই বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, ২ জন নিখোঁজ এবং ২ জন আহত হয়েছেন। এই ২৪ জনের মধ্যে ১৮ জন ভূমিধসে মারা গিয়েছেন, ৫ জন জলে ডুবে মারা যান এবং ১ জনের বাড়ি ধ্বসে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন,  “সর্বদলীয় বৈঠকে বিজেপির প্রতিনিধি সহ বিরোধী দল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন। আমরা বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আমি তাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছি। বৈঠকে উপস্থিত সকল দলের প্রতিনিধিরা তাঁদের পরামর্শ শেয়ার করেন এবং এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা মহকুমা স্তরেও সর্বদলীয় বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যা একটি খুবই ভাল পরামর্শ ছিল। এই বৈঠকে আমরা কোনো রাজনৈতিক আলোচনা করিনি। শুধু এই সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণে সকলের ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিয়েছি। এই বন্যায় রাজ্যে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা। যে পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এই বৈঠকে আমি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছি। বন্যায় যে ছেলেমেয়েরা তাদের বইপত্র হারিয়েছে তারা শিক্ষা দফতর থেকে নতুন বই পাবে।”

এছাড়াও মানিক জানান, রোগ ব্যাধি এড়াতে সমস্ত শৌচালয়গুলির জন্যও ব্লিচিং পাউডার বিতরণ করা হচ্ছে।  তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, সারা রাজ্যে এখন ৫৫৭টি ত্রাণ শিবির রয়েছে, যেখানে ১.২৮ লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতর কাজ করছে।

ভারী বর্ষণে প্রায় ১,৬০৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গিয়েছে, ৫০১টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে এবং ২টি সাবস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈঠকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। আমরা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি। বৈঠকের সার্বিক আলোচনা সন্তোষজনক বলেই জানান মুখ্যমন্ত্রী।

জানা গিয়েছে, প্রায় ২০০ জন ইঞ্জিনিয়ার মাঠে নেমে কাজ করছেন। তাছাড়া,  খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং এ পর্যন্ত গোমতী ও দক্ষিণ জেলায় ২০,০০০ খাবারের প্যাকেট এয়ার লিফটিং করা হয়েছে। এই দুর্যোগে মৃতদের পরিবারের জন্য ৪ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ২.৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো যায় কিনা সেটা বিবেচনা করার জন্য বৈঠকে পরামর্শ দেওয়া হয়। এই আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।                     সর্বদলীয় বৈঠকে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি সহ রাজ্য সরকারের সচিব পি কে চক্রবর্তী, রাজস্ব সচিব ব্রিজেশ পান্ডে সহ পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।