R G Kar Case: ‘যদি জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আসে, আমরা বাধ্য হব কর্মবিরতিতে যেতে…’ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বার্তা

কলকাতা:  আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের সুবিচার চেয়ে পথে নেমেছেন চিকিৎসকেরা। আন্দোলনের ৩৩ দিন অতিক্রান্ত। গত দু’দিন ধরে নবান্ন ও জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনার রফাসূত্র মেলেনি। ‘যদি জুনিয়র ডাক্তারদের উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেমে আসে, আমরা বাধ্য হবো কর্মবিরতির মতো পদক্ষেপ করতে। প্রশাসনকে আবেদন করছি অবিলম্বে মেডিক্যাল কাউন্সিল ভেঙে দিতে হবে। ওদেরকে আজকেই মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা উচিত। ওদের সঙ্গে বসা উচিত। না হলে এই বার্তা যাবে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন না এই অচলঅবস্থা কাটুক।’ জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্ট্রে তৃতীয় দিনের অবস্থান মঞ্চে সিনিয়র ডাক্তারদের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এমনই বার্তা এল।

ডাক্তারদের তরফে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার কথা প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সামনে বললেও এ কথা স্পষ্ট যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বাস্তবে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে তাদের যে নির্দিষ্ট পাঁচ দফা দাবি, যেগুলি অত্যন্ত ন্যায্য বলে আমরা মনে করি সেগুলি শুনে একটা সমাধান সূত্র বের করবার কোন সদিচ্ছা দেখা গেল না। গত ১০  এবং ১১  সেপ্টেম্বর পরপর দুইটি মেল যা প্রশাসনের কাছ থেকে এসেছিল তার কোনওটিতেই উল্লেখ ছিল না যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বসবেন। বাস্তবে তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক এড়িয়ে গেলেন। অথচ তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের ঘাড়ে দোষ চাপালেন জুনিয়র ডাক্তাররা বৈঠকে বসতে চায় না।

আরও পড়ুন: একটা হেলমেট আর সেই রাত! সঞ্জয় কি আসলে লুকিয়েছে বিশেষ কিছু? জেলে ছুটল CBI

আমরা আশা করেছিলাম দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বৈঠকে বসতে রাজি হবেন। মুখ্যমন্ত্রী ইতিপূর্বে বহু বৈঠক করেছেন যেখানে লাইভ স্ট্রিমিং এর বাবস্থা থেকেছে অথচ আজ যখন জুনিয়র ডাক্তাররা বৈঠকে লাইভ স্ট্রিমিং এর আবেদন করছেন তখন মুখ্যমন্ত্রী এড়িয়ে যাচ্ছেন। এর পিছনে কী উদ্দেশ্য কাজ করছে সেটা আমাদের জানা নেই।

জুনিয়র ডাক্তাররা অবশ্যই কাজে ফিরতে চান, কিন্তু যখন দোষীরা গ্রেফতার হয়নি এবং প্রত্যেকটা মেডিক্যাল হাসপাতালে যেভাবে এখনও হুমকি এবং সিন্ডিকেট চক্রের পান্ডারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন তাদের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় শোনা গেল না। উপরন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের অবিলম্বে কাজে ফিরবার জন্য পারতপক্ষে হুমকি দেওয়া হল এবং সুপ্রিমকোর্টকে রেফার করা হল।প্রতিদিন সংবাদপত্রে অভয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু ও ধর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত হাড়হিম করা তথ্য এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত যে বিশাল চক্রের কথা সামনে আসছে সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে কোনও কথা শোনা গেল না।

আমরা মনে করি অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। আমরা, সিনিয়ার চিকিৎকরা, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে সর্বদাই আছি। যদি জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেমে আসে, তাহলে আমরাও বাধ্য হব কর্মবিরতির মতো বড় পদক্ষেপ করতে। আগামী দিনে জুনিয়ার ডাক্তারদের এই ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবার জন্য যা যা করণীয় তা করবার অঙ্গীকার আমরা করছি।

ধর্মঘটে কিছু অসুবিধা হয়। সিনিয়র ডাক্তাররা অতিরিক্ত পরিশ্রম করছে । সরকার নমনীয় হোক । যে পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে তাদের আগে সরান। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে সিনিয়র ডাক্তাররা রয়েছেন। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দুর্নীতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে আজই এদের সঙ্গে বৈঠক করা উচিৎ। সিনিয়র ডাক্তাররা এই আন্দোলন এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই আন্দোলনকে জোরাল করবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিল ভেঙে দেবার দাবি করা হল । খুন ধর্ষণের ঘটনায় সময়তেও সিসিটিভি পুলিশ সবই ছিল কিন্তু তাও ঘটনা রোখা যায়নি।  জুনিয়র ডাক্তারদের উপর যদি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে সিনিয়র ডাক্তাররা পদক্ষেপ করবেন । জুনিয়র ডাক্তারদের ৫ দফা দাবির সঙ্গে সিনিয়র ডাক্তাররা সহমত। সিনিয়র ডাক্তাররা যদি কর্মবিরতিতে যান তাহলে সরকারি থেকে বেসরকারি সব হাসপাতালে কর্মবিরতিতে যাওয়া হবে। সিনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি মেইল করে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে।’

বৃহস্পতিবার নবান্নর তরফে জুনিয়র চিকিৎসকদের চিঠি দিয়ে আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো হল প্রতিবাদী জুনিয়র চিকিৎসকদের। নবান্নর তরফে চিঠিতে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টায় ফের আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো হল। সর্বাধিক ১৫ জন আসতে পারবেন। কিন্তু লাইভ হবে না। কিন্তু রেকর্ড করা যাবে। নবান্নের হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হবে।