মুর্শিদাবাদ: সামনেই দুর্গাপুজো। তার আগে চুড়ান্ত ব্যস্ততা কাপড়ের দোকানে। মুর্শিদাবাদ সিল্ক থেকে গরদ শাড়ি তৈরি করা হয় রঘুনাথগঞ্জের মির্জাপুরে। আর সেই রেশম চাষের পর রেশম সুতো চড়কাতে দিয়ে সুতো তৈরি করে থাকেন বাড়ির মহিলারা। তবে বাড়ির কাজ সম্পন্ন করেই এই কাজ করে থাকেন তারা। আজও এই গ্রামের মহিলারা তৈরি করে থাকেন সুতো। ফলে সুতোয় বাঁধা জীবন। মাকড়সার জালের মতো এক সূক্ষ প্রায় অদৃশ্য সুতোর উপরেই নির্ভর করে ওঁদের জীবন-জীবিকা।
ওঁরা ‘কাটুনি’, অর্থাৎ সুতো কাটেন। তবে সাধারণ সুতো নয়। তাঁতশিল্পে বাংলার অহঙ্কার যে মসলিন কাপড়, সেই মসলিন সুতো ওঁদের কোমল হাতেই তৈরি হয়। উৎকৃষ্ট মানের মসলিন শাড়ি বুনতে এখন সর্বোচ্চ ৫০০ কাউন্টের সুতো ব্যবহার করা হয়। মাকড়সার জালের মতো সেই সুতোই তৈরি করেন ওই কাটুনিরা। মহারাষ্ট্র ও বেঙ্গালুরু থেকে আসা বিশেষ ধরনের সুভিন কাপাস তুলো থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিশেষ ধরনের চরকায় তৈরি হয় ওই সুতো।
আরও পড়ুন- পুল কার থেকে নেমেই বমি! স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে NRS-এর দোরগোড়ায় মৃত্যু ছাত্রের
ধৈর্য এবং একাগ্রতা এই কাজে প্রধান হাতিয়ার। চরকা হল তুলো থেকে সুতো তৈরির এক লৌকিক যন্ত্রবিশেষ। ১৪ শতকের মাঝামাঝি উত্তর ভারতে সুতো কাটার যন্ত্র চরকা বা চরখার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বাংলায় এই যন্ত্রের প্রচলন ঘটে ১৪ শতকের শেষের দিকে। তাছাড়াও পনেরো শতক থেকে বাংলার যেসব মসলিনসহ অন্যান্য মোটা সুতিবস্ত্র তৈরির জন্য সুতো তৈরি করা হতো তার জন্য ব্যবহৃত হতো চরকা। বাংলার লোকজন চরকায় সুতো কেটে বস্ত্র বয়ন করে। পুরুষেরা তৈরি করতেন চরকাযন্ত্র আর মেয়েরা সে যন্ত্রে সুতো কাটতেন।
আরও পড়ুন- ৬০টাকার চকোলেটের জন্য চাকরি গেল শিক্ষিকার! ছাত্রের ‘ভালবাসা’র উপহার নিতেই বিপত্তি
মূলত মোটা সুতিবস্ত্র বয়নের জন্য যে সুতোর দরকার হতো তা চরকায় কাটা হতো। মসলিনের মতো সূক্ষ্ম বস্ত্র বয়নের জন্য ছিল আদিম যন্ত্র টাকু বা তকলির ব্যবহার। চরকার চাকাই হল মূল অংশ। চক্কর বা ঘূর্ণনের দ্বারা সুতো তৈরি হয় বলেই নাম হল চরকা। চক্র বা চাকার সঙ্গে একটা হাতলের যোগসূত্র স্থাপন করা হয় ফিতে বা রশি দিয়ে। হাতল হাত দিয়ে ঘোরানো হয়। হাতের কুশলতায় সরু বা মোটা সুতো তুলা থেকে তৈরি করা হয়। চরকা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। চাকমা মেয়েরা প্রায় সবাই চরকায় সুতো কাটতে জানেন এবং তাঁতে সুতিবস্ত্র বয়নে বেশ পারদর্শী। তাঁরা জুমের কার্পাস তুলা থেকে সুতোও তৈরি করেন। তাঁরা চরকাকে বলেন চরকি। চরকায় সুতো কাটেন এবং সে সব সুতো দিয়ে বস্ত্র বোনেন।
কৌশিক অধিকারী