নয়াদিল্লিতে She Shakti 2024-এর অনুষ্ঠান

SheShakti 2024: মহিলারা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, নিউজ 18-এর অনুষ্ঠানে বিশেষ বার্তা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর

নয়াদিল্লি: দিল্লির তাজ হোটেলে আয়োজিত হচ্ছে She-Shakti 2024 অনুষ্ঠানটি । সিএনএন নিউজ 18-এর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু একটি বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, “ভারতভূমিতে নারীদেরকে সম্মানিত ও শ্রদ্ধা করার ঐতিহ্য রয়েছে। বৈচিত্র্যময় দেশে আমাদের দেবদেবীরাও নানা রূপ ধারণ করেছেন। একদিকে, তারা অসুরদের ধ্বংস করার জন্য কালী এবং দুর্গার উগ্র রূপ ধারণ করেন। অন্যদিকে, এটি লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর রূপে আশীর্বাদ দেয়, যারা শান্তি, সমৃদ্ধি এবং জ্ঞান প্রদান করে। আমাদের দেশে নারীকে শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নারীই  প্রকৃত শক্তি।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, ” আমাদের দেশের প্রকৃত শক্তি নারীর ক্ষমতায়নে রয়েছে। আমাদের নারীরা সবসময় দৃঢ়তা, শক্তি ও সাহস দেখিয়েছে। সব বাধা পেরিয়েও তারা এগিয়ে চলেছে। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের দেশে অনেক কঠোর আইন করা হয়েছে, তারপরও নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি দুঃখজনক। এখনও কিছু সামাজিক কুসংস্কার গেঁথে আছে, যা নারীর সমতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। একটি সমাজ হিসাবে আমাদের সকলকে ভিতরের দিকে তাকাতে হবে এবং নিজেদেরকে কিছু কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে। আমরা কোথায় ভুল করছি? আমরা আরও উন্নতির জন্য কী কী করতে পারি? যে কোনো দেশের উন্নয়ন ও সাফল্যের জন্য নারীর নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

আরও পড়ুন : লোন নিয়ে ট্র্যাক্টর কিনেছিলেন কৃষক, কিন্তু কিস্তি পরিশোধ না করায় বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ব্যাঙ্কের অফিসাররা; তারপর যা দেখলেন…

অনুষ্ঠানে তিন STEM লিডারও ব্যাখ্যা করেছেন কেন আরও বেশি নারীদের নেতৃত্বের পদে থাকা উচিত

গণিত নিয়ে মেয়েদের কি সত্যিই বেশি ভয় পায়? এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন ডঃ অন্নপূর্ণি সুব্রামানিয়াম (ডিরেক্টর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স), নিগার শাজি, (প্রজেক্ট ডিরেক্টর, ইসরোর আদিত্য এল1 সোলার মিশন) এবং সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, (ডিরেক্টর, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট)৷ সোমবার নয়াদিল্লিতে CNN-News18 দ্বারা আয়োজিত She Shakti 2024-এ তাঁরা জানিয়েছেন, গণিত এবং পদার্থবিদ্যায় ভয় লিঙ্গ ভিত্তিক নয়৷ সামাজিক কারণেই, অনেক মেয়ে বিষয়গুলি নিতে চায় না৷ দূরে সরে যায়।

আরও পড়ুন : কাল থেকে বন্ধ মদের দোকান, বার! দেশের কোন ৩ শহরে? জেনে নিন!

ISRO-এর আদিত্য L1 সৌর মিশনের প্রকল্প পরিচালক শাজি, জানিয়েছেন, ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিনগুলিতে কী ভাবে পরিবারের সাহায্য পেয়েছিলন৷ কী ভাবে বাবা-মা তাঁকে সবদিক থেকে সাহায্য করেছিলেন৷ তাঁর কথায়, “তখনকার দিনে মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে ভাবাই যেত না৷ প্রচলিত ধারণায় গা ভাসিয়ে সবাই তখন ডাক্তার হতে চাইত৷”

ডক্টর সুব্রামানিয়াম জানিয়েছেন, তাঁর বড় হওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্গীতের কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল৷ অনুষ্ঠানে ডাঃ সুব্রামানিয়াম বলছিলেন, বিজ্ঞানী না হলে তিনি নিশ্চিতভাবে একজন সঙ্গীতশিল্পী হতেন। তাঁর কথায় “আমার বাবা-মা পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু আমি গণিত এবং পদার্থবিদ্যায় আগ্রহী ছিলাম এবং বিশ্বাস করতাম যে এটাকে নিয়েই জীবনে এগিয়ে যেতে পারব৷ সঙ্গীত ছিল আমার প্ল্যান বি। নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, আমি গণিত-বিজ্ঞান সঙ্গীতকে একসঙ্গেই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। বিজ্ঞানের মঞ্চে আমি সফল না হলে, সঙ্গীতকেই পেশা হিসাবে বেছে নিতাম৷”

এখানেই শেষ নয়৷ তিনি বলছিলেন, ব্যাচেলার্স, মাস্টার্স বা পিএইচডির মঞ্চে খেয়াল করবেন মেয়েদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ তবে কোনও সংস্থায় নিয়োগের ব্যাপারটি এলে, সেখানে মেয়েদের কিছু ছেলেদের সঙ্গে প্রায় এক আসনেই বসানো হচ্ছে৷ মেয়েরা নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছালে, তরুণ প্রজন্মকে বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে৷ তাদের বোঝাতে হবে, ভয় না পেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ আগামী এক দশকে আশা করি বিজ্ঞান ও গণিতের মঞ্চে মেয়েদের সংখ্যা আরও বাড়বে৷ আমি চাই কর্মসংস্থানগুলি তাদের মহিলা কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে আরও বেশি করে দায়িত্ব নিক৷”

ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। তিনি বলছিলেন, গণিত নিয়ে তরুণ মেয়েদের ভীতি যথেষ্ট উদ্বেগের। তবে এখন শুধু মেয়েরা নয়, ছেলেদের মধ্যেও এই ভীতি দেখা যাচ্ছে৷

কেন তিনি তার স্কুলের দিনগুলিতে গণিত এবং পদার্থবিদ্যা নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করে বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন “ভূগোল এবং জীববিজ্ঞানে আমি বিশেষ ভালো ছিলাম না৷ কারণ এগুলোর জন্য অনেক বেশি মুখস্থ করার প্রয়োজন ছিল৷ যেখানে গণিত এবং পদার্থবিদ্যা মুখস্থের প্রয়োজন হত না৷ এগুলি অনেক বেশি লজিক্যাল ছিল৷” তাঁর মতে, মেয়েদের মধ্যে যৌক্তিক বোধের ব্যাপারটা খুব অল্প বয়স থেকেই গড়ে উঠলে তখন তারা আর গণিত বা বিজ্ঞানকে আর ভয় পাবে না।

সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, তরুণ ছেলে-মেয়েদের গণিত এবং পদার্থবিদ্যা পড়ার সময় একটি গল্পও মনে রাখতে বলেছিলেন, যা তাদের বিষয়গুলি বুঝতে সাহায্য করবে। “স্কুলে অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা” ব্যবস্থাতেও তিনি জোর দিয়েছিন, যা বাচ্চাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে তারা কোন বিষয়টিকে পছন্দ করে,এটাই তাদের উন্নতিতে সাহায্য করবে।

দেশে STEM-এ ৪২%-এরও বেশি মহিলা নথিভুক্ত৷ ২৭% মহিলা মাঠে কাজ করছেন। সাজি বলছিলেন, “আমাদের স্টেমের ভয় ভাঙতে হবে। এটি একজনের আবেগ এবং তারা কী করতে চায় তার উপর নির্ভর করে। এটি একজন ব্যক্তির লিঙ্গের উপর নির্ভর করে না। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক, আমাদের স্কুলেই সচেতনতা আনতে হবে। বর্তমানে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। অনেক মেয়ে স্টেম গ্রহণ করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এখন মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে বেশি। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে এটি পরিবার এবং কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রশ্ন নয়, তবে প্রত্যেকের উচিত “পরিবার এবং কাজকে একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলা এবং যখন প্রয়োজন মতো বিষয়গুলিকে  অগ্রাধিকার দেওয়া।”

নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সহকর্মী পর্যালোচনার অন্তর্নিহিত পক্ষপাতের বিষয়ে, ডঃ সুব্রামানিয়াম নিশ্চিত করেছেন যে এটি স্নাতক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে বিদ্যমান। “নিয়োগ পর্যায়ে, আপনাকে পরিবার এবং ক্যারিয়ার সামলাতে হবে। সুতরাং, একজন মহিলা প্রার্থীর অর্জন পুরুষের চেয়ে কম হতে পারে। কিন্তু এখন সংস্থাগুলি এই সত্যটি বিবেচনা করছে।” যে মহিলারা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছেন তাদের তরুণ মহিলাদের আত্মবিশ্বাস দিতে হবে, তিনি যোগ করেছেন। “আমি চাই কর্তৃপক্ষ এমন একজন মহিলার প্রতি আস্থা রাখুক যিনি পুরুষ প্রার্থীদের সমান। STEM-এ নেতৃত্বের পদ গ্রহণের জন্য আমাদের আরও বেশি নারী দরকার।”

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে লিঙ্গ বেতনের ব্যবধান সম্পর্কে সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকায় আরও বেশি নারীকে নিয়োগ করলে সেই পার্থক্য দূর হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রসঙ্গে বলতি গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, “এই মঞ্চে কিন্তু মহিলারা নিজেরে আরও ভালো করে বিকশিত করতে পারে। মঞ্চ তৈরিই আছে৷ শুধু সাহস করে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে৷ নারীরা এখন আর কোনও কিছুতেই পিছিয়ে নেই।”

তিনি সবশেষে আরও যোগ করেছেন, “পুরুষের সমান হতে হলে নারীদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। সংস্থায় অনেক মহিলা পরিচালককে দেখতে পাই যারা  সন্তানের জন্ম দিলেই কাজ ছেড়ে দেয়৷ মাতৃত্বের ব্যাপারটা অস্বীকার করার জায়গা নেই৷ কিন্তু তার জন্য সবকিছু ছেড়ে দেওয়া অপরাধ ছাড়া কিছু নয়৷ নেতৃত্ব পদে আরও বেশি করে নারীরা এলে সেটা আমাদেরই লাভ৷”