পাঁচমিশালি Explainer: তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডু এবার থেকে তৈরি হবে নন্দিনী ঘি দিয়ে, বিতর্কের মাঝেই এই সিদ্ধান্ত Gallery September 25, 2024 Bangla Digital Desk তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডুতে মাছের তেল, পশুর চর্বি মেলার পর থেকেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। ল্যাব রিপোর্ট প্রকাশ করেছে খোদ অন্ধ্র প্রদেশ সরকার। ইতিমধ্যেই লাড্ডুর জন্য ঘি সরবরাহকারী কোম্পানিকে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, এখন থেকে তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানমের লাড্ডুতে ‘নন্দিনী’ ব্র্যান্ডের ঘি ব্যবহার করা হবে। উত্তর ভারতে যেমন ঘরে ঘরে আমূল বা মাদার ডেয়ারি চলে, দক্ষিণ ভারতে তেমনই নন্দিনী। কর্ণাটকের সবচেয়ে বড় দুধের ব্র্যান্ড। অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল তো বটেই মহারাষ্ট্র এবং গোয়াতেও নন্দিনী ব্যাপক জনপ্রিয়। কর্ণাটক কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসারস ফেডারেশন লিমিটেড নন্দিনী ব্র্যান্ডের মালিক। গুজরাত কো-অপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশনের পর কেএমএফ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুগ্ধ ফেডারেশন। Photo: X ১৯৫৫ সালে কর্ণাটকের কোডাগু জেলায় প্রথম দুগ্ধ সমবায় চালু হয়। তখনও প্যাকেট দুধের প্রচলন হয়নি। বাড়ি বাড়ি দুধ দিয়ে আসতেন কৃষকরা। যোগানও কম ছিল। সত্তরের দশকে উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয় ‘শ্বেত বিপ্লব’। এই সময় বিশ্বব্যাঙ্কও বেশ কিছু প্রকল্প চালু করেছিল। এর চার বছর পর ১৯৭৪ সালে চালু হয় কর্ণাটক ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। ১৯৮৪ সালে এর নাম বদলে কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশন রাখা হয়। এই সময়ই ‘নন্দিনী’ নামে প্যাকেটজাত দুধ বাজারে নিয়ে আসে কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশন। অল্প সময়ের মধ্যে রাজ্যের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয় নন্দিনী। অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, রাজ্যের ১৫টি ডেয়ারি ইউনিয়নের মাথায় রয়েছে কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশন। এর মধ্যে রয়েছে বেঙ্গালুরু কো-অপারেটিভ মিল্ক ইউনিয়ন, কোলার কো-অপারেটিভ মিল্ক ইউনিয়ন, মহীশূর সমবায় মিল্ক ইউনিয়ন ইত্যাদি। ইউনিয়নগুলি দুগ্ধ সমবায় সমিতির মাধ্যমে দুধ কিনে কেএমএফের কাছে বিক্রি করে। কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংস্থা ২৪ হাজার গ্রামের ২৬ লাখ কৃষকের কাছ থেকে প্রতিদিন ৮৬ লক্ষ কেজি দুধ কেনে। বড় কথা হল, কেএমএফ নগদে দুধ কেনে। অর্থাৎ প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন মিটিয়ে দেওয়া হয়। কারণ অধিকাংশই ক্ষুদ্র কৃষক এবং দুধ উৎপাদনকারী। ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন দুধ উৎপাদনকারীদের ২৮ কোটি টাকার বেশি পেমেন্ট করা হয়। কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশনের মোট ১৫টি ইউনিট রয়েছে। এখানে দুধ প্যাকেটজাত করা হয়। নন্দিনী ব্র্যান্ডের ১৪৮টিরও বেশি প্রডাক্ট রয়েছে। দুধ, দই, মাখন, চিজ, পনির, ফ্লেভারড দুধ, চকোলেট, রাস্ক, কুকিজ, পাউরুটি, নোনতা, আইসক্রিম ইত্যাদি। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে কেএমএফের মোট ১৯,৭৮৪ কোটি টাকার টার্নওভার ছিল। সেখানে আমূলের টার্নওভার ৬১,০০০ কোটি টাকা। আমূল এবং নন্দিনীর আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক। গত বছর কর্ণাটকের খুচরো বাজারে ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমূল। সেই তুমুল হইচই হয়। কর্ণাটকের রাজনৈতিক দলগুলি একে দক্ষিণে উত্তরের অনুপ্রবেশ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনেও এটা অন্যতম ইস্যু হয়ে যায়। কংগ্রেসও বলে, কর্ণাটকের গর্ব নন্দিনীর ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র। দক্ষিণের সমবায় সমিতিগুলিকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। আসলে সমবায় সমিতিগুলির মধ্যে অলিখিত চুক্তি রয়েছে যে তারা একে অপরের বাজারে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত কোম্পানি বা সমবায় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। আমূল অবশ্য দাবি করেছে, কর্ণাটকের অনেক শহরে বিশেষ করে বেঙ্গালুরুতে দুধের চাহিদা থাকলেও জোগান দিতে পারছে না মিল্ক ফেডারেশন। তাই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা দুধ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।