কলকাতা: ফাস্টিং আর পিপি-র কথা আমাদের প্রায় সবারই জানা। রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ধারণ করতে এই দুই টেস্ট করা হয়ে থাকে। রাতে খাবার পর অন্তত ৯ ঘণ্টা পরে একবার রক্ত নেওয়া হয়, এই মেডিক্যাল টেস্টকে বলে ফাস্টিং।
এর পর দুপুরে খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে আরেকবার রক্ত নেওয়া হয়, সেটাই হল পিপি, পুরো কথা পোস্ট প্র্যান্ডিয়াল ব্লাড সুগার। এছাড়া প্রতি তিন মাসে রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ধারণে আরও এক মেডিক্যাল টেস্ট করা হয়ে থাকে। বলা হয়, ফাস্টিং আর পিপি যদি ডায়াবেটিস নির্ধারণে ব্যর্থও হয়, তাহলেও এই মেডিক্যাল টেস্টের উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।
আরও পড়ুন- IRCTC-তে ট্রেনের টিকিট কাটার আগে সাবধান! আপনি না জানলে খালি হবে অ্যাকাউন্ট!
এখানেও রক্তের নমুনা ব্যবহার করা হয়। এই টেস্টের নাম এইচবিএওয়ানসি। এই তিন টেস্ট ছাড়াও কিন্তু ডায়াবেটিস নির্ধারণ বা রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে আরেক রকম টেস্ট করা হয়ে থাকে। একে বলা হয় গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট।
জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন পরিস্থিতিতে এই গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা হয়ে থাকে এবং তা কীভাবেই বা করা হয়ে থাকে।
আমরা সবাই প্রায় জানি যে ডায়াবেটিস দুই প্রকারের হয়। এর মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা করতে এই গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন- WhatsApp-এ নম্বর সেভ না করেই চ্যাট করুন! জেনে নিন কী ভাবে
শরীরে শর্করার প্রতিক্রিয়া ঠিক কেমন, সেটাই এই মেডিক্যাল টেস্টে দেখা হয়। ফলে, ডায়াবেটিস শরীরে উপসর্গ তৈরি করছে কি না তা এই পরীক্ষায় সহজেই ধরা পড়ে।
আবার জেস্টাশনাল বা গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস নির্ধারণেও এই গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা হয়। কেন না, গর্ভাবস্থায় বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটে, ফলে অনেক সময়েই রক্তে শর্করার মাত্রা উচ্চ হারে থাকে। যাই হোক, প্রসবের পর তা আবার স্বাভাবিক মানে ফিরে আসে।
গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট কেন করা হয়
দিল্লির সি কে বিড়লা হসপিটালের ডিরেক্টর অফ ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন ডা. মণীষা অরোরা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্টের ক্ষেত্রে প্রতি ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিটে ৩ ঘণ্টা ধরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
শরীরে শর্করা কত দ্রুত ভাঙছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বোঝার জন্যই এতবার রক্ত নেওয়া হয়। ডায়াবেটিস নির্ধারণের অন্য সব মেডিক্যাল টেস্টে অবশ্য এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এতবার করে রক্ত নেওয়া হয় না।
ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস ইত্যাদি নির্ণয়ে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানান তিনি। এও বলেন, কখনও কখনও বিশেষ কিছু পরিস্থিতি, যেমন হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা অ্যাক্রোমেগালি নির্ণয় করতে গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা হয়।
অনেক সময়ে কিছু বিরল জাতের কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিক ডিজঅর্ডার নির্ণয় করতেও এটি কাজে আসে।
গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট এটাই দেখায় যে খাবার খাওয়ার পরে শরীরে গ্লুকোজের প্রতিক্রিয়া কীভাবে ঘটছে। আসলে আমরা যখন খাবার খাই, হজম হওয়ার সময়ে তা ভেঙে গিয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয়। গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট এটাই পরীক্ষা করে দেখে যে তা খুব দ্রুত ঘটছে কি না।
গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট কীভাবে করা হয়
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ, সংক্ষেপে NIH এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে যে প্রাথমিকভাবে একজনের রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ধারণের জন্য রক্ত নেওয়া হয়। রক্ত একটি শিরা, আঙুলের ডগা বা কানের লোব থেকে টানা হয়।
এর পরে, সঠিক ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য রোগীকে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পান করতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ তাদের শরীরের ওজনের উপরে ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। ডায়াবেটিস নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা করা হলে, দুই ঘণ্টা পর আবার রক্ত নেওয়া হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
অন্য দিকে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পরীক্ষার জন্য গ্লুকোজ খাওয়ার এক ঘন্টা পরে এবং আরও দুই ঘন্টা পরে আবার রক্ত নেওয়া হয়।
গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট থেকে যা জানা যায়
– যদি স্বাভাবিক রিপোর্ট আসে, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা ২ ঘণ্টা পরে আবার স্বাভাবিক মানে ফিরে আসে।
– গ্লুকোজ ইনটলারেন্স বা প্রিডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে নিঃসন্দেহে, তবে ডায়াবেটিক লেভেলের তুলনায় তা কম হবে।
– ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা অবশ্যই বেশি থাকবে।