ব্যবসা-বাণিজ্য Ratan Tata: একটা দত্তকই আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল টাটা গ্রুপের গতিপথে, সেই সঙ্গে বদলে গিয়েছিল রতন টাটারও ভাগ্য Gallery October 14, 2024 Bangla Digital Desk গত বুধবারই মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে রাত ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা। কর্পোরেট জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ব্যবসায়িক দুনিয়ার রাজত্ব করার পাশাপাশি সেবামূলক কাজেও প্রচুর দানধ্যান করতেন তিনি। রতন টাটার উত্থানের কাহিনিও রীতিমতো তাক লাগাবে। হামেশাই জামশেদজি টাটা এবং জেআরডি টাটার সঙ্গে তুলনা করা হয় রতন টাটার। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, রতন টাটার বাবা নভল টাটা কিন্তু টাটা ব্যবসায়িক পরিবারের দূর সম্পর্কের আত্মীয়ই ছিলেন। Photo: X নভল টাটার জন্ম ১৯০৪ সালের ৩০ অগাস্ট ৷ নভল টাটার বাবা আহমেদাবাদ অ্যাডভান্স মিলসে একজন স্পিনিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। ১৯০৮ সালে মাত্র চার বছর বয়সে পিতৃহারা হয়েছিলেন নভল টাটা। এরপর তাঁর মা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন গুজরাতের নভসারিতে। যেখানে তিনি সংসার চালাতে সেলাই করতেন। এই পরিস্থিতিতে নভল টাটাকে পাঠানো হয়েছিল জেএন পেটিট পার্সি অরফ্যানেজে। যেখানে তাঁকে দেখেছিলেন নভাজবাঈ টাটা। সম্পর্কে তিনি আবার স্যার রতনজি জামশেদজি টাটার স্ত্রী। নভল টাটার ১৩ বছর বয়সে তাঁকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নভাজবাঈ। এরপর পড়াশোনা শুরু হয় নভলের। ইউনিভার্সিটি অফ বম্বে থেকে ইকনমিকসে স্নাতক হন তিনি। এরপর অ্যাকাউন্টিংয়ের কোর্স করতে লন্ডন চলে গিয়েছিলেন নভল টাটা। শৈশবটা অনটনের মধ্যে কাটানোর অভিজ্ঞতা হামেশাই শেয়ার করতেন নভল টাটা। আর তাঁর মতে, শৈশবের ওই দারিদ্র্যই তাঁর চরিত্র গঠন এবং জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। নভল টাটার বিশ্বাস ছিল যে, চ্যালেঞ্জিং এই সময়টা তাঁকে কঠিন এবং মজবুত করেছে। নভল টাটার দুই পুত্র – রতন টাটা এবং জিম্মি টাটা। তাঁরা অবশ্য নভল টাটার প্রথম স্ত্রী সুনি কমিসারিয়তের পুত্র। কিন্তু এই দম্পতি আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। পরে নভল টাটা বিয়ে করেছিলেন সিমোন ডানোয়ের। সিমোন আর নভলের এক পুত্র নোয়েল টাটা।১৯৩০ সালে টাটা সন্সে যোগ দিয়েছিলেন নভল টাটা। যেখানে তিনি ক্লার্ক তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর পদোন্নতি লাভ করে ১৯৩৩ সালে অ্যাভিয়েশন দফতরের সেক্রেটারি পদে আসীন হন। এর পাশাপাশি টাটা মিলস এবং অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। ১৯৪১ সালে টাটা সন্সের ডিরেক্টর হন নভল টাটা। এরপর ১৯৬১ সালে টাটা পাওয়ারের চেয়ারপার্সন হন তিনি। আবার ১৯৬২ সালে টাটা সন্সের ডেপুটি চেয়ারপার্সন পদ লাভ করেন। সমাজ সেবামূলক কাজে নিজের অবদানের জন্য স্বীকৃতি লাভ করেছেন নভল টাটা। স্যার রতন টাটা ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই পদের দায়িত্বই সামলেছেন। আবার ইন্ডিয়ান ক্যানসার সোসাইটির চেয়ারপার্সন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এদিকে খেলার প্রতিও গভীর অনুরাগ ছিল নভল টাটার। ভারতীয় হকি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি। এমনকী, আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। যদিও জেআরডি টাটা রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নভল টাটা দক্ষিণ বম্বে নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছিলেন ১৯৭১ সালে। কিন্তু পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন নভল টাটা। ১৯৮৯ সালের ৫ মে ক্যানসারের কারণে মুম্বইয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি। নভল টাটা পেয়েছিলেন পদ্মভূষণ আর তাঁর পুত্র রতন টাটার মাথায় উঠেছিল পদ্ম বিভূষণ সম্মানের শিরোপা। তবে এহেন কিংবদন্তিকে ভারত রত্ন সম্মানে ভূষিত করার আর্জি আসছে নানা দিক থেকেই। বাবা নভল টাটার মতোই উত্থান রতন টাটারও। নিউ ইয়র্কের ইথাকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। এরপর ১৯৬২ সালে দেশে ফিরে পারিবারিক সংস্থার শপ ফ্লোরে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। এভাবে একে একে একাধিক টাটা গ্রুপের সংস্থায় নিজের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করেন। এরপর ১৯৭১ সালে এর মধ্যেই অন্যতম ফার্ম ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির ডিরেক্টর ইন-চার্জ হয়েছিলেন রতন টাটা। এর প্রায় এক দশক পরে টাটা ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়েছিলেন তিনি। এদিকে কাকা জেআরডি টাটা বহু সময় ধরে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। কিন্তু ১৯৯১ সাল নাগাদ জেআরডি টাটার থেকে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব এসে পড়েছিল রতন টাটার কাঁধে।