মুম্বই: রতন টাটা অকৃতদার। বিয়ে-থা করেননি। ভাইবোনরাই তাঁর পরিবার। দুই ভাই, এক বোন এবং ভাগ্নে-ভাগ্নি নিয়ে ভরা সংসার। তবে রতনের ছোট ভাই জিমি টাটা একেবারেই আলাদা। খুব একটা প্রকাশ্যে আসেন না। লাইমলাইট থেকে দূরে দু’কামরার ফ্ল্যাটে থাকেন। ব্যবহার করেন না মোবাইল ফোনও।
টাটা সন্সে জিমি টাটারও কিছু শেয়ার রয়েছে। ফলে অর্থের অভাব তাঁর নেই। কিন্তু মানুষটা ওরকম। সারাদিন বুঁদ হয়ে থাকেন নিজের জগতে। খুব কম লোকের সঙ্গেই মেলামেশা করেন। টাটার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যে কোনওদিন নিজেকে জড়াননি। কর্পোরেট দুনিয়া, ব্যবসা থেকে শত হস্ত দূরে থাকতেই পছন্দ করেন।
দু’কামরার ফ্ল্যাটটাই জিমি টাটার জগত। খুব দরকার না পড়লে ঘর থেকে বেরন না। আশপাশের লোকজনও তাঁকে খুব একটা চেনেন না। নিজের ব্যবসা বা চাকরি করার চেষ্টাও করেননি কোনওদিন। মানুষটাকে দেখলে কিছুটা সেকেলেই মনে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকেন। বই, ম্যাগাজিন আর সংবাদপত্রে মুখ গুঁজেই কেটে যায় সারাদিন।
এখানে বলে রাখা ভাল, নেভাল টাটার দুই বিয়ে। প্রথম নিয়ে হয় সুনি কমিশারেটের সঙ্গে। তাঁদের দুই সন্তান – রতন ও জিমি। দ্বিতীয় বিয়ে করেন সিমোনকে। জন্ম হয় নোয়েল টাটার। জিমি রতনের নিজের ভাই।
পারিবারিক ব্যবসায় আগ্রহ ছিল না কোনওদিন: বর্তমানে জিমি টাটার বয়স ৮৩ বছর। খুব সাধারণভাবে থাকেন। মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করেন। দেখলে কে বলবে, এই মানুষটা কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। । তবে পারিবারিক ব্যবসায় তাঁর আগ্রহ ছিল না কোনওদিনই।
দুই ভাইয়ের খুব মিল: রতন টাটা এবং জিমি টাটার মধ্যে খুব মিল। সম্প্রতি জিমির জন্মদিনে দুই ভাইয়ের একটা সাদা কালো ছবি পোস্ট করেছিলেন রতন টাটা। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, “সেই দিনগুলো আনন্দের ছিল। আমদের মধ্যে তখন অন্য কিছুই আসেনি (১৯৪৫ সালে আমার ভাই জিমির সঙ্গে)।“
কোলাবায় দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটে সংসার: জিমি টাটার মধ্যবিত্ত জীবনযাপন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে পোস্ট করেছিলেন আরপিজি এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন গোয়েঙ্কা। তিনি লিখেছিলেন, জিমি মুম্বইয়ের কোলাবায় হ্যাম্পটন কোর্টের ৬ তলাইয় একটি সাধারণ দুই বেড রুমের ফ্ল্যাটে থাকেন। স্কোয়াশ খেলেন চমৎকার। এত ভাল তাঁর দাদা রতন টাটাও খেলতে পারেন না। যৌবনে জিমি স্কোয়াশ খেলোয়াড় ছিলেন।
প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপন: জিমি টাটা না কি ঘর থেকেই বেরন না। এমনটাই শোনা যায়। তবে তিনি প্রচুর সম্পত্তির মালিক। টাটা মোটরস, টাটা স্টিল, টাটা সন্স, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), টাটা পাওয়ার, ইন্ডিয়ান হোটেল, টাটা কেমিক্যালস ছাড়াও বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে তাঁর অংশীদারিত্ব রয়েছে। তিনি স্যর রতন টাটা ট্রাস্টের একজন ট্রাস্টিও। ১৯৮৯ সালে বাবা নেভাল টাটার মৃত্যুর পর ট্রাস্টি সদস্য হয়েছিলেন তিনি।
রতন টাটার পরিবার
সিমোন টাটা: সিমোন টাটা হলেন রতন টাটার সৎ মা। সোজা কথায় সৎ ভাই নোয়েলের মা তিনি। জন্মসূত্রে ফরাসি-সুইস ক্যাথলিক। ১৯৫৫ সালে নেভাল টাটাকে বিয়ে করে মুম্বইয়ে থিতু হন। তিনি ল্যাকমের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। টাটা কোম্পানি ট্রেন্টের চেয়ারপার্সন। হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের কাছে ল্যাকমে বিক্রি এবং ট্রেন্টের সম্প্রসারণের পিছনে সিমোনের হাত রয়েছে। ওয়েস্টসাইড এবং জুডিও রিটেল চেইনের দেখভাল করে ট্রেন্ট।
আরও পড়ুন– জামশেদজি টাটা থেকে রতন টাটা; এক ঝলকে দেখে নিন ভারতের অগ্রগামী ব্যবসায়িক সংগঠনের বংশলতিকা
নোয়েল টাটা: নোয়েল টাটা রতন টাটার সৎ ভাই। তাঁর স্ত্রী শাপুরজি পালোনজি অ্যান্ড কোম্পানির প্রধান পালোনজি মিস্ত্রির মেয়ে আলু। আলুর ভাই সাইরাস মিস্ত্রিকে টাটা গ্রুপে রতন টাটার পদে বসানো হয়েছিল। তবে পরে সরিয়ে দেওয়া হয়। নোয়েল টাটা রতন টাটার উত্তরসূরী হতে পারেন বলে জল্পনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এন চন্দ্রশেখরণকে নির্বাচিত করা হয়।
শিরিন এবং ডিয়ানা জিজীভয়: শিরিন হলেন রতন টাটার সৎ বোন। তাঁর মা সুনি কমিসারিয়েটের দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল স্যার জামসেটজি জিজীভয়ের সঙ্গে। তাঁদের দুই মেয়ে শিরিন এবং গীতা। গীতার সম্পর্কে কোনও খবর পাওয়া যায় না। ডিয়ানা জিজীভাই টরন্টোতে থাকেন। তিনি শিরিনের মেয়ে। পেশায় লেখক এবং ফটোগ্রাফার। বেশ কিছু নামি প্রকল্পে কাজ করেছেন। তবে শিল্পসত্ত্বার জন্যই তিনি অধিক পরিচিত।
লিয়া এবং মায়া: লিয়া এবং মায়া নোয়েলের মেয়ে। রতন টাটার ভাইঝি। লিয়া ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড (আইএইচসিএল)-এর সঙ্গে যুক্ত। মায়াকে রতন টাটার কাছের মানুষ মনে করা হয়। টাটার নতুন অ্যাপ চালু করার ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
নেভিল টাটা – নোয়েলের ছেলে নেভিল মানসী কির্লোস্করকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁদের দুই সন্তান, জামশেদ টাটা এবং তিয়ানা টাটা। নেভিল ট্রেন্টের জুডিও ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। মানসী কির্লোস্কার নিজের ব্যবসা রয়েছে।
লিয়া, মায়া এবং নেভিল স্যার দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট এবং স্যর রতন টাটা ট্রাস্টের ট্রাস্টি। এই ট্রাস্ট টাটা পরিবারের জনহিতকর কাজকর্ম পরিচালনা করে।