মধ্যপ্রদেশ: ডাক্তার হওযার স্বপ্ন ছিল। অথচ উত্তীর্ণ হতে পারেননি পিএমটি-তে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নেন তিনি। পরে অবশ্য নিজের স্টার্ট-আপ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি এখন ২টি বড় সংস্থার মালিক। এর মধ্যে একটি সংস্থা ক্যানসারের ওষুধ তৈরি করে। গল্পটি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বিখ্যাত মহিলা উদ্যোক্তা নীতি ভরদ্বাজের।
নীতির সাফল্যের গল্প কোনও ফিল্মের থেকে কম নয়। শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে একটি শিল্পকেন্দ্র উমরিয়া দুঙ্গারিয়াতে নীতি তাঁর সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। নীতি জানান, দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এরপর পিএমটি-তে বসেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। এই সময়ে স্নাতকের জন্য আরও পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। রসায়নে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কিন্তু তাঁর বাবা চেয়েছিলেন, মেয়ে যেন পিএইচডি করে মেডিক্যালের শিক্ষক হন। কিন্তু, বরাবরই স্টার্টআপ শুরু করার জেদ ছিল নীতির মনে।
স্টার্টআপ শুরু করার আগে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নীতি। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ শিখেছেন। সেই সংস্থায় মেয়েদের অগ্রাধিকার না দেওয়া সত্ত্বেও সেটিকে নিজের কোম্পানি মনে করে ৬ বছর অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। এভাবেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন নীতি। এরপর বিয়ের কারণে তাঁকে স্বামীর সঙ্গে দিল্লি চলে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে আবার পথ চলা শুরু হয় কয়েক বছরের ব্যবধানে। একটা জার্মান কনসালটেন্সি সংস্থায় আবেদন করে নির্বাচিতও হন। কোম্পানিতে যোগদানের কয়েক বছর পর তাঁকে অন্য কোম্পানিতে নিয়োগ করা হয়।
এই সময় সহকর্মীদের জোরাজুরিতে নিজের স্টার্ট-আপ যাত্রা শুরু করেন নীতি। ২০০৯ সাল থেকে তাঁর একটি কনসালটেন্সি কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় যা ১৫ বছর ধরে চলছে। তাঁদের কোম্পানি ফার্মা কোম্পানির ডিজাইন, অডিট এবং প্রজেক্ট তৈরির কাজ করে।
নীতির খুড়তুতো ভাই তথা বন্ধুর ক্যানসার ধরা পড়েছিল। তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে নীতির মনে নতুন ভাবনা আসে। তখন থেকেই তিনি অংশীদারিত্বে ক্যানসারের জন্য কাজ শুরু করেন। ২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে আর একটি কোম্পানি খোলেন যেখানে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির কাজ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, নীতি এ-ও জানিয়েছেন, কোভিডের সময় তাঁদের সংস্থাই মধ্যপ্রদেশে প্রথম ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা শুরু করেছিল যা মুখ্যমন্ত্রী দ্বারা সম্মানিত হয়।
নীতির মতে, যে কোনও কাজ পরিশ্রম ও সৎ ভাবে করা হলে সেই কাজ সম্পন্ন তো হয়ই, সেই সঙ্গে সাফল্যও আসে। নীতি বলেন, ” আমার সাফল্যের পিছনে যাঁদের হাত রয়েছে, তাঁরা অনেকেই আমার কাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার সঙ্গে যোগ দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের কাছ থেকেও আমি অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি, কারণ ভাল কাজ করলে ভাল মানুষ আপনা-আপনিই সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। আর এর জন্য মনের মধ্যে সংকল্প থাকা প্রয়োজন।”