উত্তর ২৪ পরগণা: বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে পৃথিবীর বুকে রহস্য ঘেরা এক ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য। যার প্রতি দ্বীপে আছে রহস্যে মোড়া। রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় ১৩ টি ব্লক জুড়ে ও পড়শি দেশ বাংলাদেশে এর বিস্তৃত। এর মোট আয়তন প্রায় ৯ হাজার ৪৫৮ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। সুন্দরবনের ৪০ শতাংশ জঙ্গল এ রাজ্যে হলেও শতাংশ ৬০ অবস্থিত বাংলাদেশে।
সুন্দরবনে যে গাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা হল সুন্দরী গাছ। আর এই সুন্দরী গাছ থেকেই মনে হয় এই বনটির নাম সুন্দরবন হয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে কেউ কেউ বলেন যে আগে এই বনের নাম ছিল ‘সমুদ্রবন’ যেহেতু দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। আর এই ‘সমুদ্রবন’ থেকেই হয়তো পরবর্তীকালে ‘সুন্দরবন’ নামটি হয়েছে। সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ম্যানগ্রোভ শব্দটি পর্তুগিজ শব্দ ‘ম্যাঙ্গু’ থেকে এসেছে। এর অর্থ বৃক্ষ। আর ইংরেজি শব্দ ‘গ্রোভ’ অর্থ অগভীর, বালুকাময় বা কর্দমাক্ত এলাকায় পাওয়া গাছকে বোঝায়। অর্থাৎ যে বন সমুদ্রের নোনা জলে সাময়িক সময় ডুবে থাকে।
রহস্যে ঘেরা সুন্দরবনে প্রায় ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩০০ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির মাছ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীসহ সাড়ে চারশ প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির ও অজগর সাপ। সুন্দরবনে মোট ১০২টি দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টিতে মানুষের যাতায়াত থাকলেও বাকি ৪৮টি পুরোপুরি জঙ্গলে ঘেরা। সুন্দরবনের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পারগণার গোসাবা দ্বীপেই সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস। এই অরণ্যকে ঘিরে আছে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী। আজও জঙ্গলজীবী মানুষ সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু আহরণ করতে যাওয়ার সময় বন বিবিকে স্মরণ করেন।