মুম্বই: যাঁরা সুর-সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের গানের ভক্ত, তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁর গাওয়া ‘জিহাল-এ-মিস্কি মকুন বরঞ্জিশ’ গানটি শুনে থাকবেন। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল জে পি দত্ত পরিচালিক ছবি ‘গুলামি’। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, ধর্মেন্দ্র, অনিতা রাজ, নাসিরুদ্দিন শাহ, রীনা রায় এবং স্মিতা পাটিলের মতো তারকারা। সেই ছবির এই সুরেলা গান নিমেষেই ভক্তদের মন জয় করে নেয়। লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের সঙ্গীত পরিচালনায় গানটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। আর তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন গায়ক সাব্বির কুমার।
‘গুলামি’ ছবির এই গান শুনলে মনে একটা অন্য রকম অনুভূতি আসে। আসলে গুলজার এত সুন্দর এই গান রচনা করেছিলেন, যা সাহিত্য অনুরাগীদের কাছে অনন্য সম্পদ। কারণ এই গানটির গভীর অর্থ রয়েছে। যা হয়তো অনেকেই জানেন না। গুলজারের লেখা এই গানের অর্থ না বুঝলেও ভক্তরা কিন্তু নিজেদের অন্তরের অন্দরে ঠাঁই দিয়েছেন সুন্দর গানটিকে। আজ তাই হৃদয়গ্রাহী এই গানের অর্থ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
তবে একটি কবিতার পঙক্তি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গুলজার সাহেব এই গানটি লিখেছিলেন। যা যুগ যুগ ধরে মন ছুঁয়েছে ভক্তদের। মহান কবি আমির খসরুর একটি প্রসিদ্ধ রচনা রয়েছে। ফারসী ও ব্রজভাষা মিলিয়ে সেই রচনা করেছিলেন তিনি। কবিতার পঙক্তির কিছু অংশ উদ্ধৃত করা যাক:
“জিহাল-এ-মিস্কি মকুন তগাফুল,
দুরায়ে নয়না বনায়ে বাতিয়া
কি তাব-এ-হিজরান নদারম এ জান
না লেহো কাহে লগায়ে ছাতিয়া।”
কিন্তু এই সুরম্য রচনার অর্থ কী? সেটাই দেখে নেওয়া যাক। এর অর্থ হল, “চোখ ফিরিয়ে এবং কথা ঘুরিয়ে আমার অসহায়ত্বকে উপেক্ষা করো না। বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। আমাকে কেন নিজের দুই বাহুর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিচ্ছো না?”
আমির খসরুর রচনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই পঙক্তিরই অংশ ব্যবহার করে ‘গুলামি’ ছবির জন্য গান লিখেছিলেন গীতিকার গুলজার। যার লাইনগুলি ছিল:
“জিহাল-এ-মিস্কি মকুন বরঞ্জিশ
বেহাল-এ-হিজরা বেচারা দিল হ্যায়’’
গানের প্রথম দুই লাইনই প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বোঝে না। যার অর্থ করলে অনেকটা এই রকম দাঁড়াবে– “আমার মনের খেয়াল রেখো, এতে বিরক্তি প্রকাশ কোরো না। এই অসহায় হৃদয় সম্প্রতিই বিচ্ছেদের জ্বালায় জর্জরিত হয়েছে।”