বেইরুট: হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর হিজবুল্লাহর প্রধান হলেন শেখ নঈম কাসেম। এর আগে জঙ্গি গোষ্ঠীর ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। এবার তাঁকেই দলীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হল। গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে হিজবুল্লাহর অন্যতম প্রধান মুখ তিনি।
গত ৮ অক্টোবর শেখ নঈম কাসেমের একটি ভিডিও সামনে আসে। গোপন স্থান থেকে বার্তা দেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দেওয়ালে একটি পর্দা ঝুলছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন শেখ নঈম কাসেম। তিনি বলেন, কে আগে দূর্বলতা স্বীকার করে নেবে, তা নিয়েই ইজরায়েল আর হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে। হিজবুল্লাহ আগে দূর্বলতা দেখাবে না। ইজরায়েলের ‘বেদনাদায়ক আঘাত’ সত্ত্বেও গোষ্ঠীর সামরিক ক্ষমতা অক্ষুন্ন রয়েছে।
তবে তিনি এও বলেন যে হিজবুল্লাহর মিত্র পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরির অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে সমর্থন রয়েছে। এই প্রথমবার তিনি গাজার অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে ইজরায়েলের উপর হামলা বন্ধ করার পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেননি। প্রসঙ্গত, হিজবুল্লাহর বর্ষীয়াণ নেতা হাসেম সাফিয়েদ্দিনের উপর ইজরায়লি হামলার পর ৩০ মিনিটের এই ভিডিও বার্তা দেন শেখ নাঈম কাসেম। বলে রাখা ভাল, হিজবুল্লাহ সাফিয়েদ্দিনের হত্যার খবর নিশ্চিত করেছিল ২৩ অক্টোবর।
কে এই নঈম কাসেম? ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আব্বাস আল মুসাভি নাঈম কাসেমকে দলের ডেপুটি সেক্রেটারি করেছিলেন। পরের বছরই হেলিকপ্টার হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়। নাসরুল্লাহ যখন দলের দায়িত্ব নেন তখনও ডেপুটি সেক্রেটারিই ছিলেন নঈম। পাশাপাশি দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনও করতেন। গত বছর একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারও দেন তিনি।
আরও পড়ুন– রীতিমতো ফাঁদ পেতে এটিএম থেকে টাকা চুরি! প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের জালে বাবা-ছেলে
ইজরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত তীব্র হওয়ার পর এটা ছিল কাসেমের দেওয়া দ্বিতীয় ভিডিও বার্তা। ২৭ সেপ্টেম্বরে বেইরুটে ইজরায়েলি এয়ার স্ট্রাইকে নাসরুল্লাহর মৃত্যু হয়। তারপর হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম টেলিভিশন বক্তব্য পেশ করেছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বরের ভাষণে প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমরা যা করছি, তা ন্যূনতম… আমরা জানি এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন চলতে পারে।”
শেখ নঈম কাসেমের জন্ম বেইরুটে, ১৯৫৩ সালে। তাঁর পরিবার দক্ষিণ লেবানন থেকে বেইরুটে চলে এসেছিলেন। শিয়া আমাল আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক রেভোলিউশনের সময় তিনি দল ছেড়ে দেন, যা অনেক তরুণ লেবানিজ শিয়া কর্মীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা গড়ে তুলেছিল।
হিজবুল্লাহ গঠনের সময় একাধিক বৈঠক হয়। প্রায় সবকটাতেই উপস্থিত ছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে হিজবুল্লাহ প্রথমবার সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। সেই সময় নির্বাচনী প্রচারের সাধারণ সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে হিজবুল্লাহর ইতিবৃত্তান্ত নিয়ে ‘ইনসাইডার্স লুক’ নামে একটি বইও লেখেন। তিনি সবসময়ই সাদা পাগড়ি পরেন। যা নাসারুল্লাহর কালো পাগড়ির চেয়ে আলাদা। কালো পাগড়ি মহম্মদের বংশধর হিসাবে মর্যাদার প্রতীক।