জন্মদিনে সচিনকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিলেন সৌরভ, বিরাট, সেহওয়াগ, যুবরাজরা

#মুম্বই: লকডাউন ভারত আগেও পালন করেছে। এই কয়েক বছর আগেও। শুধুমাত্র একজন পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির জন্য তখন গোটা দেশ টিভির সামনে। দেশজুড়ে তখন অঘোষিত লকডাউন। যতই করোনাভাইরাসের আতঙ্ক থাক, তবু তার মধ্যেই সচিন তেন্ডুলকরের জন্মদিনে মেতে উঠল ক্রিকেটমহল। ‘লিটল চ্যাম্পিয়ন’-কে অভিনন্দনে ভরিয়ে দিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা।

চোখ ঠিক বলের সেলাইয়ের উপর। বাঁ হাতের কনুইটা নীল আকাশের দিকে। বইয়ের পাতা থেকে তুলে আনা কপিবুক স্ট্রেট ড্রাইভ। হেলায় প্যাডেল সুইপ। সুক্ষ লেট কাট। একটু শর্ট পিচ। সাহসী হুক। শোয়েবের আগুন। দেড়শো কিলোমিটারের ঝড়। কোমর কাত করে আপার কাট। বিশ্ব একেবারে কুপোকাত। তাঁর জন্যই এই ক’বছর আগেও গোটা দেশ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হত।

এক সামান্য কেরানির, গুড ফর নাথিং জীবনেও তিনি ভরসা জোগাতেন। দিনরাত বসের বকা। পাল্টা কিছুই বলা যায় না। কিন্তু, প্রতিপক্ষের বোলারদের তাঁর প্যাদানি দেখে সব ভুলে যেতেন হরিপদ কেরানি। চেঁচিয়ে উঠতেন। ভাবতেন, এই তো চাই। এভাবেই তো জবাব দিতে হয়। তিনি সবার হয়ে জবাব দিতেন। তিনি ছিলেন সবার। মুম্বইয়ের বান্দ্রা থেকে ধারাভি। বেগুসরাই থেকে বেহালা। তাঁর জন্য সবাই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। হোম কোয়ারেন্টাইন।

তখন আমেরিকা চালাতেন বারাক ওবামা। তিনিও বসে পড়েছিলেন টিভির সামনে। কারণ তিনি বুঝতে চাইছিলেন এই ছোটখাটো মানুষটির মধ্যে কী এমন আছে! কী এমন আছে যার জন্য লোকটি ব্যাট হাতে নামলেই আমেরিকাতেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন কমে যায়। আমেরিকায় তখন করোনা ছিল না। কিন্তু, তিনি ছিলেন। তাই মার্কিন মুলুকেও অনেকে তখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হতেন। তিনিই শিখিয়েছিলেন, লড়াই যত কঠিনই হোক, হাল ছাড়লে চলবে না। সিডনিতে শিখিয়েছেন। শারজায় শিখিয়েছেন। করোনাযুদ্ধে এটাই এখন বিশ্বের মন্ত্র। হাল ছেড়ো না। তাঁকে দেখে তখন দেশ জুড়ে উচ্ছাস। কিন্তু, তিনি শান্ত। লক্ষ্যে অবিচল। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অসীম ধৈর্য। করোনাযুদ্ধে এ সবই তো চাই-ই। এ সবই তিনি শিখিয়েছেন অনেক বছর আগে। অনেক বছর ধরে।

বিরাট কোহলি টুইট করেন, “শুভ জন্মদিন এমন এক জনকে যাঁর খেলাটার প্রতি প্যাশন অনুপ্রাণিত করেছিল অগুনতি মানুষকে। দুর্দান্ত একটা বছরের জন্য শুভেচ্ছা রইল।” জাতীয় দলের প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী ট্যুইট করেছেন, “শুভ জন্মদিন। তুমি যে লিগ্যাসি রেখে গিয়েছো তা অমর। ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন।”

এই ক’বছর আগেও তাঁর জন্য গোটা দেশ প্রার্থনা করত। ঘরে ঘরে মনে মনে যে সব মন্দির-মসজিদ-গুরুদ্বার রয়েছে, সব জায়গায় একটাই প্রার্থনা। তিনি যেন আউট না হন। ২৪ এপ্রিল তাঁর জন্মদিন। এখন তিনি প্রার্থনা করছেন। দেশের জন্য। দেশবাসীর জন্য। কেউ যেন করোনায় আউট না হন। ভারত যেন জেতে। করোনা যেন হারে।