মুম্বই: রুপোলি দুনিয়ায় কার ভাগ্য কখন উজ্জ্বল হবে, তা বলা খুবই মুশকিল! বি-টাউনে এমন কিছু তারকা এসেছেন, যাঁরা রীতিমতো বক্স অফিসে তথা ভক্তদের মনে রাজত্ব করেছেন। প্রচুর নাম-খ্যাতি অর্জন করেছেন। অথচ জীবনের শেষ দিনগুলি তাঁদের কেটেছে চরম দারিদ্র্যে। এমনই এক অভিনেতা হলেন ভগবান দাদা।
এক কাপড়ের কলের শ্রমিকের ঘরে জন্ম এই অভিনেতার। জীবনের শুরুর দিকে নিজেও অবশ্য একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন ভগবান দাদা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তাঁর দুচোখে ছিল অভিনয় করার স্বপ্ন। ‘ক্রিমিনাল’ ছবির হাত ধরে বি-টাউনে পদার্পণ করেছিলেন। ফিল্মি কেরিয়ার জুড়ে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ‘বাহাদুর’, ‘কিষাণ’-এর মতো ছবি। ভগবান দাদার ‘আলবেলা’ ছবিটি তো বক্স অফিসে সুপারহিটের তকমা পেয়েছিল। কেরিয়ারে প্রচুর অর্থ রোজগার করেছেন। অথচ একটা সময় এসেছিল, যখন তাঁর হাতে কিছুই ছিল না। চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে এই অভিনেতার এমন দশা হয়েছিল যে, জীবনের শেষ দিনগুলি তাঁর কাটাতে হয়েছিল মুম্বইয়ের বস্তিতে।
অথচ এক সময় রুপোলি দুনিয়ার ধনীতম অভিনেতাদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন ভগবান দাদা। সব কিছুই ছিল তাঁর। এমনকী সমুদ্রতটেই ছিল তাঁর একটি বিলাসবহুল বাংলো। আর সেই বাংলোয় ছিল ২৫টি ঘর। শুধু কি বাংলো, ছিল একাধিক বিলাসবহুল গাড়িও। আর চাকরবাকরেরও অভাব ছিল না। আসলে অভিনেতা এবং পরিচালক হিসেবে প্রচুর নাম অর্জন করেছিলেন ভগবান দাদা। দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, রাজ কাপুরের পরেই সেই সময় সবথেকে বেশি পারিশ্রমিক হাঁকতেন এই অভিনেতাই। কিন্তু জুয়া আর মদের প্রতি ছিল ভগবান দাদার তীব্র আসক্তি।
চল্লিশের দশকে ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেই নাম করেছিলেন এই অভিনেতা। ১৯৪২ সালে জাগৃতি প্রডাকশনস তৈরি করে নিজেই প্রযোজক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মেনস্ট্রিম ছবির থেকে সরে গিয়ে অন্য ধারার ছবি বানানোই হয়ে উঠেছিল তাঁর ভালবাসা। রাজ কাপুরই তাঁকে এর জন্য রাজি করান। এরপর ১৯৫১ সালে ভগবান দাদার ‘আলবেলা’ ছবি বক্স অফিসে তুমুল সাফল্য পায়। জনপ্রিয় গান ‘শোলা জো ভড়কে’ থেকেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন ভগবান দাদা। এরপরে ‘ঝামেলা’ এবং ‘ভাগম ভাগ’-এর মতো ছবিও তিনি উপহার দিয়েছিলেন।
কিন্তু সাফল্য সব সময় যে সঙ্গে থাকে না। আসলে ‘হাসতে রেহনা’ নামে একটি ছবি বানাতে গিয়েছিলেন ভগবান দাদা। যা তাঁর জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল। কারণ এই ছবি বানাতে গিয়ে সব কিছুই যেন বাজিতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন ভগবান দাদা। অথচ ছবির মাঝপথেই কাজ থামিয়ে দিতে হয়েছিল। সেই কারণে সব কিছু বিক্রিও করতে হয়েছিল তাঁকে। ফলে একপ্রকার নিঃস্বই হয়ে যান ভগবান দাদা।
এরপর ষাটের দশকে চরিত্রভিনেতা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন ভগবান দাদা। সংসার চালানোর জন্য সব কিছু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সব শেষে সাধের বিলাসবহুল বাংলো বিক্রি করে দাদারের বস্তিতে থাকতে শুরু করেন ভগবান দাদা। এরপর এমন একটা সময় আসে, যখন তাঁকে ভুলে গিয়েছিল গোটা ইন্ডাস্ট্রি। ফলে চিরতরে যেন অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিলেন ভগবান দাদা। ২০০২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন এক সময়ের তাবড় অভিনেতা।