বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক কারণের জন্য সোনার দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ উচ্চতার কাছাকাছি চলে আসছে। ভারতে সোনা একটি খুবই মূল্যবান ধাতু। এর দাম প্রায়ই উৎসব ও বিবাহের মরশমের কারণে বা অক্ষয় তৃতীয়ার মতো কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানের কারণে চাহিদা বৃদ্ধির দ্বারা নির্ধারিত হয়।বিগত প্রায় বেশ অনেকদিন ধরেই একটানা সোনার দাম বেড়ে চলেছে। কিন্তু, অনেকেই মনে করছেন আগামী দিনে সোনার দাম একটি নতুন রেকর্ড গড়তে পারে। আগামী বছর অক্ষয় তৃতীয়াতেই সোনার দাম ১ লক্ষ টাকার গণ্ডি পার করতে পারে।কিন্তু, বড় প্রশ্ন হল সোনা কেনার সিদ্ধান্ত কীসের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত? কারণ বেশিরভাগ লোকের পরামর্শ অনুযায়ী এখন সোনায় বিনিয়োগ করা উচিত। প্রতি বছর অক্ষয় তৃতীয়া বা আখা তিজে, ভারতে সোনার চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ এই উপলক্ষ্যটি সোনার গয়না কেনার জন্য শুভ বলে মনে করা হয়। যখন ভারতে মূল্যবান জিনিস কেনার কথা আসে, তখন আমাদের আচরণ এবং পছন্দগুলি গভীরভাবে ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত থাকে।তাই যখনই আমরা একটি গাড়ি, সম্পত্তি বা সোনার গয়না কেনার মতো একটি নতুন সম্পদ কেনার পরিকল্পনা করি, আমরা ভারতীয়রা একটি শুভ সময় এবং দিনের জন্য অপেক্ষা করি। এই ধরনের সম্পদ কেনার জন্য বেশ কিছু অনুষ্ঠান এবং উৎসবের দিন রয়েছে, যাকে শুভ বলে মনে করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া সেই উপলক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি, যা অনেক তাৎপর্য বহন করে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, সোনার বর্তমান উচ্চ মূল্য ভোক্তাদের এই অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনার গয়না কেনা থেকে বিরত করবে না, যা ১০ মে সারা দেশে উদযাপিত হবে। ইন্ডেল মানির সিইও উমেশ মোহনন এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে,“অভ্যন্তরীণ বাজারে সোনার দাম বাড়লে উৎসবের মরশুমে সোনার চাহিদা কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে, ভলিউম হ্রাস হতে পারে। তবে মূল্যের দিক থেকে ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য পতন নাও হতে পারে। ভারতে, সোনার গয়না মূলত একটি বিনিয়োগ এবং প্রতি বছর লোকেরা এটির কিছুটা কেনার চেষ্টা করে, তা যত ছোটই হোক না কেন। কারণ তারা এটিকে অন্য যে কোনও বিনিয়োগের চেয়ে অনেক বেশি দাম দেয়।”অক্ষয় তৃতীয়া এমন একটি কারণ, যা সাময়িকভাবে চাহিদা এবং দামকে ধাক্কা দিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে যা আগামী মাসগুলিতে সোনার দাম বৃদ্ধি হওয়ার যাত্রায় সহায়তা করতে পারে।দেশীয় এবং বৈশ্বিক কারণ, যা সোনার দামের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে –জিওজিৎ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের হেড অফ কমোডিটিস, হরিশ ভি মনে করেন যে, দীর্ঘমেয়াদে দৃঢ় বৈদেশিক মূল্য, শারীরিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং একটি দুর্বল INR সোনার দামকে তার উর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে৷ তিনি জানিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল মার্কিন ডলার, সুদের হার কমানোর আশা, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ এবং উচ্চ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ক্রয় ইতিবাচক ট্রিগার হতে পারে।সোনা হল অন্যতম সেরা দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ। যা এর বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা এবং রিটার্ন উভয়ই দেয়। অভ্যন্তরীণ সোনার দাম বিগত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দুই দশকেরও কম সময়ের মধ্যে ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।বিগত অক্ষয় তৃতীয়ার পর থেকে সোনার বিনিয়োগে রিটার্ন –বিগত বছরের অক্ষয় তৃতীয়ায় (২২ এপ্রিল), জাতীয় রাজধানীতে সোনার দাম (২৪ ক্যারাট) প্রতি ১০ গ্রাম ছিল ৬১,৩০০ টাকা। ২০২৪ সালের অক্ষয় তৃতীয়ার একদিন আগে, এই হলুদ ধাতুর দাম প্রতি ১০ গ্রামে ৭১,৭০০ টাকার কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা সোনার বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৭% রিটার্ন দেয়। আমরা যদি বিগত ছয় মাসের রিটার্ন দেখি, তাহলে মূল্যবান ধাতুটি ১৬%-এর বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে সোনার দাম প্রায় ১২% বেড়েছে।আগামী বছর অক্ষয় তৃতীয়ার মধ্যে কি ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে –সোনার বিনিয়োগের পরিসংখ্যান যা তুলে ধরেছে, তাতে মনে হয় দাম বাড়ার প্রবণতা আগামী মাসগুলিতে মূল্যবান ধাতুটিকে সমর্থন করতে বাধ্য। যাবতীয় কারণগুলি বিবেচনা করে, এটি বাজারকে অবাক করে দিতে পারে এবং ১ লক্ষ টাকার মাইলফলক অতিক্রম করতে পারে৷ আগামী বছর অক্ষয় তৃতীয়ার মধ্যে ১ লক্ষ টাকায় পৌঁছানোর জন্য, হলুদ ধাতুকে পরবর্তী ১২ মাসে প্রায় ৪০% রিটার্ন দিতে হবে। অর্থাৎ আগামী বছর অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনার দাম ১ লক্ষ টাকার গণ্ডি পেরিয়ে যেতে পারে।
