অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না, তারপর ১৬ বছর বয়সে যা ঘটল... জন্মদিনে আমিরের অজানা গল্প

Happy Birthday Aamir Khan: অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছেই ছিল না, তারপর ১৬ বছর বয়সেই যা ঘটল…! জন্মদিনে আমিরের জীবনের অজানা কাহিনি

বলিউডের সবথেকে দক্ষ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। হিন্দি ছবির দুনিয়া তাঁকে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’-এর তকমা দিয়েছে। কথা হচ্ছে, অভিনেতা আমির খানের। ৫৯ বছরে পা দিলেন তিনি। অথচ এখনও চুটিয়ে অভিনয় করে চলেছেন তিনি। এমনকী একই রকম ভাবে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। বর্তমানে পরবর্তী ছবি ‘সিতারে জমিন পর’-এর শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত তিনি। ওই ছবির সেটেই জন্মদিন পালন করবেন অভিনেতা।
‘কয়ামত সে কয়ামত তক’-এর মাধ্যমে কখনও প্রেমের পাঠ, তো কখনও বা ‘দিল চাহতা হ্যায়’-এর হাত ধরে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তার পাঠ দিয়েছেন আমির! আবার কখনও মঙ্গল পাণ্ডের মতো ঐতিহাসিক চরিত্রেও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি! আমিরের জন্মদিনে আরও একবার ফিরে দেখে নেওয়া যাক, তাঁর বলিউডের সফর এবং পারিবারিক জীবনের উপাখ্যান।

বলিউডি সফর:

অনেকে এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, আমির খান প্রথমে কিন্তু অভিনেতা হতে চাননি। ১৯৮৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন ছবির দুনিয়ার সঙ্গে পারিবারিক যোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর অনিচ্ছার কথা। তবে স্কুলে পড়াকালীন একটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ রূপে বদলে দিয়েছিল। এরপরেই অভিনেতা হিসেবে কেরিয়ারে এগোতে চান তিনি। যদিও তাঁর প্রতিভা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহপ্রবণ ছিল তাঁর পরিবার। তবে ধীরে ধীরে বলিউডের সবথেকে বহুমুখী অভিনেতার তকমা ছিনিয়ে নেন তিনি।

আরও পড়ুন: আর মাত্র ১০ দিন… ‘দোল পূর্ণিমা’য় সূর্য ও রাহুর বিপজ্জনক কোপ! সাড়ে ৪ ঘণ্টার চন্দ্রগ্রহণে ‘এই’ ৫ রাশির শিরে সংক্রান্তি!

১৯৭৩ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ ছবিতে প্রথম পদার্পণ। এরপর প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তাঁর ডেবিউ হয় ১৯৮৪ সালের ‘হোলি’ ছবিতে। তবে ১৯৮৮ সালে ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ ছবির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতি অর্জন করেন।

পারিবারিক জীবন:

বলিউডের ছত্রচ্ছায়াতেই আমিরের বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা তাহির হুসেন ছিলেন প্রযোজক। আবার কাকা নাসির হুসেনও বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক। এখানেই শেষ নয়, আমিরের তুতো-ভাই মনসুর খানও একজন পরিচালক।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে নীরব ছবি ‘প্যারানয়া’-তে অভিনয় করেন আমির। আর সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়। কলেজের পরে কাকার ছবিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন ‘রং দে বসন্তী’ তারকা।

১৯৮৬ সালে রিনা দত্তের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন আমির। তাঁদের দুই সন্তান – জুনেইদ এবং ইরা। ২০০২ সালে অবশ্য আমির-রিনার সংসার ভেঙে যায়। এরপর ২০০৫ সালে ‘লগান’ ছবির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কিরণ রাওয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আমির। ২০১১ সালে সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেয় তাঁদের সন্তান আজাদ রাও খান।

সেরা ছবির তালিকা:

থ্রি ইডিয়টস:

বলিউডের অন্যতম সেরা ছবি এটি। ভক্তদের থেকেও প্রচুর ভালবাসা পেয়েছে ছবিটি। সেই সঙ্গে সমালোচকরাও ব্যাপক প্রশংসা করেছেন।

রং দে বসন্তী:

দুর্দান্ত স্ক্রিনপ্লে তো বটেই, সেই সঙ্গে ভক্তদের মনের গভীরে ছাপ ফেলেছে এই ছবির সংলাপও। ৬ জন ভারতীয় তরুণ-তরুণীকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে গল্প। এক বিদেশিনীকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর তথ্যচিত্র বানাতে সাহায্য করতে দেখা যায় তাঁদের।

তারে জমিন পর:

সর্বকালের সেরা ছবির মধ্যে অন্যতম ‘তারে জমিন পর’। আট বছরের এক নাবালককে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে গল্প। সেখানেই শিক্ষকের ভূমিকায় কামাল করেছেন অভিনেতা।

দঙ্গল:

বিশ্বের তিরিশতম উচ্চআয়কারী ছবি। ২০১৬ সালের এই ছবিটির গল্পে ফুটে উঠেছে প্রাক্তন কুস্তিগীর মহাবীর সিং ফোগট এবং তাঁর কন্যাদের জীবনযুদ্ধের আখ্যান।

পিকে:

রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘পিকে’ ছবিটি বক্স অফিসে ইতিবাচক রিভিউ পেয়েছে। এক ভিনগ্রহের প্রাণী আটকে পড়েছেন পৃথিবীতে। তাঁকে ঘিরেই এই ছবির কাহিনী।

দিল চাহতা হ্যায়:

২০০১ সালে হিন্দিতে বেস্ট ফিচার ফিল্ম ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার জিতেছে এই ছবি। কলেজ পাশ করে বেরোনো ছোটবেলার তিন বন্ধুকে ঘিরে আবর্তিত হয় ছবির গল্প।

আন্দাজ আপনা আপনা:

কালজয়ী ক্লাসিক কমেডি ছবির তকমা লাভ করেছে ‘আন্দাজ আপনা আপনা’। এই ছবির জন্য প্রচুর ভালবাসা পেয়েছেন আমির এবং সলমন।

ফানা:

কুণাল কোহলি পরিচালিত এই ছবিতে দেখা গিয়েছিল আমির খান এবং কাজকে। পর্দায় তাঁদের রসায়ন মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।

রাজা হিন্দুস্তানি:

রোম্যান্টিক ড্রামা এই ছবিতে ট্যাক্সিচালক রাজার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল আমির খানকে। তাঁর বিয়ে হয় এক ধনী কন্যার সঙ্গে। এই ছবিটি ভারতীয় বক্স অফিসে ব্লকবাস্টারের তকমা পেয়েছে।

তালাশ: দ্য আনসার লাইজ উইদইন:

২০১২ সালের সেরা আয়কারী ছবির মধ্যে অন্যতম এটি। পুলিশ অফিসার সুরজান শেখাওয়াত এবং একটি হাই-প্রোফাইল খুনের মামলাকে ঘিরে আবর্তিত হয় গল্প।

সেরা গান:

পহেলা নশা:

‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবির এই রোম্যান্টিক গানটি গেয়েছেন উদিত নারায়ণ এবং সাধনা সরগম।

আতি ক্যয়া খান্ডালা:

‘গুলাম’ ছবির এই গানে গলা দিয়েছেন স্বয়ং আমির। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন অলকা ইয়াগনিক।

কোই কহে কেহতা রহে:

‘দিল চাহতা হ্যায়’ ছবির এই গানটি গেয়েছিলেন প্লেব্যাক সঙ্গীতশিল্পী শঙ্কর মহাদেবন, শান এবং কেকে।

গুজারিশ:

‘গজিনি’ ছবির এই গানটি গেয়েছিলেন জাভেদ আলি এবং সোনু নিগম।

মেরে হাত মে:

‘ফনা’ ছবির ‘মেরে হাত মে’ গানটি গেয়েছেন সোনু নিগম এবং সুনিধি চৌহান।

হানিকারক বাপু:

‘দঙ্গল’ ছবির ‘হানিকারক বাপু’ গানটি মজাদার ভঙ্গিতে দারুণ উদ্যমের সঞ্চার ঘটায়।

সেরা সংলাপ:

১. “লাইফ ইজ আ রেস… ইফ ইউ ডোন্ট রান ফাস্ট… ইউ উইল বি লাইক আ ব্রোকেন আন্ডা” – থ্রি ইডিয়টস
২. “জিন্দেগি জিনে কে দো হি তরিকে হোতে হ্যায়… এক জো হো রাহা হ্যায় হোনে দো, বরদাস্ত করতে যাও.. ইয়া ফির জিম্মেদারি উঠাও উসে বদলনেকি” – রং দে বসন্তী
৩. “ম্যায় তো আপকো ইয়ে পড়া রাহা থা কি, পড়তে ক্যায়সে হ্যায়” – থ্রি ইডিয়টস
৪. “ফুল খিলতে হ্যায়, বাহারো কা সমা হোতা হ্যায়… অ্যায়সে মৌসম মে হি তো প্যায়ার জওয়ান হোতা হ্যায়… দিল কি বাতোঁ কো হোঠোঁ সে নেহি কেহতে … ইয়ে ফাসানা তো নিগাহোঁ সে বায়ান হোতা হ্যায়” – সরফরোশ
৫. “গোল্ড তো গোল্ড হোতা হ্যায় …. ছোড়া লাভে ইয়া ছোড়ি” – দঙ্গল
৬. “ইয়ে আজাদি কি লড়াই হ্যায় … গুজরে হুয়ে কাল সে আজাদি … আনেওয়ালে কাল কে লিয়ে” – মঙ্গল পাণ্ডে

আসন্ন কাজ:

২০২২ সালের ‘লাল সিং চাড্ডা’-র পরে বড়সড় বিরতি নিয়েছিলেন আমির খান। তাঁর প্রযোজনা সংস্থা আমির খান প্রোডাকশনস এখন দু’টি নতুন প্রজেক্টে কাজ করেছে। এর মধ্যে একটি হল ‘লাপতা লেডিজ’। যা পরিচালনা করেছেন কিরণ রাও। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। অন্য প্রজেক্টটি হল ‘লাহোর ১৯৪৭’। রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত এই ছবিতে দেখা যাবে সানি দেওল, অভিমন্যু সিং, প্রীতি জিন্টা এবং শাবানা আজমিকে।