শর্মিলা ঠাকুর, সোহা আলি খানের সঙ্গে সন্দীপ জয়সওয়াল

Sharmila Tagore-Sandip Jaiswal: শর্মিলাজিকে বলতে চাই ‘তুমি মায়ের মতোই ভাল’, নবাব-ঘরনির সঙ্গে কাজ করে মাতৃত্বের ছোঁয়া পেলেন ফ্যাশন ডিজাইনার সন্দীপ

মুম্বই: সপ্তাহ ঘুরে গিয়েছে শ্যুটিংয়ের। আজও ঘোর কাটেনি ফ্যাশন ডিজাইনার সন্দীপ জয়সওয়ালের। নবাব পরিবারের দুই নারীর সঙ্গে কাজ করার পর ইনস্টাগ্রামে এখনও একটিও ছবি পোস্ট করেননি তিনি। নিউজ18 বাংলায় থরথর কণ্ঠে নতুন কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন কলকাতার প্রথম সারির ফ্যাশন ডিজাইনার। যদিও এখন তিনি কলকাতা-মুম্বই ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর কদর এখন আরব সাগরের তীরেও। কেমন লাগল শর্মিলা ঠাকুর আর সোহা আলি খানের সঙ্গে কাজ করে?

অভিজিৎ শ্রী দাসের পরিচালনায় গয়নার বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন শর্মিলা-সোহা। মা-মেয়ের সাজপোশাকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সন্দীপকে। শ্যুটিং হয় মুম্বইতেই। সন্দীপকে সোহার বাড়িতে গিয়েই পোশাকের জন্য মাপ নিয়ে আসতে হয়। প্রথম দিন সোহার বাড়িতে গিয়ে সোহার মাপ নিতে গিয়েই মুগ্ধ সন্দীপ। নবাব-কন্যা হয়েও সোহা এতই ঘরোয়া, এতই মাটির কাছাকাছি! সন্দীপের সঙ্গে কাজ করে আপ্লুত সোহা। সন্দীপকে তিনি বলেন, ‘‘সন্দীপ জানো তো, আমি যেহেতু এক্সট্রা স্মল সাইজের পোশাক পরি, তাই আমার খুব সমস্যা হয় ডিজাইনারদের সঙ্গে। একবার মাপ নিয়ে যাওয়ার পরেও একাধিকবার অল্টার করাতে হয়। তোমার পোশাকে সেই সমস্যাটা হলই না। একবারেই জামা ফিট করে গেল।’’

সোহা আলি খানের সঙ্গে সন্দীপ জয়সওয়াল
সোহা আলি খানের সঙ্গে সন্দীপ জয়সওয়াল

পরদিন আহমেদাবাদ থেকে মুম্বইয়ে সোহার বাড়িতে গিয়েই উঠলেন মা শর্মিলা। ফলে সন্দীপকে আবারও সোহার বাড়িতে গিয়েই মাপ নিতে হয়। আর সেখানেই দ্বিতীয় চমক।

ঠাকুরবাড়ির কন্যা, টাইগার পতৌদির স্ত্রী হয়েও শর্মিলা যেন বাঙালি ঘরোয়া মায়েদের মতোই। সন্দীপের অন্তত সেরকমই মনে হয়েছে। কাজ শুরুর আগেই শর্মিলা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন সন্দীপকে নিয়ে। সন্দীপের ভাষায়, ‘‘আমি তাঁদের বাড়িতে ঢুকতেই শর্মিলাজি বললেন, তুমি জল খেয়েছ? খাবার খেয়েছ? দাঁড়িয়ে আছ কেন?’’ অনেকটা পথ পেরিয়ে আসা সন্তানসম সন্দীপের আদর-যত্নে কোনও ত্রুটি রাখলেন না সইফ আলি খানের মা।

সন্দীপ নিজে বাঙালি না হলেও বহু বছর ধরে কলকাতায় থাকার ফলে তাঁকে বাঙালি হিসেবে ভুল করাটা অস্বাভাবিক নয়। নিজের ভিটেমাটির মানুষকে কাছে পেয়ে আপ্লুত শর্মিলাও হিন্দি-ইংরেজির ত্যাগ করলেন খানিকক্ষণের জন্য। শর্মিলা বরং সন্দীপের মুখে বিশুদ্ধ বাংলা শুনে খুব খুশি হলেন। আর তারপর বাংলায় কথা চলল দু’জনের। সন্দীপের কথায়, ‘‘আমাকে এত তাড়াতাড়ি এতটাই আপন করে নিয়েছিলেন যে ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’-তে যেতে আমার খুব সময় লাগেনি। শুধু তা-ই নয়, আমাকে নিজের একটি ব্লাউজ দিয়ে বললেন, ‘তুমি যদি এটার মাপে আমাকে বেশ কয়েকটা ব্লাউজ বানিয়ে দিতে পারো, তাহলে সারা বছর আমার যা ব্লাউজের কাজ আসবে, তুমি যেখানেই থাকো, তোমাকেই করে দিতে হবে।’

শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে সন্দীপ জয়সওয়াল
শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে সন্দীপ জয়সওয়াল

শ্যুটিং সেটেও সন্দীপের ডাক পড়ছিল বারবার। যখন যা দরকার, তাঁকে বলতেই সুবিধা হচ্ছিল পতৌদি-ঘরনির। ভ্যানিটি ভ্যান থেকে ফ্লোর অবধি যাওয়ার সময়েও সন্দীপ পাশে থাকলে সুবিধা হচ্ছিল শর্মিলার। সন্দীপ যেন চেয়ার পান, সেদিকেও খেয়াল ছিল তাঁর। সন্দীপের কথায়, ‘‘আমরা এই সম্মানটুকুর জন্যই কাজ করি। আর সেটা এরকম তারকাদের থেকে পেলে আর কী চাই! আর তাই শর্মিলা ঠাকুরকে দেখে আমার চন্দ্রবিন্দুর ওই গানটার কথা মনে পড়ছিল, ‘তুমি মায়ের মতোই ভাল’। একদম যেন মিলে যায় শর্মিলাজির সঙ্গে।’’

সেটে শর্মিলার অভিনয় নিয়ে সন্দীপ বললেন, ‘‘একটা স্ক্রিপটও দ্বিতীয় বার তাঁকে দেখতে হয়নি। একবার চোখ বুলিয়ে নিলেই আত্মস্থ হয়ে যাচ্ছে লাইনগুলি। ঝটপট করে দৃশ্যগুলি শ্যুট হয়ে যাচ্ছে। কেবল সুন্দরী নন, অসম্ভব মেধাবীও।’’

সবচেয়ে ছোট সন্তানের প্রতি মায়েদের যে বেশি স্নেহ থাকে, তার আর একটি প্রমাণ শর্মিলা ও সোহার সমীকরণ। সোহার সাজ কেমন হল, সোহা খেলেন কিনা, সোহা রেডি, তাঁর ডাক পড়ল না কেন, সমস্ত দিকে খেয়াল রাখেন মা। সবমিলিয়ে আপ্লুত সন্দীপ। শর্মিলা ঠাকুরের পোশাক বানানোর মতো সুযোগ পাওয়ায় সারা বছরই পতৌদি-জায়ার মাতৃত্বের ছোঁয়া পাবেন তিনি। আর দ্বিতীয় বার শ্যুটিং সেটে তাঁর সঙ্গে কাজ করার আশায় কলকাতার ফ্যাশন ডিজাইনার।